Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Cyclone Amphan

পাকাপোক্ত নদীবাঁধ এখনও হল না সুন্দরবনে

বিপর্যস্ত সুন্দরবনকে পুনর্গঠন করা এখন সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। কী ভাবে এই কাজ করা যাবে, তা নিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা জানাচ্ছেন বিশিষ্টরা। আজ প্রাক্তন সেচমন্ত্রী সুভাষ নস্কর।   বিপর্যস্ত সুন্দরবনকে পুনর্গঠন করা এখন সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। কী ভাবে এই কাজ করা যাবে, তা নিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা জানাচ্ছেন বিশিষ্টরা। আজ প্রাক্তন সেচমন্ত্রী সুভাষ নস্কর।   

সুভাষ নস্কর।

সুভাষ নস্কর।

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২০ ০৪:২০
Share: Save:

নদীবেষ্টিত এলাকার মানুষকে রক্ষা করাই এখন বড় চিন্তা। আমার অভিজ্ঞতা বলছে, সহায় সম্বলহীন অসহায় মানুষগুলো নিজের আশ্রয়স্থল বা শেষ সম্বলটুকু ছেড়ে কোথাও যেতে চান না। যতই জীর্ণ হোক না কেন, শেষ সম্বলকে জড়িয়েই বাঁচতে চান তাঁরা। আমাদের চরম দুর্ভাগ্য, আয়লা-বুলবুল-সুনামি এ সব থেকে শিক্ষা নিয়েও শোধরাতে পারলাম না। আমরা কী যুগ যুগ ধরে শুধু শহরকেই সাজিয়ে যাব? শহরের গার্ডওয়াল হল সুন্দরবন। সেখানে বসবাসকারী মানুষদের জন্য দীর্ঘস্থায়ী কোনও রূপরেখা বা পরিকল্পনা দেশ স্বাধীন হওয়ার এতগুলো বছর পরেও ভাবতে পারি না? আজও তৈরি হল না সুন্দরবনের স্থায়ী নদী বাঁধ। যা নিয়ে আমি ব্যথিত। আগামী দিনে এ রকম প্রাকৃতিক বিপর্যয় হয় তো আরও হবে। এখনই যদি সুন্দরবনকে রক্ষার জন্য স্থায়ী কোনও পরিকল্পনা বা রূপরেখা তৈরি না করা হয়, তা হলে অদূর ভবিষ্যতে সুন্দরবন শেষ হয়ে যাবে।

রাজনীতি করা তো মানুষের জনহিতের জন্য। এ প্রসঙ্গেই মনে পড়ছে একটা প্রসঙ্গ। আয়লার পরে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য ৫ হাজার ৩২ কোটি টাকার প্রকল্প কেন্দ্র সরকারের অনুমোদনের প্রাক্কালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দলের সাংসদ চৌধুরী মোহন জাটুয়ারা প্রধানমন্ত্রীকে লিখিত চিঠি দিয়ে বিরোধিতা করেছিলেন। সে সময়ে রাজ্যের সেচমন্ত্রী হিসেবে আমি তৎকালীন রেলমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রীকে রাজ্য তথা সুন্দরবনের মানুষের জন্য লিখিত চিঠি নিয়ে দিল্লিতে গিয়ে দরবার করলাম। অবশেষে তৎকালীন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সক্রিয় হস্তক্ষেপে ৩০৩২ কোটি টাকার প্রথম পর্যায়ের কাজের অনুমোদন পেল। বাংলাদেশের আদলে পাকা উঁচু বিশেষ ঢালযুক্ত বাঁধের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত জমি, ঘরবাড়ি সমস্ত কিছুর ক্ষতিপূরণের টাকা তাতে ধরা ছিল।

তিন বছরে ১৪০০ কিমি বাঁধ নির্মাণ হবে বলে কথা ছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হয়ে গোসাবায় প্রথম সরকারি সভায় ঘোষণা করলেন, বাঁধের জন্য যাঁরা জমি দেবেন, ক্ষতিপূরণ ছাড়াও প্রত্যেক পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে মাত্র ২০০ কিমি বিক্ষিপ্ত অসমাপ্ত নদী বাঁধের কাজ করে এই প্রকল্প বন্ধ করে দিলেন। কোথায় চাকরি? কোথায় কাজ? ৭৫ শতাংশ টাকা কেন্দ্রের এবং ২৫ শতাংশ টাকা রাজ্যের দেওয়ার কথা ছিল। সুন্দরবনকে রক্ষা করার এত বড় সুযোগ রাজনৈতিক স্বার্থে বিসর্জন দিল বর্তমান সরকার।

দীর্ঘ ন’বছরে রাজ্যে চার চার জন সেচমন্ত্রী হলেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় টাকা ফেরত গেল। সুন্দরবনে পাকাপোক্ত নদী বাঁধের কোনও পরিকল্পনা হল না।

আমার জন্ম সুন্দরবনে, তাই এখানকার মানুষের কান্না আমপানের আগে থেকেই শুনতে পাচ্ছি।

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Amphan Sundarbans
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy