Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Bangaon Local

আতঙ্কের নাম বনগাঁ লোকাল! প্রবল ভিড়ে বিধি শিকেয়, দাবি আরও ট্রেনের

বনগাঁ লোকালে উঠলে এখন সেই চেনা তর্ক ফিরে এসেছে: ‘‘এটা চার জনের সিট, একটু সরে বসুন।’’

করোনার মাঝেও সেই চেনা ছবি। নিজস্ব চিত্র।

করোনার মাঝেও সেই চেনা ছবি। নিজস্ব চিত্র।

অমিতা দত্ত
বারাসত শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২০ ১৯:৩৩
Share: Save:

বনগাঁ লোকাল। নাম নয়, এ যেন বদনাম!

রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে শিয়ালদহ শাখার বনগাঁ লোকালের ‘খ্যাতি’ তার ভিড়ের কারণে। আগে থেকেই ‘ভিড়াতঙ্ক’ ছিল যাত্রীদের মনে। নিউ নর্মালে ট্রেন চালু হওয়ার পর সেই আতঙ্ক আরও বেড়েছে। তার প্রথম কারণ অবশ্যই ভিড়। আর দ্বিতীয় কারণ, করোনা সংক্রমণের ভয়। কারণ, সম্প্রতি চালু হওয়া বনগাঁ লোকালে এতই ভিড় হচ্ছে যে, সেখানে সামাজিক দূরত্বের কোনও বালাই রাখা সম্ভব হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, রেল বা রাজ্যের কোনও নজরদারিও নেই বলে যাত্রীদের অভিযোগ।

বনগাঁ লোকালে উঠলে এখন সেই চেনা তর্ক ফিরে এসেছে: ‘‘এটা চার জনের সিট, একটু সরে বসুন।’’ পাশ থেকে অন্য জনের ফুট কাটা, ‘‘মাঝখানে তো স্পষ্ট লেখা, কেউ বসবেন না।’’ জবাব এল, ‘‘নিয়ম মানতে হলে বাড়িতে থাকুন। ট্রেনে উঠবেন না। করোনা বাড়িতে পালন করুন। ট্রেনে নয়।’’ এমন কথোপকথন নিয়েই এখন চলছে বনগাঁ লোকাল। করোনা-কালের আগে তাস খেলার যে হিড়িক পড়ত ট্রেনে, এখন সেটাই একটু পাল্টে ‘মোবাইল-লুডু’ জায়গা নিয়েছে। হকাররাও নির্বিবাদে ভিড় ঠেলে নিজেদের পসরা ঘাড়ে করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এ কামরা থেকে ও কামরা।

অথচ রেল-রাজ্য একের পর এক বৈঠক শেষে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ট্রেন চললে সর্বত্র পর্যাপ্ত পুলিশের ব্যবস্থা থাকবে। কিন্তু চালু হওয়ার প্রথম দিন ছাড়া সে ব্যবস্থা তেমন ভাবে চোখে পড়েনি বলে অভিযোগ। বলা হয়েছিল, ট্রেনে কোনও রকম ভাবেই হকাররা উঠতে পারবেন না। যাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, প্রথম সপ্তাহ শেষে সেই নির্দেশও আর কার্যকর হয়নি। হকাররা ট্রেনে উঠছেন। কেউ বাদাম, কেউ চানাচুর কেউ বা আবার ফল বিক্রি করতে উঠেছেন। যদিও সংখ্যায় খুবই কম। পাশাপাশি দু’জন যাত্রী বসতে পারবেন না, আসনে লেখা থাকলেও কেউ সে নিয়ম মানছেন না। এবং সেটা দেখারও কেউ নেই। ডিআরএম নিজে শিয়ালদহ ডিভিশনের বিভিন্ন স্টেশন ঘুরে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, প্ল্যাটফর্মের উপরে দোকান খোলা যাবে না। এখন কিন্তু প্রতিটা দোকানই খোলা বলে যাত্রীদের একাংশের অভিযোগ।

রেল-রাজ্য প্রথম থেকেই কঠোর হতে বলেছিল রেল পুলিশ (জিআরপি) এবং রেলরক্ষী বাহিনী (আরপিএফ)-কে। কিন্তু বাস্তবে কেন তারা এত ছাড় দিয়েদিল, তা নিয়ে অনেক যাত্রীর প্রশ্ন রয়েছে। তবে আরপিএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, হকারদের রুটিরুজির জন্য নিয়ম একটু শিথিল করা হয়েছে। যদিও এ বিষয়ে কোনও সরকারি নির্দেশিকা নেই। তাদের দাবি, নিয়মিত সব স্টেশনে থার্মাল চেকিং হচ্ছে। শিয়ালদহের ডিআরএম শৈলেন্দ্র প্রসাদ সিংহের কথায়, ‘‘ট্রেন চালু হওয়ার পর করোনা-সংক্রমণ ব্যাপক হারে বেড়েছে এমনটা নয়। চেষ্টা করা হচ্ছে ভিড় যাতে না হয়। সাধারণ যাত্রীদের সহযোগিতা চাইছি আমরা।’’

কিন্তু যাত্রীদের একাংশের মতে, পুরনো সময়সারণি মেনে সব ক’টি বনগাঁ লোকাল যদি চলে, তা হলে ভিড় কিছুটা কম হয়। সে ক্ষেত্রে আতঙ্কও অনেকটা কমবে। বনগাঁর কোর্ট রোডের বাসিন্দা পেশায় অভিনেত্রী মৌলী রায় বলেন, ‘‘পেশাগত কারণেই আমাকে রোজ কলকাতায় যেতে হচ্ছে। কিন্তু রোজ যে ভাবে ভিড়টা বাড়ছে, তাতে ভয়ই পাচ্ছি। বাড়িতে করোনা নিয়ে আসছি না তো! নিজের পাশাপাশি বাড়ির লোকজনদের জন্যও তো চিন্তা হয়। ট্রেনের সংখ্যা বাড়লে হয় তো ভিড়টা একটু কমবে।’’

একই কথা শোনা গেল অশোকনগর ৮ নম্বরের বাসিন্দা গার্গী দাসের গলায়। একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী গার্গী বলেন, ‘‘ট্রেন চলায় যাওয়া-আসা করতে অনেক সুবিধা হচ্ছে। খরচও কমেছে। সেটা ভাল দিক। কিন্তু, করোনা-কালে যে ভাবে নিয়মকানুন থেকে সরে যাচ্ছেন যাত্রীরা তাতে আতঙ্ক বাড়ছে প্রতি দিন।’’

তবে এখুনি ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধির কোনও খবর দিতে পারছেন না রেল কর্তৃপক্ষ। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এখনই ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধির ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। সিদ্ধান্ত হলে সময় মতো জানিয়ে দেওয়া হবে।’’

বনগাঁ লোকালের গায়ে ভিড়ের বদনাম ঘোচার নয়। কিন্তু সেই গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো করোনাতঙ্ক কবে কাটবে, সেই অপেক্ষাতেই যাত্রীরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Bangaon Local Train Corovirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy