ভাটপাড়া পুরসভা
লোকসভা ভোটে ব্যারাকপুর আসন হাতছাড়া হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাটপাড়া পুরসভাও হাতছাড়া হয়েছিল তৃণমূলের। এই পুরসভার দখল নিয়ে গত সাত মাসে কার্যত দড়ি টানাটানি চলেছে তৃণমূল ও বিজেপির।
শেষ পর্যন্ত আজ, মঙ্গলবার নতুন পুরপ্রধান নির্বাচন হবে ভাটপাড়ায়। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে তলবি সভায় সপ্তাহদুয়েক আগে পুরপ্রধানের পদ থেকে অপসারিত হয়েছেন সৌরভ সিংহ। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ রয়েছে, নতুন চেয়ারম্যান কে হবেন তা নিয়ে। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বই পুরপ্রধানের নাম ঠিক করে দেবে।
এর জন্য পাঁচ দলের যে কমিটি তৈরি করা হয়েছিল, সেই কমিটি তিন জনের নাম রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পাঠিয়েছে। সেখান থেকে সোমবার রাতে এক জনের নাম চূড়ান্ত হয়ে আসবে দলের জেলা সভাপতি এবং জেলা পর্যবেক্ষকের কাছে। মঙ্গলবার সকালে খামবন্দি হয়ে তা পৌঁছবে পুরসভার সভাঘরে। হাইকোর্টের নির্দেশে জেলাশাসকের তদারকিতেই সেই সভা হওয়ার কথা।
তৃণমূল সূত্রে খবর, মদনমোহন ঘোষ, হিমাংশু সরকার এবং সত্যেন রায়ের নাম জমা পড়েছে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে। নাম বাছাই করেছেন জেলা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, পর্যবেক্ষক নির্মল ঘোষ, ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী, নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক এবং জগদ্দলের বিধায়ক পরশ দত্ত।
কেন এই তিন জনের নাম বেছে নেওয়া হল? তৃণমূলের এক নেতা জানান, পুরপ্রধান নির্বাচনের ক্ষেত্রে মূলত তিনটি বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। প্রবীণদের মধ্যে অন্যতম হিসেবে নাম রয়েছে মদনমোহন ঘোষের। প্রশাসনিক কাজ এবং সবদিক সামলে চলায় দক্ষ বলে নাম গিয়েছে হিমাংশু সরকারের। লোকসভা ভোটের ফর প্রকাশের পরে তৃণমূল কর্মীদের উপরে হামলা হয়েছিল। সেই সময়ে অনেকেই বিজেপিতে যোগ দিতে বাধ্য হন বলে অভিযোগ। সেই সময়েও সত্যেন মার খেয়েও দল বদল করেননি। তবে এই তিন জনের বাইরে আরও দু’-এক জনের নামও আলোচিত হচ্ছে তৃণমূলের অন্দরে।
জেলা তৃণমূলের এক বর্ষীয়ান নেতা বলেন, যারা হাজার প্রলোভন এবং হুমকিতেও দল ছাড়েননি তাঁদের কথা বিশেষভাবে ভাবা হয়েছে। তবে সেটাই একমাত্র বিবেচ্য নয় বলে জানান ওই নেতা। এখন খামবন্দি কার নাম আসে, তার জন্য অপেক্ষা করছেন কাউন্সিলরেরা।
অন্য একটি সূত্র জানাচ্ছে, পুরপ্রধান পদের জন্য বিদায়ী বোর্ডের উপ-পুরপ্রধান সোমনাথ তালুকদারের নামও রয়েছে। কিন্তু তিনি বিজেপি বোর্ডেরও উপ-পুরপ্রধান ছিলেন বলে দলের একটি অংশের আপত্তি রয়েছে তাঁর নাম নিয়ে। তবে, সোমনাথ ঘনিষ্ঠদের যুক্তি, এর আগে বিজেপির হাত থেকে যে পুরসভাগুলি তৃণমূল পুনর্দখল করেছিল, সেগুলির পুরপ্রধান এবং উপ-পুরপ্রধান পদে বদল হয়নি। তবে সেগুলিতে পুরপ্রধান-সহ কাউন্সিলরেরা তৃণমূলে ফেরায় পদাধিকারী বদল করতে হয়নি।
যদিও পুরপ্রধান নির্বাচন নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি তৃণমূলের কোনও নেতা-ই। জেলা নেতৃত্ব সব কাউন্সিলরকে নিয়ে একাধিকবার বৈঠক করেছেন। তাঁদের বলা হয় রাজ্য নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত সকলকেই মেনে নিতে হবে। পুররপ্রধান কে হল তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে গোলমাল করলে আখেরে অর্জুনদেরই লাভ হবে।
এক সময় স্থানীয় বিধায়কের পাশাপাশি ভাটপাড়ার পুরপ্রধানও ছিলেন অর্জুন সিংহ। কিন্তু তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় অনাস্থা এনে তাঁকে অপসারিত করেছিল তৃণমূল। কিন্তু পুরপ্রধান নির্বাচন তখন করা হয়নি। অর্জুন ব্যারাকপুরে জিতে সাংসদ হওয়ার পরে পুরসভাও বিজেপির দখলে এসে যায়। অর্জুনের ভাইপো সৌরভ পুরপ্রধান হন। দুর্গা পুজোর পরে ব্যারাকপুরে তৃণমূল পায়ের তলায় মাটি ফিরে পায়। হাতছাড়া হওয়া পুরসভা, বেদখল হওয়া পার্টি অফিস ফেরত পায় তারা।
ভাটপাড়াতেও পুরনো কাউন্সিলরদের সিংহভাগ তৃণমূলে ফেরেন। কিন্তু নিয়মের গেরোয় তারা ৬ ডিসেম্বরের আগে সৌরভের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে পারেনি। সৌরভ তলবি সভা ডাকলেও তার জন্য এক মাস সময় নেন। তাকে চ্যালেঞ্জ করে তলবি সভা ডেকে সৌরভকে অপসারিত করে তারা। বিজেপি আদালতের দ্বারস্থ হয়। হাইকোর্ট জেলাশাসকের তদারকিতে তলবি সভা করার নির্দেশ দেয়। ফের অপসারিত হন সৌরভ।
মাঝে সুপ্রিম কোর্টেরও দ্বারস্থও হয়েছিলেন অর্জুন। কিন্তু সেখান থেকে ইতিবাচক কোনও নির্দেশ আসেনি। সোমবার অর্জুন বলেন, ‘‘ওরা পুরপ্রধান নির্বাচন করুন, তার পরেই আমরা সুপ্রিম কোর্টে যাব। আমাদের কাগজপত্র সব
তৈরি আছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy