প্রতীকী ছবি।
সাড়ে আট মাস পরে, বছর শেষে কিছুটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে। শুরু থেকেই কোভিড আক্রান্তের তালিকায় কলকাতার ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলেছে পড়শি উত্তর ২৪ পরগনা। শুরু থেকে আক্রান্তের হার ঊর্ধ্বমুখীই থেকেছে বরাবর। ডিসেম্বরের শুরু থেকে দৈনিক সংক্রমিতের হার কিছুটা হলেও নিম্নমুখী। আশা জাগাচ্ছে সুস্থতার হার।
এ মাসে শুরু থেকেই রোজই আক্রান্তের তুলনায় সুস্থতার হার বেশি। তার ফলে দ্রুত গতিতে কমছে অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্য। করানোর দাপট যদি এ রকম ধারাবাহিক ভাবে কমতে থাকে, তা হলে আগামী এক মাসের মধ্যেই কোভিডকে বাগে আনা যাবে বলে মনে করেছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। ১ ডিসেম্বর উত্তর ২৪ পরগনায় অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ছিল ৫৯৪৯। বুধবার, ১৬ ডিসেম্বর সেই সংখ্যা নেমে এসেছে ৩৯৯৫-এ। আশার আলো দেখাচ্ছে দক্ষিণ ২৪ পরগনাও। এখানে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা গড়ে ১৫০।
সংক্রমণে এক সময়ে সারা দেশে নজির তৈরি করেছিল উত্তর ২৪ পরগনা। প্রতি ১০০টি নমুনা পরীক্ষায় ২০ জনের রিপোর্ট পজ়িটিভ আসছিল। এখন অবশ্য তা ১০-এর নীচে এসেছে বলে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে। ডিসেম্বরের প্রথম দিনে জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭৯৬ জন। সে দিন সুস্থ হয়েছিলেন ৯০০ জন। স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী রোজই আক্রান্তের তুলনায় সুস্থ হচ্ছেন অনেক বেশি।
এ মাসের শুরু থেকে মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত প্রায় দু’হাজার জন সুস্থ হয়েছেন। এই প্রথম জেলায় এত অল্প সময়ে, এত বেশি সংখ্যক আক্রান্ত সুস্থ হলেন। মাসের শুরুতে যেখানে দৈনিক প্রায় ৮০০ জন সংক্রমিত হচ্ছিলেন, সেখানে বুধবার সংক্রমিত হয়েছেন ৫৪৭ জন। মাঝে কয়েক দিন আক্রান্তের সংখ্যা চারশোর ঘরে নেমে গিয়েছিল। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, হতে পারে করোনাভাইরাস চরিত্র বদলানোয় তার দাপট কিছুটা হলেও কমেছে। যদিও সঠিক কারণ এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে এই সময়ে সতর্কতা বিধি মেনে চললে আগামী বছরে কোভিডকে অনেকটাই বাগে আনা যাবে বলে মত তাঁদের।
মাসখানেক আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা তিনশো ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ক’দিন আগে পর্যন্তও গড়ে দু’শোর বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছিলেন। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত কয়েক দিন ধরে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা রয়েছে দু’শোর নীচে। গত ৬ ডিসেম্বর এই জেলায় মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন ২২৮ জন। তারপর থেকে গত দশ দিনে একদিনও দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা দু’শো ছাড়ায়নি।
এ মাসের ৭ তারিখ ১২৬ জন ও ১৩ তারিখ ১৩১ জন আক্রান্ত হন। যা গত কয়েক মাসের মধ্যে সব থেকে কম। দৈনিক আক্রান্তের এই পরিসংখ্যানে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। দুর্গাপুজোয় সংক্রমণ বৃদ্ধি নিয়ে একটা আশঙ্কা ছিল স্বাস্থ্য আধিকারিকদের। তবে পুজোর জেরে সংক্রমণ যে তেমন বাড়েনি, তা স্পষ্ট হয়ে যায় নভেম্বরের গোড়ার দিকেই। এরপর কর্তাদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল লোকাল ট্রেন।
লোকাল ট্রেন চালু হওয়ায় সংক্রমণ কিছুটা বেড়েছিল। কিন্তু বর্তমানে ফের তা নিম্নমুখী। ট্রেন চালুর পর সে ভাবে বদলায়নি সংক্রমণ-চিত্র। মৃত্যু হারও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্যকর্তারা। ৬ তারিখ ৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তারপর থেকে গত দশ দিনে দৈনিক মৃত্যু সংখ্যা পাঁচের নীচেই রয়েছে। তার থেকে বেড় কথা উত্তরে মতো দক্ষিণেও সুস্থতার হার আক্রান্তের হারের থেকে অনেকটাই বেশি।
তবে একটা অংশের মত, করোনা উপসর্গ থাকলেও অনেকেই পরীক্ষা করাতে চাইছেন না বলে অভিযোগ উঠছে। এর জেরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে না বলে দাবি করছেন কেউ কেউ। তবে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, ব্লক ও মহকুমা হাসপাতালে পরীক্ষার সংখ্যা কমেনি। পর্যাপ্ত পরীক্ষা হচ্ছে। সংক্রমণে কিছুটা রাশ টানা গেলেও করোনা বিধি মেনে চলতে হবে বলেই জানাচ্ছেন তাঁরা। ব্যবহার করতে হবে স্যানিটাইজ়ার, মাস্ক। দূরত্ববিধিও মানা প্রয়োজন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy