Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

পুলিশ লাঠি চালাচ্ছে দেখে বাহবা দিল জনতা

নাগরিকদের সংক্রমণ থেকে দূরে রাখতেই ‘লকডাউন’। কিন্তু নিয়ম জারি করে যে লাভ বিশেষ হবে না, প্রথম দিনেই তার প্রমাণ দিলেন দুই ২৪ পরগনার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ।

শাসন: লকডাউনে রাস্তায় বেরোলেই আটকাতে তৎপর পুলিশ। দেগঙ্গায়। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায় 

শাসন: লকডাউনে রাস্তায় বেরোলেই আটকাতে তৎপর পুলিশ। দেগঙ্গায়। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায় 

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২০ ০০:৩৯
Share: Save:

লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে যাচ্ছে পুলিশ, আর তা দেখে বাহবা দিচ্ছে জনতা- সাম্প্রতিক সময়ে এ দৃশ্য বড় একটা চোখে পড়েনি রাজ্যে। তবে মঙ্গলবার পথেঘাটে বেরিয়ে পড়া ভিড়কে বাড়িমুখো করতে পুলিশি তৎপরতা প্রশংসিত হল সব ক্ষেত্রেই।

নাগরিকদের সংক্রমণ থেকে দূরে রাখতেই ‘লকডাউন’। কিন্তু নিয়ম জারি করে যে লাভ বিশেষ হবে না, প্রথম দিনেই তার প্রমাণ দিলেন দুই ২৪ পরগনার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। ফাঁকা রাস্তায় কোথাও হল বাইক রেস, কোথাও খাঁ খাঁ বাজারের চায়ের দোকানে আড্ডার আসর বসল। কোথাও মানুষ আনাজ কেনার প্রতিযোগিতায় নেমে ভিড় বাড়ালেন যথেচ্ছ। তার ফলে শেষ পর্যন্ত ‘কড়া’ পদক্ষেপ করতে হল পুলিশকেই। লাঠিপেটা করে ঘরে ঢোকাতে হল জনতাকে। তবে দিনের শেষে পুলিশের এই লাঠিচার্জ বাহবা পাচ্ছে ঘরবন্দি মানুষজনের। পুলিশের পাশাপাশি হাবড়ার হিজলপুকুরে জনতাও রাস্তা রুখে গাড়ি আটকেছেন।

হাবড়া শহরের হিজলপুকুর এলাকায় সকাল থেকেই চলছিল অটো-টোটো এমনকী, মালবাহী লরিও। শেষ পর্যন্ত পথে নামে জনতা। এলাকার বাসিন্দারা বাঁশ দিয়ে রাস্তা আটকে দেয়। হাবড়া, গোবরডাঙা ও অশোকনগর-কল্যাণগড় পুর এলাকাতেও সকাল থেকে চলছে অভিযান চালায় পুলিশ। গোবরডাঙায় পুলিশ লাঠি হাতে তেড়ে গিয়ে জমায়েত সরিয়ে দেয়। নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বনগাঁ শহরে বেশ কিছু চা-দোকান খোলা রয়েছে। সেগুলিতে সকাল থেকে জটলাও হচ্ছিল যথেষ্ট। মাইকে ঘোষণা করে কাজ না হওয়ায় পুলিশ ধরপাকড় শুরু করে। বন্ধ করে দেওয়া হয় চায়ের দোকানগুলি। শহরের আনাজ ও মাছের বাজারগুলি খোলাই ছিল। সেখানকার ভিড় উদ্বেগ বাড়িয়েছে প্রশাসনের। গোপালনগর থানার পুলিশ মৃদু লাঠি চালিয়ে লোকজনকে ঘরে ঢুকিয়ে দেয়।

ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের কাঁকিনাড়া, ভাটপাড়া, নৈহাটি, পানপুর এলাকায় একদল যুবক বাইক নিয়ে পুলিশের সঙ্গে রীতিমতো লুকোচুরি খেলায় নামে। সংক্রমণের জন্য যে বাইরে না থাকার নির্দেশ জারি করেছে প্রশাসন তা নিয়ে তাদের বিন্দুমাত্র হেলদোল নেই বলে অভিযোগ এলাকার বাসিন্দাদের। তাদের দেখে মনে হয়েছে, পুলিশকে ফাঁকি দিতে পারলেই আনন্দ।

শেষ পর্যন্ত পুলিশ লাঠি চালাতে শুরু করে। বাইক আরোহীদের লাঠিপেটা খেতে দেখে বাড়ির ছাদ, ব্যালকনি থেকে হাততালি দিয়ে পুলিশকে উৎসাহিত করতে দেখা গিয়েছে।বসিরহাট শহরের বিভিন্ন এলাকায় কানে হেডফোন দিয়ে বাইক নিয়ে বেশ কিছু যুবককে রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে দেখে অভিযোগ জানান সাধারণ মানুষ। পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করতে তাদের সরিয়ে দেয়। কিছু ক্ষেত্রে লাঠিও চালাতে হয় পুলিশকে। নির্দেশ না মানার জন্য বসিরহাট মহকুমার বিভিন্ন এলাকা থেকে পুলিশ ৩৫ জনকে আটক করে।

লকডাউনকে উপেক্ষা করে মঙ্গলবার সকাল হতেই ভাঙড়ের গাবতলা বাজারে উপচে পড়ে মানুষের ভিড়। রাস্তার উপরে বসে পড়ে হাট। অন্যান্য দিনের মতোই অধিকাংশ দোকান খুলে রাখতে দেখা যায় ব্যবসায়ীদের। খবর পেয়ে বাজারে আসে পুলিশ। পুলিশ আসতেই অবশ্য ফাঁকা হয়ে যায় বাজার। সকাল থেকেই ভাঙড়, ঘটকপুকুর, জীবনতলা, বামনঘাটা-সহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় নামে পুলিশ। নরমে-গরমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। বামনঘাটা বাজারে পথচলতি সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের কাছে হাত জোড় করে রাস্তায় বের না হওয়ার অনুরোধ করেন পুলিশ আধিকারিকেরা। অনেক জায়গাতেই আবার পুলিশকে দেখা যায়, পথচারীদের দিকে লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে যেতে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে রাস্তায় বের হওয়া অটো, টোটোর চাকার হাওয়া খুলে দেয় পুলিশ। জীবনতলা থানার পুলিশ এ দিন ৩৯ জনকে আটক করে। ৪টি মোটরবাইকও আটক করা হয়।ক্যানিংয়ে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কিছু মানুষকে এ দিন পথে নামতে দেখা গিয়েছে। কিছু বাইক আরোহী বাইক নিয়ে রাস্তায় ঘুরেছেন। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে, পাড়ার মোড়ে মোড়ে দু-একটি চায়ের দোকানও খুলতে দেখা গিয়েছে। এখানেই পুলিশকেই লাঠি চালিয়ে ভিড় হটাতে হয়েছে। করোনা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আতঙ্ক ছড়ানোর অভিযোগে এক যুবককে আটক করে ক্যানিং থানার পুলিশ। অযথা জটলা করার অভিযোগে মগরাহাটে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, মুদিখানা, ওষুধ ছাড়া সমস্ত দোকান বন্ধ রাখতে হবে। রায়দিঘিতেও এ দিন একটি বাজার বন্ধ করে দেয় পুলিশ।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy