Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪
Fluoride

দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ভূগর্ভস্থ জলে বাড়ছে ফ্লোরাইড, উদ্বেগ

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী প্রতিলিটার পানীয় জলে সর্বাধিক ১.৫ মিলিগ্রাম ফ্লোরাইড থাকা উচিত।

An image of Hand Pump

বারুইপুর ব্লকের ১৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে পাঁচটি এলাকার জলে উচ্চ মাত্রায় ফ্লোরাইড পাওয়া গিয়েছে। প্রতীকী চিত্র।

সামসুল হুদা
ভাঙড়  শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২৩ ০৮:১৮
Share: Save:

আর্সেনিকের পাশাপাশি দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় ভূগর্ভস্থ জলে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে ফ্লোরাইডের পরিমাণ। সম্প্রতি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ়ের গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।

তথ্য অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, বারুইপুর ব্লকের ১৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে পাঁচটি এলাকার জলে উচ্চ মাত্রায় ফ্লোরাইড পাওয়া গিয়েছে। বিশেষ করে ধপধপি ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ৪৩.৭ শতাংশ পানীয় জলের নমুনায় প্রতি লিটার জলে ১.৫ মিলিগ্রাম ফ্লোরাইড মিলেছে। এ ছাড়াও, সোনারপুর ব্লকের রাজপুরসোনারপুর পুরসভা এলাকায় দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও নগরায়ণের সঙ্গে সঙ্গে জলের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ওই এলাকার বাসিন্দারা দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে ভূগর্ভস্থ জলের উপরে নির্ভরশীল। ফ্লোরাইড এবং আর্সেনিকেরসর্বাধিক উপস্থিতি ২৪.৪ থেকে ৩০.৫ মিটার গভীরতার স্তরে পাওয়া গেছে। ১৫২ মিটারের নীচে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে সেগুলির উপস্থিতি। ওই স্তর থেকে তোলা জল ব্যবহারের জন্য নিরাপদ। বেশি ফ্লোরাইডযুক্ত জল ব্যবহারের ফলে শরীরে একাধিক খারাপ প্রভাব পড়তে পারে বলে জানা যাচ্ছে। বিষয়টি সদ্য প্রকাশিত হয়েছে ‘সায়েন্স অব দ্য টোটাল এনভায়রনমেন্ট’ এবং ‘গ্রাউন্ড ওয়াটার ফর সাস্টেনেবলডেভেলপমেন্ট’ জার্নালে।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী প্রতিলিটার পানীয় জলে সর্বাধিক ১.৫ মিলিগ্রাম ফ্লোরাইড থাকা উচিত। মানবদেহে ফ্লোরাইড দু’রকম ভাবে কাজ করে। সেটির মাত্রা প্রতি লিটার জলে ১.৫ মিলিগ্রামের নীচে থাকলে তা উপকারী। দাঁত, হাড় শক্তিশালী করার কাজে লাগে ফ্লোরাইড। তবে সেই মাত্রা প্রতি লিটারে ১.৫ মিলিগ্রামের বেশি থাকলে তা ক্ষতিকারক। শরীরে থাকা ক্যালসিয়াম ভাঙতে শুরু করে। এ ক্ষেত্রে ডেন্টাল ফ্লুরোসিস (দাঁত ভাঙতে শুরু করা, হলুদ ছাপ পড়া, দাঁতের স্থানচ্যুতি ঘটা), হাড় চূর্ণ-বিচূর্ণ হওয়ার মতো রোগ দেখা দেয়। পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া,পুরুলিয়া, বীরভূম জেলায় অনেক আগেই ভূগর্ভস্থ জলে ফ্লোরাইড পাওয়া গিয়েছে। ফ্লুরোসিস আক্রান্ত রোগীও রয়েছে সেখানে।

কী কারণে ভূগর্ভস্থ জলে ফ্লোরাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে? এর কারণ জানতে গবেষণায় একাধিক পরিসংখ্যান মডেল প্রয়োগ করা হয়েছিল। গবেষকেরা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত মাত্রায় ভূগর্ভস্থ জল তুলে নেওয়ার জেরেই সমস্যা তৈরি হচ্ছে। শূন্য থেকে ১৮.৩মিটার গভীরতায় মূলত মাসকোভাইট নামে একটি খনিজ পদার্থের দ্রবীভবন ঘটছে বেশি মাত্রায়। ওই খনিজ ভেঙে গিয়ে ফ্লোরাইড বেরিয়ে জলে মিশে যাচ্ছে। ফ্লোরাইড যুক্ত জলের চরিত্র অতিরিক্ত লবণাক্ত জলের মতো। ওই জল ব্যবহারের আগে ফ্লোরাইড মুক্ত করার ওয়াটার প্লান্ট তৈরির প্রয়োজন আছে বলেগবেষকেরা জানাচ্ছেন। এ ছাড়া, বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করে তা ব্যবহার করা যেতে পারে। গভীর নলকূপের জল ব্যবহারও নিরাপদ। বিষয়টি নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রশাসনিক স্তরে পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন বলেও জানাচ্ছেন গবেষকেরা।

গবেষক তড়িৎ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘যে ভাবে ভূগর্ভস্থ পানীয় জলে আর্সেনিকের পাশাপাশি ফ্লোরাইড পাওয়া যাচ্ছে, তা উদ্বেগের। এ ক্ষেত্রে সরকারি ভাবে ফ্লোরাইড দূরীকরণ ওয়াটার প্লান্ট দরকার। বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করারও প্রয়োজনীতা বাড়ছে।’’ গবেষক অয়ন দে বলেন, ‘‘ফ্লোরাইডের যে সমস্যা দেখা দিয়েছে, তা আংশিক ভাবে প্রাকৃতিক। আমরা এই অঞ্চলে গবেষণা করে দেখেছি, মাটিতে মাসকোভাইট নামে ফ্লোরাইড যৌগ রয়েছে। অতিরিক্ত মাত্রায় ভূগর্ভস্থ জল তুলে নেওয়ার ফলে সেখান থেকে ফ্লোরাইড বেরিয়ে মিশছে জলে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Fluoride Ground Water
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE