জেলা পরিষদে নতুন করে সজ্জিত সভাধিপতির ঘর। নিজস্ব চিত্র।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদ ভবনে সভাধিপতি, সহ-সভাধিপতির কক্ষ-সহ কয়েকটি ঘরের সংস্কারে বরাদ্দ হয়েছে ৫৮ লক্ষ টাকা। সভাধিপতির বাংলো সংস্কারে বরাদ্দ আরও ২৮ লক্ষ টাকা। জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ এবং কর্মাধ্যক্ষদের ঘরগুলিরও ভোলবদল হবে। সে কাজে কত খরচ হবে, তা ঠিক করবেন নির্বাহী বাস্তুকার এবং সচিব। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসায় শাসক-বিরোধী চাপানউতোর তীব্র হয়েছে।
বিরোধীদের বক্তব্য, কর্তাদের ঘরের শোভাবর্ধনের পরিবর্তে এই বিপুল অঙ্কের টাকা উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করা হলে সাধারণ মানুষের উপকার হত। যদিও জেলা সভাধিপতি, তৃণমূলের নারায়ণ গোস্বামীর পাল্টা বক্তব্য, ‘‘ভাল ভাবে কাজ করতে গেলে অফিসের মতো অফিস হওয়া দরকার। সেই কারণে ন্যূনতম যেটুকু সংস্কার না করলেই নয়, সেটুকু কাজ জেলা পরিষদের নিজস্ব আয় থেকে করছি।’’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘সভাধিপতির ঘর, বাংলো, এ সবই জেলা পরিষদের স্থায়ী সম্পদ। সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি। জল জমে, মশার উপদ্রব হয়। ন’জন কর্মাধ্যক্ষ, সভাধিপতি, সহ-সভাধিপতি ও অধ্যক্ষদের বসার মতো উপযুক্ত জায়গা দরকার হয়। জেলা পরিষদ ভবনটি বহু আগে তৈরি হয়েছিল। সেটি এখন যুগোপযোগী নয়।’’
জেলা পরিষদ সূত্রে খবর, গত ১১ অক্টোবর জেলা পরিষদের অর্থ, উন্নয়ন ও পরিকল্পনা স্থায়ী সমিতির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, সভাধিপতি, সহ-সভাধিপতি, কর্মাধ্যক্ষদের কক্ষের ভোল বদলানো হবে। রূপবদল হবে সভাধিপতির বাংলোরও। সভাধিপতির কক্ষের সৌন্দর্যায়নের কাজ প্রায় শেষ। বাকি কাজ এখনও শুরু হয়নি। জেলা পরিষদের অন্দরে কান পাতলে শোনা যায়, বাস্তুশাস্ত্র মেনে নাকি সভাধিপতির ঘরের সংস্কার হয়েছে। আগে সভাধিপতি বসতেন যে দিকে মুখ করে, বর্তমান সভাধিপতি বসছেন তার উল্টো দিকে মুখ করে।
কেমন হয়েছে সভাধিপতির কক্ষ?
জেলা পরিষদের এক আধিকারিকের বর্ণনায়, এ যেন স্বপ্নপুরী! টেবিলের উপরে পাতা স্বচ্ছ কাচে ধাক্কা খেয়ে মায়াবী আলো ছড়িয়ে পড়ছে ঘরের আনাচ-কানাচে। আলোকিত ফল্স সিলিং। ঝাঁ চকচকে পালিশ করা কাঠে মোড়া হয়েছে ঘরের দেওয়াল। সামনে দাঁড়ালে মনে হয়, যেন আয়না। বাহারি সোফায় পাতা সাদা তোয়ালে। মেঝে মোড়া সবুজ কার্পেটে। কক্ষে রয়েছে বেশ কিছু দামি চেয়ার। সেগুলির মধ্যে একটিকে আলাদা করে চেনা যায় তার গঠনশৈলীর জন্য। বুঝতে অসুবিধা হয় না, দুধসাদা সেই চেয়ারেই বসেন সভাধিপতি। তাঁর চেয়ারের পিছনে থাকা সুদৃশ্য কাঠের ফ্রেম থেকে ছড়িয়ে পড়ছে নানা রঙের আলো।
জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, সভাধিপতির বাংলোর বাইরের পলেস্তারা খসে পড়ছিল। দেওয়ালে জল জমে। চেয়ার, টেবিলে উই ধরেছে। গত ১৫-২০ বছরে সংস্কার হয়নি। ইঁদুরের উৎপাত রয়েছে। সভাধিপতি বলেন, ‘‘অনেক মানুষ দেখা করতে আসেন। ঠিক করেছি, এ বার সকালে বাংলোয় তাঁদের সঙ্গে দেখা করব। প্রয়োজনে বাংলোয় থাকব। তাই বাংলোর সংস্কার জরুরি।’’
ঘরের সংস্কার হয়েছে কি বাস্তু মেনে? ধোঁয়াশা রেখে সভাধিপতি মন্তব্য, ‘‘কেউ সাদা জামা পরেন, কেউ লাল জামা। কেউ আবার বার দেখে জামা পরেন।’’
বিরোধীরা বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলকে খোঁচা দিতে ছাড়েনি। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তীর কটাক্ষ, ‘‘মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ লুট করেছিল কিছু বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থা। সেই লুটের টাকা ব্যবহার করে ক্ষমতায় এসেছিল তৃণমূল। ক্ষমতায় আসার পরে লুট আর সরকারি অর্থে ভোগবিলাসই তৃণমূল নেতাদের একমাত্র কাজ। কেউ কেউ ওই কাজ করতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এখন জেলে রয়েছেন।’’ তিনি মনে করিয়ে দেন, ‘‘আমরাও জেলা পরিষদ চালিয়েছি বহু বছর। আমিও জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ ছিলাম। এমন বিলাসবহুল কক্ষের প্রয়োজন হয়নি আমাদের।’’
জেলা পরিষদের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছে, সভাধিপতির ঘর যে ভাবে সাজানো হয়েছে, সেই একই ভাবে সহ-সভাধিপতি এবং কর্মাধ্যক্ষদের ঘরের শোভাবর্ধন হলে প্রকৃত খরচ বরাদ্দের তুলনায় অনেক বেশি হবে। যদিও সভাধিপতির দাবি, “বরাদ্দের মধ্যেই ব্যয় সীমাবদ্ধ রাখা হবে। প্রয়োজনে দু'দফায় কাজ হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy