—ফাইল চিত্র।
রাজ্যের জেলাগুলির মধ্যে করোনা সংক্রমণে কলকাতাকে ছাড়িয়ে শীর্ষে উঠে এল উত্তর ২৪ পরগনা। একই সঙ্গে শুরু হয়েছে মৃত্যু মিছিল। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৫ এপ্রিল থেকে ২ মে পর্যন্ত আট দিনে জেলায় করোনা আক্রান্ত ১৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে জেলায় নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় সাড়ে ২৯ হাজার মানুষ।
১ ও ২ মে জেলায় দৈনিক আক্রান্ত হয়েছেন ৩৯৩৪ এবং ৩৯৪২ জন। এই দু’দিনে কলকাতায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩৮৮৫ এবং ৩৯৩৫ জন। এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসকেরা বেশি উদ্বিগ্ন উত্তর ২৪ পরগনা জেলাকে নিয়ে।
নানা অব্যবস্থার অভিযোগ তুলছেন আক্রান্ত ও তাঁদের পরিবারের লোকজন। অভিযোগ, করোনা পরীক্ষার জন্য আরটিপিসিআর করাতে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গেলে অনেক জায়গায় তিন-চার দিন পরে আসতে বলা হচ্ছে। আবার পরীক্ষার পরে রিপোর্ট আসতেও তিন-চার দিন সময় লাগছে। এই সময়ে অনেক রোগী ভাল হয়ে যাচ্ছেন। অনেকের শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। ভোগান্তি তাঁদেরই বেশি। করোনা রিপোর্ট হাতে না থাকায় হাসপাতালে ভর্তি করা যাচ্ছে না। কোনও কোনও ক্ষেত্রে করোনা আক্রান্ত রোগীর রিপোর্ট থাকলেও হাসপাতালে ভর্তি করতে বিস্তর কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতরের কন্ট্রোল রুমের ফোন নম্বরে ফোন করেও ভর্তি হওয়ার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ।
দৈনিক যেখানে চার হাজারের কাছাকাছি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন, সেখানে সাগর দত্ত হাসপাতাল বাদ দিয়ে জেলায় শয্যার সংখ্যা ১০২৫। চাহিদার তুলনায় যা অনেক কম বলেই অভিযোগ। হাতে গোনা কয়েকটি সেফ হোম তৈরি হলেও তাতে প্রয়োজন মিটছে না।
কোনও কোনও হাসপাতালে আবার করোনা পরীক্ষার কিটের অভাব আছে। হাসপাতাল স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে আরটিপিসিআর পরীক্ষার সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। রয়েছে পর্যাপ্ত অ্যাম্বুল্যান্সের অভাব। অনেক ক্ষেত্রে রোগী নিয়ে যেতে দ্বিগুণ ভাড়া চাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। বাড়িতে অসুস্থ রোগীর শ্বাসকষ্ট হলে অক্সিজেনের অভাব দেখা দিয়েছে। জেলায় করোনার ভ্যাকসিনের জোগানও স্বাভাবিক নয়। ভ্যাকসিন নিতে এসে অনেক জায়গায় হয়রান হচ্ছেন মানুষ।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “অনুসন্ধান করে দেখা গিয়েছে, মৃত্যু হওয়া বেশির ভাগেরই বয়স ৫০-৬০ বছরের মধ্যে। তাঁদের কোমর্বিটিও ছিল। মৃত্যুর আরও একটি কারণ আমরা চিহ্নিত করেছি। সেটি হচ্ছে দেরি করে হাসপাতালে আসা।”
স্বাস্থ্য দফতর ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, জ্বর-সর্দি-কাশির মতো উপসর্গ থাকা সত্বেও অনেক মানুষ করোনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না। প্রাথমিক অবস্থায় ওষুধের দোকান থেকে বা এলাকার হাতুড়ে চিকিৎসকের কাছ থেকে ওষুধ খাচ্ছেন। পরে পরিস্থিতির অবনতি হলে হাসপাতালে এসে করোনা পরীক্ষা করাচ্ছেন। এতে অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে। জেলার এক স্বাস্থ্য কর্তা বলেন, “এ বছর করোনা আক্রান্ত রোগীদের আচমকাই দ্রুত অক্সিজেনের মাত্রা নেমে যাচ্ছে। এমনও দেখা যাচ্ছে, এক ঘণ্টার মধ্যে অক্সিজেনের মাত্রা ৯৫ থেকে ৬০ হয়ে যাচ্ছে। বাড়িতে চিকিৎসাধীন থাকা রোগীকে ওই মুহূর্তে অক্সিজেন দেওয়া বা হাসপাতালে ভর্তি করতে দেরি হয়ে যাচ্ছে। এর ফলেও মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।”
এর মধ্যেও এক শ্রেণির মানুষ বিধি মানছেন না। বাজার-হাটে শারীরিক দূরত্ববিধি অনেক ক্ষেত্রেই বজায় থাকছে না। পাড়ার মাঠে, চায়ের ঠেকে এখনও চলছে আড্ডা। শ্মশানে দেহ দাহ করতে লোকজন দলবেঁধে যাচ্ছেন। যানবাহনে ঠাসাঠাসি ভিড় হচ্ছে। অনেকেই মাস্ক থুতনিতে নামিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy