শহরজুড়ে এ ভাবেই লাগানো হয়েছে মাইক। —নিজস্ব চিত্র
শব্দদূষণে জেরবার বনগাঁ শহরের মানুষ। অভিযোগ, শহর জুড়ে প্রায় সর্বত্র তারস্বরে মাইক বাজছে। মাইকের আওয়াজে নাজেহাল হওয়াটা এখানকার মানুষের দৈনন্দিন রুটিন হয়ে গিয়েছে। রাস্তায় চোখ রাখলেই দেখা যাচ্ছে বিদ্যুতের খুঁটি, টেলিফোনের খুঁটিতে বাঁধা রয়েছে মাইক।
করোনা ও লকডাউনের জেরে বেশ কয়েকমাস মাইক বাজিয়ে সামাজিক-রাজনৈতিক-ধর্মীয় অনুষ্ঠান বন্ধ ছিল। তবে কিছুদিন হল ফের শুরু হয়েছে শব্দ তাণ্ডব। কোনও কোনও দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত উচ্চস্বরে মাইক বাজছে। অতীতে দেখা গিয়েছে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা নড়েচড়ে বসলে সাময়িক কয়েকদিন মাইকের দাপট কমে। পুলিশি নজরদারি কমে গেলে ফের শুরু হয় তাণ্ডব। অভিযোগ, পুলিশ প্রশাসনের নজরদারির অভাবেই মাইকের দাপট চলছে।
শহরবাসীর অভিযোগ, বছরভর শব্দের দাপট চলে। শীতের সময় তা আরও বেড়ে যায়। যে কোনও অনুষ্ঠানে মাইক বাঁধাটা এক প্রকার নিয়মে পরিণত হয়ে গিয়েছে। সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ধর্মীয় যে কোনও অনুষ্ঠানেই চোঙা বাঁধা হয়। এক একটি অনুষ্ঠানের জন্য ১৫-২০টা মাইকও বাঁধা হচ্ছে। শীতের সময় গভীর রাত পর্যন্ত দূর দূরান্ত থেকে চোঙার কান ফাটানো শব্দ ভেসে আসে। বাড়ির সামাজিক অনুষ্ঠানেও রাস্তায় মাইক বাধা হচ্ছে। রাতে বনভোজন, জলসাতে চলে মাইক, সাউন্ড বক্সের তাণ্ডব। শব্দের দাপটে রাস্তায় বেশিক্ষণ থাকতে পারছেন না মানুষ। অনেকসময় মোবাইলের রিংটোন শুনতে পান না পথচারীরা। যানবাহনের হর্ন শুনতেও সমস্যা হয়। কারও সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলা যায় না। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় প্রবীণ মানুষদের। সমস্যায় পড়ছে পড়ুয়ারাও। স্থানীয় মানুষের সান্ধ্যকালীন আড্ডা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শহর এলাকায় মানুষ শান্তিতে বাড়িতে বিশ্রামও নিতে পারছেন না। ব্যবসায়ীরাও দোকানে বসে থাকতে পারছেন না। ক্রেতাদের দোকানে ঢুকে জোরে জোরে কথা বলতে হচ্ছে। দোকানিদের কথায়, “চোঙার দাপটে দোকানে বসে থাকা যাচ্ছে না। ক্রেতার সংখ্যাও কমে যাচ্ছে।” অভিভাবকরা বলেন, “ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া লাটে উঠতে বসেছে।” অভিযোগ, অনুষ্ঠান শুরুর আগে থেকেই ইদানীং মাইক বাজানো হচ্ছে। কোন অনুষ্ঠানে কারা কত বেশি মাইক বাঁধতে পারে তার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।
অতীতে শহরের কিছু মানুষ শব্দদূষণ প্রতিরোধ মঞ্চ তৈরি করে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে প্রচার করেন। শহরে মিছিল বের করা হয়। মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-এর তরফে পুলিশ প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছিল। পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও পুরো বন্ধ করা যায়নি শব্দদূষণ। এপিডিআর-এর বনগাঁ শাখার সহ সম্পাদক দেবাশিস বসু বলেন, “কয়েক বছরে বনগাঁ শহর মাইক-চোঙার নগরীতে পরিণত হয়েছে। সরকারি নিয়ম না মেনেই চলে শব্দ তাণ্ডব। পুলিশ প্রশাসনের কাছে আবার আবেদন করব, যাতে সরকারি নিয়ম মেনে যেন মাইক বাজানোর ব্যবস্থা করা হয়।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনও অনুষ্ঠানের জন্য হয়তো প্রশাসনের তরফে ৬টি মাইকের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে তার থেকে অনেক বেশি মাইক বাধা হচ্ছে। তাছাড়া ৬৫ ডেসিবেলের বেশি স্বরে চোঙা বাজলেও তা মাপার মতো পরিকাঠামো নাকি পুলিশের নেই। অনেক সময় অনুমতি ছাড়াও চোঙা বাজানো হচ্ছে। শব্দদূষণ যে শহরের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে তা মানছেন পুলিশ কর্মীরাও। বনগাঁর এসডিপিও অশেষ বিক্রম দস্তিদার বলেন, “উচ্চস্বরে চোঙা বা সাউন্ড বক্সের আওয়াজ পেলে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ ব্যপারে মাইক ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, অনুমতি ছাড়া তাঁরা যেন চোঙা না বাধেন। বেআইনি ভাবে চোঙা বাজানো হলে পদক্ষেপ করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy