প্রতীকী ছবি।
করোনায় আক্রান্ত যুবকের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছিল। হাবড়ার বাসিন্দা পরিবারটি স্বাস্থ্য দফতরের কন্ট্রোল রুমের ফোন নম্বরে যোগাযোগ করে। সেখানে বলা হয়, এখন শয্যা নেই। অপেক্ষা করতে হবে। দেড় দিন পর যুবককে স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়।
এই অভিজ্ঞতা কেবল হাবড়ার ওই যুবকের পরিবারের নয়। উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় করোনা আক্রান্ত অনেক রোগীর পরিবারের সদস্যদের দাবি, স্বাস্থ্য দফতরের কন্ট্রোল রুমের ফোন নম্বরে যোগাযোগ করলেও রোগীদের ভর্তি করতে কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে। দেড় দিন, দু’দিন পরে হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ মিলছে। এই সময়ের মধ্যে রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতিও ঘটছে। বাড়িতে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
কেন এই পরিস্থিতি?
প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, জেলায় করোনা সংক্রমণ হু হু করে বাড়ছে। এপ্রিল মাসের শুরুতে উত্তর ২৪ পরগনায় দৈনিক করোনা সংক্রমণ ছিল চারশোর মধ্যে। এই মুহূর্তে সেই সংখ্যাটাই ৪ হাজার ছুঁই ছুঁই।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩৯৮২ জন। মৃত্যু হয়েছে ৩৯ জনের। অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৩,৪৬৬। সংক্রমণ এই হারে বাড়তে থাকায় হাসপাতালগুলিতে রোগী ভর্তির চাপ বেড়ে গিয়েছে অনেক গুণ। সেই তুলনায় শয্যার সংখ্যা কম। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রয়োজনের তুলনায় শয্যার অভাব আছে। যোগাযোগ করলেও হয়তো ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। তবে রোগীর বাড়ির লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হয়। হাসপাতালে শয্যা ফাঁকা হলেই তাঁদের ভর্তি করা হচ্ছে। সে সময়ে বাড়িতে অ্যাম্বুল্যান্স পাঠানো হয় রোগীকে নিয়ে আসতে।
এই পরিস্থিতিতে রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা দিতে জেলায় নতুন করে সেফ হোম চালু করছে প্রশাসন। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই বারাসত, বিধাননগর, টিটাগড়, নিউ ব্যারাকপুর, নৈহাটি, পানিহাটি, দমদম, ব্যারাকপুর, বরাহনগর-সহ জেলায় ১৬টি সেফ হোম চালু হয়েছে। রবিবার বনগাঁ ও অশোকনগরে ১০০ শয্যার দু’টি সেফ হোম চালু হয়েছে। সোমবার হাবড়ায় ৮০ শয্যার একটি সেফ হোম চালু হওয়ার কথা। আরও কয়েকটি সেফ হোম তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে।
করোনা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নিতে চলেছে বলেই মনে করছেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় এ বার জেলায় বড় বড় সেফ হোম তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর।
স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, “এ বার সেফ হোমগুলিতে কম করে ১০০-৩০০ জন রোগী থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ২০, ৩০, ৫০ শয্যার সেফ হোম আর করা হচ্ছে না। কারণ, গত বছর দেখা গিয়েছে, ছোট ছোট সেফ হোমে পরিকাঠামোর অপচয় হয়। তা ছাড়া, এত চিকিৎসক-নার্স দেওয়াও সম্ভব নয়।” প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সেফ হোমগুলিতে অক্সিজেনের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। গত বছর বেশির ভাগ সেফ হোমগুলিকে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলিন্ডারের জোগান ছিল না। ফলে অক্সিজেনের অভাবে প্রায়ই রোগীদের করোনা হাসপাতালে রেফার করা হচ্ছিল। এ বার জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের লক্ষ্য, সেফ হোমগুলিতেই উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া। যাতে হাসপাতালে রোগীর চাপ কমানো যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy