নিষ্ঠা: মেলা শুরুর আগেই মন্দিরের কাজ শেষ করতে তৎপর ফরিদুল। বুধবার, গঙ্গাসাগরে। ছবি: সুদীপ ঘোষ
ছিপছিপে চেহারা। পরনে ঢিলেঢালা জামা। সেটা কোমরে আঁটসাঁট করে গামছা দিয়ে বাঁধা। এক হাতে রংয়ের বালতি, অন্য হাতে তুলি। এই নিয়েই কখনও মই বেয়ে উপরে উঠছেন, কখনও আবার বাঁশের মাচায় উঠে পড়ছেন অস্থায়ী মন্দিরের রংয়ের শেষ পোঁচটুকু দিতে। তুলি টানতে টানতেই সতীর্থকে ধমকের সুরে বলে উঠছেন, ‘‘এখানে ঠিক ভাবে রং করিসনি কেন! আসল মন্দিরে এমন আছে? জানিস বাইরে থেকে কত লোক এটা দেখতে আসবে?’’
তিনি বছর পঞ্চাশের ফরিদুল শেখ। নদিয়ার কৃষ্ণনগরের জেলখানা এলাকার বাসিন্দা। তবে এখন তাঁর ঠিকানা গঙ্গাসাগর। মেলা ঘিরে এ বছরই প্রথম গঙ্গাসাগরে তৈরি হচ্ছে রাজ্যর পাঁচটি মন্দির। অস্থায়ী কাঠামোর ত্রিমাত্রিক মডেলের মাধ্যমে তুলে ধরা হচ্ছে দক্ষিণেশ্বর, কালীঘাট, তারাপীঠ, তারকেশ্বর ও জহুরা কালীবাড়ির মন্দিরকে। ভিন্রাজ্যের পুণ্যার্থীরা গঙ্গাসাগরে এসে যাতে রাজ্যের ওই সব মন্দিরের সঙ্গে পরিচিত হতে পারেন, তার জন্যই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। আরও কয়েক জনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মেলার ওই পাঁচ অস্থায়ী মন্দিরের রংয়ের কাজ করছেন ফরিদুল।
জানা গেল, ফরিদুল সারা বছর নিজের এলাকায় রংয়ের কাজ করেন। বাড়িতে স্ত্রী ছাড়াও রয়েছেন ছেলে ও মেয়ে। ছেলে সদ্য রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দিয়েছেন। সেখান থেকে আয় বিশেষ হয় না। বাড়িতে রোজগেরে বলতে কার্যত একা ফরিদুল। কৃষ্ণনগর থেকে রংয়ের কাজের জন্য ৩০ জনের একটি দল এসেছিল দিন ২০ আগে। তবে ১০-১২ জন কিছু দিন আগে ফিরে গিয়েছেন। কিন্তু এখানেই এখনও রয়ে গিয়েছেন ফরিদুল। তিনি বলেন, ‘‘এ বছর গঙ্গাসাগরে প্রচুর লোক হবে শুনছি। সারা দেশের লোকজন এসে এই কাজ দেখবে। এর সঙ্গে আমাদের রাজ্যের সম্মান জড়িত। তাই মাঝপথে ছেড়ে বাড়ি ফিরতে মন চায়নি। শেষ করেই বাড়ি ফিরব।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কথায় বলে, সব তীর্থ বার বার, গঙ্গাসাগর এক বার! সেখানে এত কাছে এসে মেলা দেখার সুযোগ হাতছাড়া করলে চলে? মেলা শুরু হলেই বাড়ি ফিরব।’’
মুখ্যমন্ত্রী আসার আগেই রংয়ের কাজ শেষের তাড়া ছিল ঠিকাদারি সংস্থার। গত কয়েক দিন ধরে তাই রাত জেগেই কাজ করতে হয়েছে ফরিদুল-সহ বাকিদের। ফরিদুল বললেন, ‘‘দিদি তো এখন এখানেই। যে কোনও মুহূর্তে এসে ঘুরে যেতে পারেন। আর মেলা শুরু হতেও তো আর বেশি দিন দেরি নেই।’’
জানা গিয়েছে, এই সব মন্দির তৈরির দায়িত্ব পেয়েছে কলকাতার এক সংস্থা। ওই সংস্থার অন্যতম কর্তা বললেন, ‘‘আমাদের কিছুই বলতে হচ্ছে না। ফরিদুল কার্যত একাই মন্দিরের খুঁটিনাটি সবাইকে বলে দিচ্ছেন।’’ তবে ফরিদুল খুশি মন্দিরের কাজে নিজের একটা ছাপ রাখতে পেরে। তাঁর কথায়, ‘‘এটা তো একটা সম্মানের ব্যাপার। সেখানে নিজের হাতের কাজের চিহ্ন রাখতে পেরে ভালই লাগছে। সারা জীবন সবাইকে বলতে পারব এটা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy