—প্রতীকী চিত্র।
এ-ও যেন এক ‘সর্বদল সমন্বয়!’
পঞ্চায়েতের ১৯ জন সদস্যের মধ্যে তিন দলের ১৩ জন বা তাঁদের নিকটাত্মীয়দের নামেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরকারি ক্ষতিপূরণের টাকা ঢুকেছে বলে অভিযোগ। দলের চাপে পড়ে এবং জনরোষ আঁচ করে এখন অনেকেই অবশ্য টাকা ফেরত দিচ্ছেন।
হাবড়া ২ ব্লকের গুমা ২ পঞ্চায়েতের ঘটনা। উপপ্রধান তৃণমূলের যোগেশ বাড়ৈ ওরফে ভবেশ। পাকা একতলা বাড়ি তাঁর। সামনে লোহার গেট। দু’পাশে কাচের জানলা। অভিযোগ, আমপানে বাড়ির ক্ষতি না হলেও ভবেশের স্ত্রীর নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ক্ষতিপূরণের সরকারি টাকা ঢুকেছে। ভবেশ নিজেও মানছেন সে কথা। তাঁর কথায়, ‘‘আমার স্ত্রী ও দাদার নামে টাকা এসেছে। তালিকায় দু’জনের নাম দেখতে পেয়েই আমি বিডিও সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাঁর কাছে আবেদন করে বলি, ওই টাকা আমি ফিরিয়ে দিতে চাই। দু’জনের টাকাই আমি ইতিমধ্যেই ফিরিয়ে দিয়েছি।’’
কী ভাবে স্ত্রী ও দাদার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকল? সরকারি টাকা পেতে হলে তো নিজেদের আবেদন করতে হয়। সঙ্গে নথিপত্র ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর দিতে হয়। ভবেশের সাফাই, ‘‘আমরা কেউ আবেদন করিনি। তড়িঘড়ি ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করতে হয়েছে। বিদ্যুৎ ছিল না। কর্মী কম ছিল। খতিয়ে দেখার সময় পাওয়া যায়নি।’’
উপপ্রধান একা নন, ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন প্রধানের স্বামী, সিপিএম-বিজেপি-নির্দল সদস্য বা তাঁদের আত্মীয়-স্বজনেরাও। যাঁদের মধ্যে বেশির ভাগেরই বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত অনেক মানুষ এই এলাকায় সরকারি টাকা পাননি বলেও অভিযোগ আছে। শাসকদলের কর্মী-সমর্থকদেরও অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়ে সরকারি টাকা পেয়েছেন বলে গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি।
ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের বক্তব্য, সরকারি টাকা পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলি সব এক। সেখানে তৃণমূল-বিজেপি-সিপিএম বলে আলাদা কিছু নেই।
পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, গুমা ২ পঞ্চায়েতের মোট সদস্য ১৯ জন। তার মধ্যে পঞ্চায়েত সদস্য বা তাঁদের আত্মীয়-স্বজনের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছে ১৩ জনের। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন তৃণমূলের ৯ জন, বিজেপি ১ জন, সিপিএমের ২ এবং একজন নির্দল সদস্য। পঞ্চায়েতটি অশোকনগর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। তৃণমূলের বিধায়ক ধীমান রায় বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতে দলীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনায় বসেছিলাম। সকলকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি, টাকা ফেরত না দিলে দলীয় ভাবে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপও করা হবে। আমরা এ সব বরদাস্ত করব না।’’ ধীমানের কথায়, ‘‘আমাদের ৯ জন সদস্যের মধ্যে ১ জন ছাড়া সকলেই মধ্যে টাকা ফিরিয়ে দিয়েছেন।’’
বনিতা বিশ্বাস নামে এক সদস্যের ছেলের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছে। তিনি সত্যিই ক্ষতিগ্রস্ত। তাই তাঁর টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে না বলে তিনি জানান। সরকারি টাকা না নেওয়া তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত সদস্য বলেন, ‘‘আমি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলাম, ক্ষতিগ্রস্ত নই। টাকা নেব না।’’
পঞ্চায়েত সদস্য বা তাঁদের আত্মীয়-স্বজনেরা সরকারি টাকা পেয়েছেন জানতে পেরে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী এলাকায় পোস্টার সাঁটিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বিজেপির তরফে হাবড়া ২ বিডিও অফিসে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। দলীয় নেতৃত্বের চাপে ও জনরোষ থেকে বাঁচতে এখন সকলেই টাকা ফিরিয়ে দিতে শুরু করেছেন। সিপিএমের ৩ জনের মধ্যে ২ জন টাকা পেয়েছেন। অশোকনগরের প্রাক্তন বিধায়ক সিপিএমের সত্যসেবী কর বলেন, ‘‘তৃণমূল নিজেদের দুর্নীতি আমাদের ঘাড়ে চাপাতে আমাদের ২ জন সদস্যের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকিয়ে দিয়েছে। আমাদের কেউ আবেদন করেননি। পঞ্চায়েত থেকে বলা হয়েছিল, আপনাদের সাম্মানিক দেওয়া হবে। সে জন্য নিজেদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর দিন।’’
সিপিএম সূত্রে দাবি করা হয়েছে, তাঁদের পঞ্চায়েত সদস্য তৃপ্তি দত্ত এবং তাঁর স্বামীর নামে টাকা ঢোকানো হয়েছে। তৃপ্তি প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত। তবুও তিনি নিজের টাকা ফিরিয়ে দিয়েছে। টাকা পাওয়া অন্য সদস্য গৌতম দাসও টাকা ফিরিয়ে দিয়েছেন। তিনি বিডিওর কাছে ঘটনার তদন্ত চেয়ে আবেদন করেছেন।
বিজেপির দু’জন সদস্য টাকা পেয়েছেন। দলের অশোকনগর বিধানসভা কেন্দ্রের আহ্বায়ক স্বপন দে বলেন, ‘‘আমাদের একজন সদস্য টাকা পেয়েছেন। সচ্চিদানন্দ মণ্ডল নামে ওই সদস্য টাকা ফিরিয়ে দিয়েছেন। অন্য এক সদস্যের নাম তালিকায় থাকলেও তিনি টাকা পাননি। বিজেপিকে কালিমালিপ্ত করতে শাসকদল এই
ঘটনা ঘটিয়েছে।’’
বিডিও মনোতোষ রায় বলেন, ‘‘ক্ষতিগ্রস্ত না হয়েও যাঁরা টাকা পেয়েছেন, তাঁরা টাকা ফিরিয়ে দিতে শুরু করেছেন। টাকা ফেরাতে পঞ্চায়েতকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy