বিক্ষোভ: জুটমিলের সামনে। ব্যারাকপুরে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
সাময়িক বন্ধ থাকার পরে খুলেছিল চটকল। কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছিলেন দিন কয়েকের মধ্যেই মেটানো হবে বকেয়া বেতন। কিন্তু দিন দু'য়েক গড়াতে না গড়াতে চটকলের গেটে ফের ঝাঁপ বন্ধের নোটিস সেঁটে দেয় কর্তৃপক্ষ। তার পরেই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে শ্যামনগরের উইভারলি জুট মিল। শ্রমিকদের একাংশ চটকলের অফিসার-কর্মীদের আবাসনে হানা দেন। ভাঙচুর চলে সেখানে। পুড়িয়ে দেওয়া হয় দু’টি গাড়িও।
নিজেদের প্রাপ্য না পেয়েই সেদিন মারমুখি হয়ে উঠেছিলেন শ্রমিকেরা। কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছিলেন দ্রুত মেটানো হবে শ্রমিকদের বকেয়া। তারও প্রায় মাসখানেক পরে লকডাউন জারি করা হয়। এখনও প্রাপ্য পাননি শ্রমিকেরা। তার ফলে কার্যত কপর্দকশূন্য অবস্থায় দিন কাটছে প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিকের। অনেকের হাতে খাবার কেনার টাকাও নেই। অন্যের সাহায্যের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে তাঁদের। বুধবার কারখানার শ্রমিকেরা সুরাহার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন। মিল কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছে পরিস্থিতি অনুকূল হলেই মেটানো হবে শ্রমিকদের প্রাপ্য।
ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে চটকলই বর্তমানে অন্যতম শিল্প। কিন্তু সেগুলিতেও গোলমাল লেগেই রয়েছে। কোনও না কোনও ছুতোয় প্রায়ই ঝাঁপ পড়ছে চটকলে। তার ফলে বিপাকে পড়ছেন হাজার হাজার শ্রমিক। গত ছ’মাসে অন্তত তিনটি চটকল ঝাঁপ ফেলেছে। তার একটি খুললেও, বাকি দুটি বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার শ্রমিক এই মুহূর্তে বেকার। তার মধ্যে সব থেকে খারাপ অবস্থা উইভারলি জুট মিলের শ্রমিকদের।
ওই মিলের শ্রমিক, বিজেপির ইউনিয়নের নেতা অজয় রায় বলেন, “মিল কর্তৃপক্ষ পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করে টাকা মিটিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল। তার পরেও তারা সেই টাকা মেটায়নি। এর মধ্যে লকডাউন ঘোষণা হয়ে গেল। আমাদের অনেকেরই খাবার কেনার টাকা নেই। তার ফলে অনেকেই এক বেলা বা আধপেটা খেয়ে কাটাচ্ছেন। আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চাইছি।”
ওই কারখানার শ্রমিক রাম পাসোয়ান বলেন, “আমার পরিবারের মোট সাত জন সদস্য। আমি একমাত্র রোজগেরে। মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে থেকেই খারাপ অবস্থা চলছিল আমাদের। কিন্তু অন্য কাজ করে কোনও রকমে সংসার চালাচ্ছিলাম। প্রয়োজনে আমার বুড়ো বাবাও টুকটাক কাজ করে দু’পয়সা আয় করছিল। কিন্তু লকডাউনের পরে আর কোনও কাজ পাচ্ছি না। কী করে সংসার চলবে, কী করে বাড়ির ছোটদের মুখে খাবার তুলে দেব ভেবে পাচ্ছি না। কেউ কেউ সাহায্য করছেন। সেটাই একমাত্র ভরসা এখন।”
তৃণমূল শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা কমলেশ্বর রাই বলেন, “চটকলে প্রতি সপ্তাহে শ্রমিকদের বেতন মেটানো হয়। এক সপ্তাহের টাকা আটকে গেলে অনেকের সংসার অচল হয়ে পড়ে। দু’মাসের বেশি মিল বন্ধ। ফলে অনেকেরই সংসার অচল হয়ে পড়েছে। বেশি দিল মিল বন্ধ থাকলে বিহার বা উত্তর প্রদেশের অনেক শ্রমিক দেশে ফিরে যায়। কর্তৃপক্ষ বকেয়া টাকা দেবে বলে তাঁরা দেশে যাননি। এ দিকে লকডাউন হয়ে গেল। তার ফলে তাঁরা এখন শোচনীয় অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy