বিপর্যস্ত: জয়নগরে উল্টে প়়ড়েছে মোবাইলের টাওয়ার। ছবি: সুমন সাহা
ঝড়ের ধ্বংসস্তুপ থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু করেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা। কিন্তু গোটা জেলার অধিকাংশ এলাকা এখনও বিদ্যুতহীন। তার ফলে পদে পদে ধাক্কা খেতে হচ্ছে প্রশাসন থেকে শুরু করে আম জনতার। বিদ্যুতের পাশাপাশি বিপর্যস্ত টেলিযোগাযোগও। তার ফলে জেলার ক্ষয়ক্ষতির খতিয়ানও জানা যাচ্ছে না।
বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার কাকদ্বীপ, ক্যানিং, ভাঙড়, বারুইপুর, বেহালা, গড়িয়া, ডায়মন্ডহারবার ডিভিশনের বিস্তীর্ণ এলাকায় ৪০ হাজারেরও বেশি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়েছে। কাকদ্বীপ, ক্যানিং, ভাঙড় ডিভিশনে এক হাজারেরও বেশি নষ্ট হয়েছে। কালিকাপুর, গঙ্গাজোয়ারা সাব-স্টেশনের বিদ্যুতের হাইটেনশন লাইনের প্রায় ৭০ টির মত বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে যাওয়ায় সমস্যা আরও তৈরি হয়েছে। সাগরদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা, মৌসুনি, ক্যানিং, বাসন্তী, গোসাবা, ভাঙড়ের প্রত্যন্ত এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ আসতে প্রায় এক মাস সময় লেগে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
ডায়মন্ডহারবার শহর, ভাঙড়, গড়িয়া এবং বারুইপুরের বেশ কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হলেও অধিকাংশ এলাকায় কবে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
ক্যানিং মহকুমা জুড়ে আট হাজারের বেশি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়েছে। ১১ হাজার কেভির হাইটেনশন লাইনের প্রায় এক হাজারের বেশি খুঁটি উপড়ে গিয়েছে। ভেঙে পড়েছে প্রায় পঞ্চাশটির মতো ট্রান্সফর্মার। বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কাজ শুরু হলেও তা অত্যন্ত ধীর গতিতে চলছে বলে অভিযোগ। বিদ্যুতের অভাবে বিভিন্ন এলাকায় পানীয় জলও সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্যানিং মহকুমা হাসপাতাল, বাসন্তী ব্লক গ্রামীণ হাসপাতাল, গোসাবা ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। ক্যানিংয়ের বাসিন্দা তাপস মণ্ডল, রবিন সাহারা বলেন, “বুলবুলের পরদিনই আমরা বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু এ বার দেরি হচ্ছে।’’ ঝড়ের সতর্কবার্তা পেয়েই আগেভাগে বিদ্যুতের খুঁটি থেকে শুরু করে ট্রান্সফর্মার সবই গোসবা ব্লকে মজুত করেছিল বিদ্যুৎ দফতর। বুধবার রাত পর্যন্ত ঝড়ের তাণ্ডবে যে সমস্ত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেই সমস্ত এলাকায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কাজ শুরু করেন ঠিকাদার সংস্থার কর্মীরা। তবে কাজের গতি নিয়ে অভিযোগ রয়েছে সর্বত্র। একটি ঠিকাদার সংস্থার দাবি, বুলবুলের সময়ে দু’দিনের মধ্যে ৮০ ভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু ছ’মাস পরেও সেই বিল এখনও পাননি তাঁরা। ফলে আমপানের পরে কিছুটা হলেও ঠিকাদার সংস্থাগুলি গা ছাড়া মনোভাব দেখাচ্ছেন।
যদিও ক্যানিং মহকুমা বিদ্যুৎ দফতরের আধিকারিক সুকুমার সাহানা বলেন, “ঝড়ের পর থেকেই কর্মীরা দ্রুতগতিতে কাজ করছেন। শুক্রবার রাতের মধ্যেই হাসপাতালগুলিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ধাপে ধাপে সব এলাকায় বিদ্যুৎ পাবেন।’’ ত্রাণ নিয়েও এখনও ক্ষোভ রয়েছে নানা জায়গায়। গোসাবার আমতলি গ্রামের বাসিন্দা বটকৃষ্ণ দাস বলেন, “ঝড়ের দাপটে নদীর বাঁধ ভেঙে সব ভাসিয়ে নিয়ে গেল। ঘরের মধ্যে এক কোমর জল এখন। কিছুই বের করতে পারিনি। কোনও মতে ঘর থেকে বেড়িয়ে ফ্লাড সেন্টারে গিয়ে মাথা গুঁজে প্রাণ বাঁচিয়েছি। এখনও সরকারি সাহায্য পাইনি।’’
গোসাবা বিধানসভার অন্তর্গত বহু গ্রামের পর গ্রাম ভেসে গিয়েছে। নদীর নোনা জল ঢুকে চাষের ফসল নষ্ট করেছে। ঝড়ের দাপটে রায়মঙ্গল, বিদ্যাধরী, কাপুরা, সারসা নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়। আর সেই জলেই ভেসে যায় আমতলি, পুঁইজালি, কালিদাসপুর এলাকা। এখনও বহু গ্রাম জলের তলায়। পাথরপ্রতিমা, সাগর, নামখানা ও কাকদ্বীপে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু হয়েছে।
—তথ্য সহায়তা: সামসুল হুদা, প্রসেনজিৎ পাল ও দিলীপ নস্কর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy