প্রতীকী ছবি।
ডেঙ্গি মোকাবিলায় নড়ে বসেছে প্রশাসন। নিয়মিত মশা মারা অভিযান চলছে পুরসভার তরফে। নিকাশি নালা, জমা জল সাফাই করা হচ্ছে। ঝোপ-জঙ্গল পরিস্কার করা হচ্ছে। মানুষকে সচেতন করতে চলছে সরকারি-বেসরকারি ভাবে প্রচার কর্মসূচি। ডেঙ্গির লার্ভা খুঁজে বের করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ড্রোন ক্যামেরার ব্যবহার করা হচ্ছে। রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা নিয়মিত এলাকায় এসে জ্বর-ডেঙ্গির পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছেন।
এত কিছুর পরেও অবশ্য হাবড়া ও অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভা এলাকায় জ্বর-ডেঙ্গির প্রকোপ কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। রোজই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা। নিয়মিত ব্যবধানে মানুষের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। হাসপাতালগুলি জ্বর-ডেঙ্গি রোগীর চাপে উপচে পড়ছে। চলতি মরসুমে এখনও পর্যন্ত হাবড়া, গোবরডাঙা ও অশোকনগর থানা এলাকায় ২১ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে জ্বর-ডেঙ্গিতে।
হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, জ্বর-ডেঙ্গি এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বুধবার পর্যন্ত হাবড়া হাসপাতালে ৭৯ জন ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছেন। জ্বরে আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছেন ১১২ জন। রোজই গড়ে ৩০ জন মতো ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে হচ্ছেন। একই পরিস্থিতি অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালেও।
চলতি বছরে উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় জ্বর ডেঙ্গির প্রকোপ সব থেকে বেশি ছড়িয়েছে হাবড়া ও অশোকনগর এলাকায়। কেন এখনও জ্বর ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না? প্রশাসনের কর্তারা এবং চিকিৎসকেরা মনে করছেন, এর পিছনে রয়েছে এখনও একটা বড় সংখ্যক মানুষের সচেতনতার অভাব। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের দাবি, চলতি বছরে জ্বর-ডেঙ্গিতে মৃত্যুর সংখ্যা অনেকটাই কমানো সম্ভব হয়েছে। মানুষ সচেতন হলে মৃত্যুর সংখ্যা আরও কমানো যেত।
চিকিৎসকেরা মনে করছেন, মৃত্যুর অন্যতম কারণ, দেরি করে রোগীদের হাসপাতালে আসা। হাবড়া হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, এ বছর মৃত্যু হওয়া রোগীদের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করলে দেখা যাচ্ছে, জ্বর হওয়ার পরে তাঁরা হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসে চিকিৎসা করাননি। রক্ত পরীক্ষা করাতেও দেরি করেছেন। শেষে হাসপাতালে যখন এসেছেন, তখন রোগীর শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। হাবড়া হাসপাতালের সুপার শঙ্করলাল ঘোষ বলেন, ‘‘জ্বর হওয়ার পরে যদি রোগীর মাথা ঘোরা, বমি, পেট ব্যথা, শ্বাসকষ্ট— এ ধরনের উপসর্গ দেখা যায়, তা হলে দেরি না করে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা উচিত। কিন্তু বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই তা হচ্ছে না।’’
তবে ডেঙ্গি প্রতিরোধে পুরসভার ভূমিকায় মানুষ সন্তুষ্ট নন। মঙ্গলবার হাবড়ার আক্রামপুরে বাসিন্দা, ডেঙ্গিতে আক্রান্ত মৃত্যু হওয়া প্রতীক বিশ্বাসের দাদা অনুপমের দাবি, ‘‘কিছু দিন আগে এলাকায় যখন জ্বর-ডেঙ্গি ভীষণ ভাবে ছড়িয়েছিল তখন পুরসভার তরফে মশা মারা তেল-চুন-ব্লিচিং ছড়ানো হচ্ছিল। এখন তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’’ আক্রামপুরের বাসিন্দা ডেঙ্গি আক্রান্ত চিত্রা পোদ্দার বলেন, ‘‘পুরসভার থেকে আবর্জনা এখন নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না। ঝোপ-জঙ্গল সাফ হচ্ছে না। মশা মারা তেলও দেওয়া হচ্ছে না। অথচ এখনও মানুষ জ্বর-ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হচ্ছেন।’’
হাবড়ার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, জ্বর-ডেঙ্গি প্রতিরোধে মশা মারার কাজে তাঁরা গতিহীনতা লক্ষ্য করছেন। একমাস আগেও পুরসভার যে তৎপরতা ছিল, এখন তা নেই বলে অভিযোগ। বাসিন্দারা জানালেন, হাবড়া পুরসভায় এখন প্রশাসকের নেতৃত্বে চলছে। প্রাক্তন কাউন্সিলরদের মশা মারা ঠিকঠাক হচ্ছে না জানালেও কোনও ফল মিলছে না।
হাবড়ার বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক অবশ্য অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘হাবড়া শহরে আমরা জ্বর-ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছি। মানুষকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। পুরসভা সাধ্যের বাইরে গিয়ে ডেঙ্গি প্রতিরোধে কাজ করছে।’’ অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার তরফে মশা মারতে তেল-চুন-ব্লিচিং ছড়ানো হচ্ছে, এলাকায় নিয়মিত ধোঁয়া ছড়ানো হচ্ছে বলেও দাবি পুরপ্রধান প্রবোধ সরকার যদিও পুরসভার বিরোধী দলনেতা চিত্তরঞ্জন বিশ্বাসের অভিযোগ, মশা মারার কাজে পুরসভার জোরদার পদক্ষেপ করা হচ্ছে না। মাঝে নিয়মিত মশা মারা হলেও এখন কাজে গতি নেই।
পুরপ্রধান বলেন, ‘‘মানুষকে সচেতন করা যাচ্ছে না। বুধবার সকালে মৃত্যু হওয়া পূর্ণিমা হালদারের বাড়ির আশপাশে প্রচুর কচুবাগান রয়েছে। দিন কয়েক আগে কাটতে যাওয়া হয়েছিল। তখন ওঁরা আপত্তি করেছিলেন। বুধবার অবশ্য তা কাটার কাজ শুরু হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy