Advertisement
২০ জানুয়ারি ২০২৫
Coronavirus

ধরপাকড় চলছে, তবু এখনও গা ছাড়া জনতা

কমপ্লিট লকডাউনের নির্দেশ জারির পর থেকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাজার এবং মুদিখানা দোকান সকাল ১০টার মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তাতেও প্রচুর লোকের ভিড় জমছিল বাজারগুলিতে।

শাসন: এরপরেও কি ফিরবে হুঁশ? বারাসতে শনিবার ছবিটি তুলেছেন সুদীপ ঘোষ

শাসন: এরপরেও কি ফিরবে হুঁশ? বারাসতে শনিবার ছবিটি তুলেছেন সুদীপ ঘোষ

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২০ ০২:২২
Share: Save:

দিনভর নানা ভাবে প্রচার, হাজার সতর্কতা জারি, পুলিশি ধরপাকড়, তারপরেও ভিড় ঠেকানো যাচ্ছে না সকালের বাজারে। ভিড়ের জন্য শিকেয় উঠছিল দূরত্ববিধিও। খানিকটা কাজ হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর ধমকে। জেলার মধ্যে ভাটপাড়া এবং দমদমের দু’টি ওয়ার্ড কমপ্লিট লকডাউনের আওতায় রয়েছে। শনিবার থেকে ওই দু’টি ওয়ার্ডের সব বাজার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ওই ওয়ার্ডগুলিতে ঢোকা-বেরোনোয় নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। ওই এলাকার বাসিন্দাদের বাড়ি থেকে বেরোতে বারণ করা হয়েছে। প্রয়োজনে পুলিশ এবং পুরসভা তাঁদের সাহায্য করবে। এ দিন সকাল থেকেই পুলিশ কড়া পদক্ষেপও শুরু করেছে।

শুক্রবার রাতে ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা দমদমে গিয়ে পুরকর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের দোকান-বাজার বন্ধ করতে বলে। স্থানীয় থানাকেও কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দেন। শনিবার পুলিশ কমিশনার, ডিসি (নর্থ) অজয় ঠাকুর, জেলা প্রশাসনের কর্তারা বৈঠক করেন। সেখানেই স্থানীয় থানার তরফ থেকে বলা হয়, সব থেকে বেশি ভিড় হচ্ছে বাজারেই। পুলিশ কর্তারা পুরসভাকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ৫ নম্বর গলি, নয়াবাজার, ভাটপাড়া বাজারের সব ক’টি বাজার বন্ধ করতে বলে।

কমপ্লিট লকডাউনের নির্দেশ জারির পর থেকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাজার এবং মুদিখানা দোকান সকাল ১০টার মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তাতেও প্রচুর লোকের ভিড় জমছিল বাজারগুলিতে। প্রথম দিকে চা দোকান খোলা থাকলেও পরে পুলিশ তা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু তবুও ভিড়ে রাশ টানা যায়নি। শনিবার সকাল থেকে পুলিশ বাজারে যাওয়া জনতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে লাগাতার পাকড়াও করতে শুরু করে। তার পরেই কার্যত ফাঁকা হয়ে যায় বাজার।

ভাটপাড়া পুরপ্রধান অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “৮ এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ঢোকা-বেরোনোর রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্পর্শকাতর এলাকা বলে সকাল ১০ পর্যন্ত বাজার খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু রবিবার থেকে সব ক’টি বাজারই বন্ধ করে দেওয়া হবে। সাধারণ মানুষ যাতে অসুবিধায় না পড়েন, ঠেলাগাড়িতে করে আনাজ প্রত্যেকটি বাড়ির সামনে যাবে। যার যা দরকার, সংগ্রহ করবেন।”

পুরপ্রধান জানিয়েছেন, এলাকায় কয়েকটি মুদিখানা দোকান নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। সেগুলি সকাল ১০ পর্যন্ত খোলা থাকবে। সেখানে এক সঙ্গে এক জনের বেশি যেতে পারবেন না। এর পরেও কারও যদি জরুরি কিছু প্রয়োজন হয়, তা হলে পুরসভার নম্বর এলাকায় দেওয়া হয়েছে। ফোন করলেই তা বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে।” অজয় ঠাকুর জানান, কেউ নিয়ম না মানলে পুলিশ কড়া পদক্ষেপ করবে। এলাকায় পুলিশ প্রহরার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কমপ্লিট লকডাউন ঘোষণার পরেই পুলিশ এবং পুরসভা এলাকাগুলিকে বাঁশ দিয়ে ঘিরে দিয়েছিল। আতঙ্কে কিছু এলাকায় বাসিন্দারা নিজেরাই ঢোকা-বেরোনোর রাস্তা বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে দেন। সম্প্রতি ওই এলাকার দশ জন বাসিন্দা দিল্লির নিজামুদ্দিন এলাকার বিতর্কিত মসজিদে গিয়েছিলেন। যদিও করোনা-সংক্রমণ ছড়ানোর অন্তত ১০ দিন আগে তাঁরা এলাকায় ফিরেছিলেন বলে দাবি। তাঁদের রাজারহাটের কোয়রান্টিন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যদিও তাঁদের কেউ সংক্রামিত নন বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

লকডাউন অমান্য করে বাইক নিয়ে ঘুরতে বেরোনোর জন্য গ্রেফতার হয়েছে তিন যুবক। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার হেমনগর থানা এলাকায়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, তিন যুবক বাইক নিয়ে হেমনগর থানার কালীতলা পঞ্চায়েত এলাকায় শুক্রবার বিকেলের দিকে ঘুরতে এসেছিল। এরপরে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীরা তাঁদের আটকায়। ওই যুবকের মাস্ক, হেলমেটও ছিল না। কেন রাস্তায় বেরিয়েছে তারা, কোনও উপযুক্ত কারণ দেখাতে পারেননি।

ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতাল জ্বর, সর্দি-কাশি নিয়ে আইসোলেশনে ভর্তি রয়েছে প্রায় ২০-২৫ জন রোগী। মহকুমা জুড়ে বিভিন্ন হাসপাতালে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। এমনকী, ডায়মন্ড হারবার মহকুমা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ডায়মন্ড হারবার শহরকে জীবাণুমুক্ত করতে গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে জীবানুমুক্ত ছড়ানোর অভিযান। পুরসভার কর্মীরা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে স্প্রে ছড়াচ্ছেন। স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে থার্মাল চেকিং করছেন। ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এখানে করোনা ভাইরাসের পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। লক্ষণ দেখলেই কলকাতায় রেফার করা হচ্ছে। হাসপাতাল চত্বর সাফাই ও জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে। ডায়মন্ড হারবার মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, ভিড়ভাট্টা এড়াতে পুলিশ নাকা চেকিং শুরু করেছে। গরিব মানুষের জন্য পঞ্চায়েতে ও পুরসভা থেকে মাস্ক বিলি করা হয়েছে। ডায়মন্ড হারবারের মহকুমাশাসক সুকান্ত সাহা বলেন, ‘‘দুঃস্থদের বাড়িতে খাবার এবং রোগীর জন্য ওষুধ পাঠানোর টিম তৈরি করা হয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy