প্রতীকী ছবি।
পরিবারের এক ব্যক্তির করোনা উপসর্গ ছিল। এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান।
রবিবার রাতে এই ঘটনার পরে পরিবারটির শুরু হয়েছিল নানা ভোগান্তি। গ্রামের শ্মশানে দাহ করতে বাধা দেন কিছু মানুষ। সোমবার সকালে পাড়ার কলে জল আনতেও বাধা দেওয়া হয়। দোকান-বাজার করতেও নিষেধ করে দেন গাঁয়ের কিছু মাতব্বর।
কিন্তু এই পরিস্থিতিতে সংসার তো চালাতে হবে। আতান্তরে পরে পরিবার। শেষে স্থানীয় সিপিএম নেতা লোকজন জড়ো করে পরিবারটির পাশে দাঁড়ান। খাবার-দাবার, জলের ব্যবস্থা করেন। পরে ওই এলাকায় যান স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান। তিনি জানান, কিছু লোক ভুল বুঝে এমন কাণ্ড করেছিল। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে।
ঘটনাটি রায়দিঘির নগেন্দ্রপুর পঞ্চায়েত এলাকার। সিপিএম নেতা ইয়াসিন গাজি বলেন, ‘‘কোনও পরিবার করোনা আক্রান্ত হলে বা কেউ মারা গেলে তাঁদের পরিবারের সঙ্গে এমন আচরণ খুবই অমানবিক। তবে আমরা সাধ্য মতো মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করছি।’’
হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রের খবর, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট ছিল ওই যুবকের। বছর বত্রিশের যুবক রিকশা চালাতেন তিনি। সপরিবার থাকতেন কলকাতায়। দিন পাঁচেক আগে জ্বর নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ফেরেন। পাড়ার দোকান থেকে ওষুধ কিনে খাচ্ছিলেন। জ্বর না কমায় দিন কয়েক আগে রায়দিঘি গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান।
রবিবার সন্ধ্যায় ফের জ্বর আসে বলে জানিয়েছে পরিবারটি। শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। রায়দিঘি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখান থেকে পাঠানো হয় ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে। পরিবারের দাবি, পথে কোম্পানির ঠেক মোড়ের কাছেই অ্যাম্বুল্যান্সের মধ্যে মারা যান যুবক। তাঁকে আবার গ্রামীণ হাসপাতালে ফিরিয়ে আনা হয়। মৃত্যুর শংসাপত্র সংগ্রহ করে রাত ১০টা নাগাদ দেহ নিয়ে গ্রামে ঢুকতে গেলে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। দাহ করার কথা ছিল গ্রামের অদূরে ঠাকুরান নদীর পাশে শ্মশানে। কিন্তু বাধার মুখে পড়ে পরিবার-পরিজন গাড়ি ঘুরিয়ে চলে যান প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে মন্দিরবাজারের দক্ষিণ বিষ্ণুপুর মহাশ্মশানে।
সোমবার সকাল থেকে শুরু হয় নতুন অশান্তি। মৃতের পরিবারের লোকজনকে গ্রামের নলকূপ থেকে জল নিতে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। দোকান-বাজারে যেন কেউ না বেরোন বাড়ি থেকে, সে ব্যাপারে ফতোয়া জারি হয় বলেও অভিযোগ পরিবারের।
এই পরিস্থিতিতে পরিবারের পাশে দাঁড়ান সিপিএম নেতা ইয়াসিন গাজি। তিনি কয়েকজনকে নিয়ে সোমবার সকালে মৃতের বাড়িতে যান। পানীয় জল ও চাল-ডাল-আনাজের ব্যবস্থা করেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘মৃতের করোনা উপসর্গ ছিল, এ কথা ঠিক। কিন্তু গ্রামের লোকের এই আচরণও মেনে নেওয়া যায় না।’’ পরিবারের সকলের করোনা পরীক্ষা করানো দরকার বলে মনে করেন তিনি। সেই সঙ্গে বাড়ি-ঘর জীবাণুমুক্ত করতে প্রশাসনকে হস্তক্ষেপ করার আবেদন জানিয়েছেন ইয়াসিন।
পঞ্চায়েত প্রধান আর্জিনা বিবি বলেন, ‘‘ওই বাড়িতে গিয়েছিলাম গ্রামের মানুষ প্রথম দিকে একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। তবে এখন সব ঠিক আছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক।’’
রায়দিঘি গ্রামীণ হাসপাতাল সূত্রের খবর, রবিবার রাতে রেফার করার সময়ে লালারস সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে সমস্ত রকম ব্যবস্থা রয়েছে। ধরে নেওয়া হয়েছিল, সেখানে গেলে রোগীর লালারস পরীক্ষা হয়ে যাবে কিন্তু তার আগেই মারা যান যুবক। মৃতদেহ রাখার মতো ব্যবস্থাও নেই রায়দিঘি গ্রামীণ হাসপাতালে। বিএমওএইচ প্রণবেশ হালদার বলেন, ‘‘এলাকায় গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়ে গিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। ফলে ওই যুবকের পজ়িটিভ হয়ে থাকতেই পারে। কিন্তু পরীক্ষা না হওয়ায় সে কথা নিশ্চিত ভাবে বলা যাবে না।’’ তিনি জানান, মৃতের সংস্পর্শে আসা পরিবারের লোকজনের লালারস সংগ্রহ করা হবে বুধবার। এলাকা স্যানিটাইজ় করার জন্য দমকলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy