পাট্টা পাওয়া জমি লিজ় নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে মাছ চাষ করছেন তৃণমূলের প্রাক্তন প্রধান। গরিব আদিবাসীদের জমির লিজ়ের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে। এমনকী, শাসক দলের ওই প্রাক্তন প্রধান নিজের ক্ষমতার ‘অপব্যবহার’ করে জমি জবরদখল করার চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ। দীর্ঘ দিন ধরে লিজ়ের টাকা না পেয়ে ইতিমধ্যে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন অনেকে। ভাঙড় ২ ব্লক প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘এমন কোনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
ঘটনাটি ভাঙড় ২ ব্লকের বেঁওতা ১ পঞ্চায়েতের হানাখালি গ্রামের। বাম আমলে, ১৯৮৪ সালে হানাখালি গ্রামে প্রায় দেড় হাজার আদিবাসী, তফসিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত পরিবারকে ২২০০ বিঘা জমির পাট্টা দেওয়া হয়েছিল। ওই সমস্ত জমিতে ‘ট্যাঙ্ক ফিসারি’ করে মাছ চাষ শুরু করে বহু পরিবার। ১০-১২ বছর আগে ১৫-২০ জনের থেকে প্রায় ১৮ বিঘা ভেড়ি লিজ় নেন বেঁওতা ১ পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান সত্যজিৎ মণ্ডল ওরফে পাঁচু। এই নিয়ে তাঁর ‘স্ট্যাম্প পেপারে’ লিখিত চুক্তি হয়।
অভিযোগ, পাট্টার ওই জমি লিজ় নেওয়ার পর থেকে পাঁচু পরিবারগুলিকে লিজ়ের টাকা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। শাসক দলের নেতা হওয়ার সুবাদে পাট্টা পাওয়া ওই জমি একপ্রকার জবরদখল করতে চাইছেন বলে অভিযোগ।
অলোক বিশ্বাস, শিখা বন্দ্যোপাধ্যায়েরা (বিয়ের পরের পদবি) বলেন, ‘‘আমরা জমি লিজ় দেওয়ার পর থেকে কোনও টাকা পাচ্ছি না। প্রাক্তন প্রধান পাঁচু মণ্ডল সমস্ত টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এমনকী, টাকা চাইতে গেলে হুমকি দিচ্ছেন। অবিলম্বে আমরা জমি ফেরত চাই।’’ বিশ্বজিৎ বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমার দু’বিঘা জমি লিজ় নিয়ে কোনও টাকা মেলেনি।’’
অভিযোগ উড়িয়ে পাঁচু বলেন, ‘‘আমাকে বদনাম করতে এ সব বলা হচ্ছে। আমি দলের নির্দেশ মতো বকেয়া সমস্ত টাকা শোধ দিয়ে দিয়েছি। তার সমস্ত প্রমাণ আমার কাছে আছে। আসলে কিছু মানুষ চক্রান্ত করে আমার কাছ থেকে ওই জমি কেড়ে নিতে চাইছেন।’’
এ বিষয়ে সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য তুষার ঘোষ বলেন, ‘‘বাম আমলে ওই এলাকায় আমরা সরকারি জমি পাট্টা দিয়েছিলাম। এখন ওই জমি লিজ় নিয়ে মাছ চাষের নামে শাসক দলের নেতা টাকা আত্মসাৎ করার পাশাপাশি ক্ষমতার জোরে জবরদখল করার চেষ্টা করছেন।’’
ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক তথা ভাঙড় তৃণমূলের পর্যবেক্ষক সওকাত মোল্লার বক্তব্য, ‘‘যে-ই হোন না কেন, আমরা এই ঘটনাকে সমর্থন করি না। পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছি, যাঁদের জমি, তাঁরা নিজেরাই চাষ করবেন।’’ পাঁচু মণ্ডল তাঁদের দলের কেউ নন বলেও দাবি সওকাতের।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)