Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Cyclone Amphan

মোবাইল বিপর্যস্ত, কোনও খবরই মিলছে না দুই জেলার

সাগর দ্বীপ-সহ দুই ২৪ পরগনার বেশ কিছু এলাকা এখনও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।

নদীবাঁধ ভেঙে প্লাবিত মৈপিঠের ভুবনেশ্বরী এলাকা। ছবি: সুমন ঘোষ

নদীবাঁধ ভেঙে প্লাবিত মৈপিঠের ভুবনেশ্বরী এলাকা। ছবি: সুমন ঘোষ

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২০ ০০:০২
Share: Save:

সেটা ছিল ২০০৯। আয়লার পরে কার্যত বিচ্ছিন্ন দুই ২৪ পরগনা। মোবাইল থাকলেও গ্রামাঞ্চলে দূরের কথা, শহরেও স্মার্টফোন তখন সুলভ নয়। যোগাযোগের বেশির ভাগটাই ল্যান্ডলাইন নির্ভর।

সে সময়ে বসিরহাট মহকুমা প্রশাসনের এক কর্তা ফোন লাইন দ্রুত মেরামতির আর্জি জানিয়েছিলেন। তাতে বিস্মিত এক জেলা কর্তা বলছিলেন, ‘‘বিদ্যুতের লাইন আগে মেরামত না করে কেন ফোন লাইনের কাজ আগে করা হবে?’’

সে সময়ে মহকুমা প্রশাসনের ওই কর্তার ব্যাখ্যা ছিল, গ্রামে এক সপ্তাহ বিদ্যুৎ না থাকলে জল সরবরাহ বিঘ্নিত হবে না, থেমে যাবে না জনজীবন। টেলি যোগাযোগ মেরামত করলে তবেই ত্রাণের কাজে গতি আসবে। প্রত্যন্ত এলাকায় প্রশাসনের তরফে যাঁদের পাঠানো হয়েছে, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করাটা খুবই জরুরি। কারণ, সড়ক যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। তিন দিনের মধ্যে পঞ্চায়েত, ব্লক অফিস, হাসপাতালের ফোন চালু হয়ে গিয়েছিল। কারণ, ল্যান্ডফোন ছিল ‘কেব‌‌্ল’ নির্ভর।

এগারো বছর পরে সুন্দরবনের কোথাও ল্যান্ডফোনের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। আয়লার থেকেও ভয়ানক আমপানের দাপটে দুই ২৪ পরগনার বেশিরভাগ জায়গাতে মোবাইলের টাওয়ার (বিটিএস) ভেঙেছে। যেখানে টাওয়ার অটুট, বিদ্যুতের অভাবে সেগুলিও কার্যত অচল। প্রশাসনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, বিদ্যুৎ না ফিরলে, আসবে না মোবাইলের নেটওয়ার্ক। বিদ্যুৎ না এলে মোবাইলের ব্যাটারিও চার্জ দেওয়া যাবে না। সাগর দ্বীপ-সহ দুই ২৪ পরগনার বেশ কিছু এলাকা এখনও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। সেগুলির সঙ্গে মোবাইলেও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। তার ফলে, ত্রাণ থেকে শুরু করে থমকাচ্ছে সব পরিষেবা।

ডায়মন্ড হারবার, কাকদ্বীপ এলাকায় এখনও টেলিফোন পরিষেবা স্বাভাবিক হয়নি। কাকদ্বীপ শহরে বেশ কিছু এলাকায় শুক্রবার মোবাইল পরিষেবা স্বাভাবিক হলেও গ্রামাঞ্চলে মোবাইল পরিষেবা কবে ঠিক হবে, তার নিশ্চয়তা মেলেনি। সাগরদ্বীপে কত মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত, তার সঠিক হিসেব এখনও প্রশাসনের কাছে আসেনি। পঞ্চায়েত এবং ব্লকের কর্মীরা খতিয়ান তৈরি করলেও তা পাঠাতে পারছেন না। বহু এলাকায় প্রশাসনের লোকেরাও পৌঁছতে পারছেন না। যে সব মানুষের আত্মীয়-পরিবার বাইরে থাকেন, তাঁরাও যোগাযোগ করতে পারছেন না প্রিয়জনদের সঙ্গে।

বুধবার ঝড় শুরুর আগেই ক্যানিং মহকুমার মোবাইল পরিষেবা কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। ঝড়ের ফলে গোসাবার বেশ কয়েকটি জায়গায় মোবাইল টাওয়ার ভেঙে পড়ে, টাওয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয় ক্যানিং, বাসন্তী এলাকাতেও। তাই ক্যানিং, বাসন্তী, গোসাবা সমস্ত এলাকায় একটি সংস্থা ছাড়া অন্য সংস্থার মোবাইল পরিষেবা ছিল না।

তবে শুক্রবার বিকেল থেকে শহরাঞ্চলে ধীরে ধীরে অন্যান্য সংস্থার মোবাইল নেটওয়ার্ক কাজ করতে শুরু করে। তবে শনিবার পর্যন্ত পরিষেবা স্বাভাবিক হয়নি ভাঙড়ে এলাকাতেও।

একই অবস্থা বসিরহাট মহকুমাতেও। হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি ১ ও ২ ব্লক, হাসনাবাদ, মিনাখাঁ, হাড়োয়া, ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় টেলি যোগাযোগ নেই। হিঙ্গলগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকা কার্যত সব দিক থেকেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। কিছু সংস্থার টাওয়ার থাকলেও নেটওয়ার্ক থাকছে না। ইন্টারনেট পরিষেবা কার্যত পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, ‘‘ঝড়ের কারণে বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট পরিষেবার ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছি। আশা করছি দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Amphan Sundarbans Cyclone Amphan in West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy