সুনসান: পড়ে আছে ধুপকাঠি তৈরির সরঞ্জাম। নিজস্ব চিত্র
করোনাভাইরাসের প্রভাব আগেই পড়েছিল ধূপকাঠি শিল্পে। চিন থেকে বাঁশকাঠি আমদানি বন্ধ হওয়ার ফলে আগেই ধুঁকছিল অনেক কারখানা। সেই অভাব মেটানোর জন্য স্থানীয় কিছু কারখানাকে বাঁশকাঠি তৈরির উপযোগী করে তোলা হয়েছিল। কিন্তু লকডাউনের ফলে বন্ধ সব। আর এই শিল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে শুধুমাত্র দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাতেই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন প্রায় ৫২ হাজার মানুষ।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ক্ষুদ্র শিল্পগুলির মধ্যে অন্যতম ধূপকাঠি শিল্প। জেলার বারুইপুর, ক্যানিং, জয়নগর, ভাঙড়, সোনারপুর, বাসন্তী, গোসাবা-সহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বহু কারখানা। এই কারখানাগুলির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে অনেক মানুষ জড়িত রয়েছেন। প্রথমে ধূপকাঠি তৈরির প্রধান উপাদান বাঁশকাঠির জোগান বন্ধের ফলে সমস্যা তৈরি হয়েছিল। সেই সমস্যা কিছুটা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই শুরু হল লকডাউন। করোনা সংক্রমণ রুখতে জরুরি ক্ষেত্র ছাড়া সব ক্ষেত্রেই শুরু হল লকডাউন। উৎপাদন বন্ধ হল এ রাজ্যের অন্যতম কুটিরশিল্প ধূপকাঠির। ফলে কর্মহীন হয়ে পড়লেন এই শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে যুক্ত বহু মানুষজন।
এই শিল্পে উৎপাদনের কাজে মূলত মহিলারাই জড়িত। তাঁদের স্বামীরা অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজ করেন। তাঁরাও কাজ হারিয়ে কার্যত সকলেই বাড়িতে। সংসারের হাল ধরতে এই সব মহিলারা ধূপকাঠি তৈরির কাজে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁরাও কাজ হারিয়েছেন। ফলে কী ভাবে সংসার চলবে তা নিয়েই চিন্তিত সকলেই। কিছু কারখানার মালিকরা শ্রমিকদের কিছু টাকা আর্থিক সাহায্য করেছেন তো কেউ চাল, ডালু, আলু দিয়ে সাহায্য করেছেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেগুলিও শেষ হয়েছে। ফলে এ বার কী ভাবে চলবে তা নিয়েই চিন্তিত সকলে। একদিকে যেমন কারখানার শ্রমিকরা যুক্ত রয়েছেন তেমনি অন্যদিকে এই ধূপকাঠি বিক্রির জন্য হকার, সেলসম্যান সকলেই একই সমস্যায় ভুগছেন। উৎপাদন, ব্যবসা বন্ধ হওয়ায় সমস্যায় রয়েছেন কারখানার মালিকরাও। তাই এই শিল্পও এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষকে বাঁচাতে লকডাউন থেকে ফুল, মিষ্টি ও বিড়ি শিল্পের মতো ছাড় চাইছেন কারখানার মালিকরা। তাঁদের দাবি, শারীরিক দূরত্ব ও সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ধূপকাঠি তৈরির অনুমতি দিক সরকার। তা হলে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বহু মানুষ বেঁচে যাবে।
বারুইপুর আগরবাটি ক্লাস্টারের সম্পাদক আশুতোষ দাস বলেন, “যে ভাবে রাজ্য সরকার ফুল, মিষ্টি, বিড়ি শিল্পকে ছাড় দিয়েছে, সে ভাবেই ছাড় দেওয়া হোক ধূপকাঠি শিল্পকে। সরকারি বিধিনিষেধ মেনেই আমরা উৎপাদন করব। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত মানুষ অবস্থা খুবই খারাপ। দ্রুত উৎপাদন চালু না হলে বহু মানুষের না খেয়ে মৃত্যু হবে।’’
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বেশির ভাগ প্রান্তেই ছোট ছোট ধূপকাঠির কারখানা রয়েছে। কোথাও দু’টি মেশিন, তো কোথাও পাঁচটি মেশিন চলে। সব মিলিয়ে এক একটি কারখানায় আট থেকে দশ জন মানুষ কাজ করেন। তাই সরকারি নির্দেশ পেলে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখেই উৎপাদন করা সম্ভব বলে দাবি ধূপকাঠি কারখানার মালিকদের। ইতিমধ্যেই এই শিল্পে লকডাউন থেকে শিথিলতা চেয়ে রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করেছেন কারখানার মালিকরা। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও উত্তর মেলেনি। ক্যানিং এলাকার ধূপকাঠি কারখানার মালিক সুজিত সরকার বলেন, “খুব অল্প লোকবল নিয়ে আমাদের কারখানাগুলো চলে। আমরা সরকারি নিয়ম মেনেই কারখানা চালাতে পারব। আমাদের উৎপাদনের অনুমতি দিলে হাজার হাজার পরিবার বেঁচে যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy