প্রতীকী ছবি
আমপানের দাপটে সুন্দরবনের বাসন্তী ব্লকের হোগল নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় বহু গ্রাম। প্লাবিত হয় রামচন্দ্রখালি পঞ্চায়েতের ডুবাইপাড়াও। এই গ্রামের প্রায় পঞ্চাশটির বেশি বাড়িঘর ভেঙেছে। দু’শোর বেশি মানুষ ঘরছাড়া। কিন্তু ঝড়ের পর প্রায় চার দিন কেটে গেলেও কোনও সরকারি সাহায্য আসেনি বলে অভিযোগ তুলেছেন দুর্গত মানুষজন। তাঁদের আরও অভিযোগ, ঝড়ের দিন বাচ্চাকাচ্চাদের নিয়ে প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয়কেন্দ্রে গেলেও ঝড় থেমে যেতেই তাঁদের সেখান থেকে বের করে দেওয়া হয়।
মূলত আদিবাসী মানুষজনের বাস এই গ্রামে। জঙ্গল সাফ করে পূর্বপুরুষরা বসতি স্থাপন করেছিলেন। কয়েক দশক কেটে গেলেও এই এলাকায় উন্নয়নের ছিটেফোঁটাও পৌঁছয়নি। আজও রাস্তায় ইট পড়েনি। বর্ষা হলেই কাদা ভেঙে চলাচল করতে হয়। গ্রামে কোনও পানীয় জলের টিউবওয়েল নেই। প্রায় দু’কিলোমিটার দূর থেকে জল এনে খেতে হয়। ইন্দিরা আবাস যোজনা বা গীতাঞ্জলী প্রকল্পের কোনও সরকারি ঘরও এলাকার কেউ পাননি বলে অভিযোগ। নদীতে মাছ, কাঁকড়া ও বাগদার মিন ধরেই সংসার চালান এখানকতার মানুষ। সামান্য চাষবাস আছে কয়েকজনের।
ঝড়ের দিন আবহাওয়া ক্রমশ খারাপ হতে শুরু করলে অনেকে বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যান। সেখানে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেলেও খাবার মেলেনি বলে অভিযোগ। ঝড় থামতেই মানুষজনকে সেখান থেকে বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন বাসন্তীর বিডিও সৌগত সাহা।
বুধবার ঝড়ের পরে বৃহস্পতিবার সকালে সকলে গ্রামে ফিরে আসেন। দেখেন, কী প্রবল তাণ্ডব চালিয়েছে আমপান। একের পর এক ঘর ভেঙে পড়েছে, নদীর বাঁধ ভেঙে গ্রামের ভিতরে ঢুকে পড়েছে নোনা জল। যাঁদের বাড়ি দাঁড়িয়ে আছে, তাঁদেরও উড়েছে চাল। দু’একটি কাঁচা বাড়ির কোনও চিহ্নই নেই। চারিদিকে শুধুই যেন ধংসের ছবি।
এই পরিস্থিতিতে এই প্রান্তিক মানুষগুলি কোথায় যাবেন, কী করবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত সদস্য কেউ একবারের জন্যও খোঁজ নিতে আসেননি। গত তিন দিন ধরে হয় জল খেয়ে, না হয় গেঁড়ি-গুগলি খেয়েই দিন কাটাচ্ছেন লোকজন।
এলাকার বাসিন্দা বছর পঁয়ষট্টির বামনি রায় বলেন, ‘‘আমার ঘরটা উড়িয়ে নিয়ে কোথায় ফেলেছে খুঁজে পাইনি কিছুই। কোথায় যাব, কোথায় থাকবো— কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।’’ বয়স্ক এই মহিলার একমাত্র ছেলে কাজের জন্য ভিন্ রাজ্যে গিয়ে আটকে পড়েছেন লকডাউনের জেরে। আপাতত গ্রামের এক প্রতিবেশীর বাড়িতে মাথা গোঁজার ব্যবস্থা হয়েছে বৃদ্ধার। কিন্তু খাবেন কী? সব পরিবারেই তো সঙ্কটের ছায়া।
একটি স্পোর্টস অ্যাকাডেমির কাছ থেকে কিছু সাহায্য পেয়েছেন মানুষ। আদিবাসী মেয়েদের বেশ কয়েক বছর ধরে ফুটবল প্রশিক্ষণ দেয় এই অ্যাকাডেমি। সেই সুত্রেই গ্রামের খবর পান তারা। গ্রামে কমিউনিটি কিচেন চালু করেছেন তাঁরা। সেখান থেকেই গ্রামের শ’দুয়েক মানুষের দু’বেলা খাবারের ব্যবস্থা হয়েছে শনিবার থেকে।
গ্রামের বাসিন্দা অজব আলি গাজি, খোকন রায়, সুদর্শন রায়, পূর্ণিমা সর্দাররা বলেন, ‘‘গত তিন দিন খুবই কষ্টে কেটেছে। জল আর গেঁড়ি খেয়ে কাটিয়েছি। কেউ আমাদের দিকে কেউ মুখ তুলেও চায়নি। ভাঙা ঘরবাড়ি ফেলে কোথাও যেতেও পারছি না।’’
বাসন্তী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কামালউদ্দিন লস্কর বলেন, ‘‘সর্বত্র ত্রাণ পাঠানো হচ্ছে। বাসন্তী ব্লকে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এই অল্প সময়ে সকলের কাছে পৌঁছনো সম্ভব হয়নি। যাঁরা ত্রাণ পাননি, তাঁদের কাছেও শীঘ্রই পৌঁছে দেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy