প্রতিকী ছবি।
যে দিন শহর কলকাতা-সহ দুই ২৪ পরগনার শহর-গঞ্জে দূরত্ববিধি শিকেয় তুলে মাংসের দোকানে লম্বা লাইন পড়ল, সেই নবমীর সন্ধ্যাতেই মণ্ডপে আছড়ে পড়ল ভিড়। আর সে দিনই, অর্থাৎ গত রবিবার উত্তর ২৪ পরগনায় মোট ৯১৫ জনের করোনা-রিপোর্ট পজ়িটিভ পাওয়া গেল। রাজ্যের মধ্যে এখনও পর্যন্ত এই সংখ্যাই রেকর্ড। দশমীর দিন সংক্রমিতের সংখ্যা কিছুটা কমলেও তা প্রায় ন’শোর কাছাকাছিই রয়ে গেল। লাফিয়ে লাফিয়ে সংক্রমিতের সংখ্যা বৃদ্ধিতে শঙ্কার মেঘ দেখছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।
ষষ্ঠীর দিন জেলায় সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল ৮৬৪। সপ্তমীর দিন তা বেড়ে হয় ৮৮৬। অষ্টমীর দিন সেই সংখ্যা বেড়ে কার্যত ন’শো ছুঁয়ে ফেলে। সে দিন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮৯৬। দশমীর দিনে তা কিছুটা কমে ৮৮৯ হয়েছে।
এ মাসের শুরুর দিকে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ছ’শোর ঘরে ছিল। মাত্র কয়েকদিনেই তা সাতশোর ঘর ছাড়িয়ে আটশো এবং মাসের শেষে ন’শোর ঘরে পৌঁছে গেল।
পড়শি দক্ষিণ ২৪ পরগনার দৈনিক আক্রান্তের হার অনেক কম হলেও পরিসংখ্যান কিন্তু স্বস্তিদায়ক নয় বলেই মনে করছেন চিকিৎসকেরা। এ মাসেরই গোড়ার দিকে জেলার দৈনিক সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল দু’শোর নীচে। এ মাসের মাঝামাঝি তা দু’শো ছাড়িয়ে যায়। উত্তর ২৪ পরগনার মতো নবমীতেই আক্রান্তের সংখ্যা ছিল সব থেকে বেশি।
এ দিন মোট ২৭৬ জন আক্রান্ত হন। সপ্তমীতে ২৪৪ জনের রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। অষ্টমীতে সেই সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ২২৯। দশমীতে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ২৬৭। ফলে আক্রান্তের গড় হার এখানেও ঊর্ধ্বমুখী।
চিকিৎসকেরা বলছেন, পুজোর সময় যাঁদের করোনা রিপোর্ট পজ়িটিভ এল, আসলে তাঁরা চার-পাঁচ দিন বা তারও কিছু দিন আগে আক্রান্ত হয়েছেন। অর্থাৎ যে সময় বাজারে কেনাকাটার ভিড় আছড়ে পড়ছিল, সেই সময় এই সংক্রমণ ছড়িয়েছে। পুজোর সময়েও ভিড় হয়েছে ঠিকই। তবে আদালতের নির্দেশ এবং তা ঘিরে বিতর্ক এবং আশঙ্কার জেরে সেই ভিড় অন্যান্য বছরের তুলনায় কম।
তবে মণ্ডপের বাইরে রেস্তরাঁ থেকে শুরু করে অন্যান্য জায়গায় ভিড়ের ছবিটা যথেষ্ট আতঙ্কের বলেই মনে করছেন চিকিৎসকেরা। আগামি কয়েকদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়বে বলেই মনে করছেন তাঁরা। তার পরেও যদি দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা না কমে, তা হলে আগামি দিনে অত্যন্ত সতর্কতা জরুরি বলে তাঁদের মত।
মণ্ডপের ভিড়ে নিষেধাজ্ঞা জারি হলেও বাজারের ভিড়ে কোনও রাশ নেই। জেলার সর্বত্রই বেলাগাম ভিড় চলছে। পুজোর ক’দিন আরও বেশি ভিড় হয়েছে।
ব্যারাকপুর থেকে বনগাঁ, বসিরহাট থেকে কাঁচরাপাড়া— ভিড়ের ছবিতে কোনও ফারাক নেই। সবথেকে চিন্তার কথা, বাজারে যাঁরা আসছেন, তাঁদের অনেকেই মাস্ক পরছেন না।
তার ফলে সংক্রমণের সম্ভাবনা সবসময় বেশি থাকছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, ‘‘কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গেলে সতর্কতা এবং সুরক্ষায় ঢিলে দিলে চলবে না। আদতে কিন্তু সেটাই ঘটছে।’’
চিকিৎসকেরা বলছেন, ‘‘আগামি দিনে সতর্কতাই একমাত্র পথ। খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ যেন বাড়ির বাইরে বের না হন। উৎসবের মরসুম চলছে। ফলে অনেককেই জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বেরোতে হবে। যাঁরা বেরোবেন, তাঁরা যেন সব রকম সতর্কতা মানেন। তা না হলে সংক্রমণে লাগাম দেওয়া যাবে না।’’ এই হারে সংক্রমণ বাড়তে থাকলে অনেকেই হাসপাতালে শয্যা পাবেন না বলে চিকিৎসকদের আশঙ্কা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy