সরেজমিন: স্বনির্ভর গোষ্ঠীর তথ্য যাচাই কেন্দ্রীয় দলের। নিজস্ব চিত্র
কেন্দ্রীয় প্রকল্পের কাজ খতিয়ে দেখতে বুধবার কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল পৌঁছল দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমার জি-প্লট ও দক্ষিণ রায়পুর পঞ্চায়েত এলাকায়।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সকাল ১০টায় রামগঙ্গা বিডিও অফিস থেকে নদীপথে লঞ্চে করে দলটি প্রথমে যায় জি-প্লট পঞ্চায়েত এলাকায়। সেখানে প্রধান-সহ জেলা ও ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকদের নিয়ে দু’টি দলে ভাগ হয়ে কাজ শুরু হয়। একটি দল প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার তথ্য যাচাই করে। অন্য দলটি একশো দিনের কাজ, প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনা, নদীবাঁধ ও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব খতিয়ে দেখেন।
গ্রামবাসীদের কাছে প্রতিনিধিরা জানতে চান, একশো দিনের কাজে প্রতি দিন কত টাকা মজুরি মেলে। জি-প্লটের কৃষ্ণদাসপুর এলাকায় বৃক্ষরোপণ সাইন বোর্ডে নতুন করে কিছু লেখা হয়েছে বলে নজরে পড়ে প্রতিনিধি দলের এক সদস্যের। তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ব্লক প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, লেখাগুলি আবছা হয়ে গিয়েছিল, তাই নতুন করে কালি বোলানো হয়ছে।
কেন্দ্রীয় দলের প্রতিনিধিরা বিডিও রথীনচন্দ্র দে-র কাছে জানতে চান, কেন নির্দিষ্ট কয়েকটি জায়গা দেখানো হচ্ছে। কেন যেখানে দুর্নীতি হয়েছে, সেই সমস্ত জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না? বিডিও বলেন, ‘‘ঠিক আছে স্যর, আপনার কথা বুঝতে পেরেছি।’’ এ বিষয়ে বিডিও সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেননি। শুধু বলেন, ‘‘আপনারা যা দেখেছেন, তাই। এর বেশি কিছু আমি আর বলব না।’’ পরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। মোবাইল-বার্তার জবাব দেননি।
কৃষ্ণদাসপুর এলাকায় এক মহিলা কেন্দ্রীয় দলের আধিকারিককে জানান, গরিব পরিবারের হওয়া সত্ত্বেও তিনি আবাস যোজনায় ঘর পাননি। নিজের ভাঙাচোরা বাড়ি দেখার জন্য অনুরোধ করেন মহিলা। বিডিও বলেন, ‘‘আমি দেখে নেব কী সমস্যা আছে। এখানে আর দাঁড়াতে হবে না।’’ এরপরে এগিয়ে যান সকলে।
বেলা ১২টা নাগাদ দাসপুর জি-প্লট জুনিয়র হাইস্কুলে পৌঁছন প্রতিনিধিরা। ক্লাসে ঢুকে পড়া থামিয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের নিয়ে দীর্ঘক্ষণ হিসাব-নিকাশ খতিয়ে দেখেন তাঁরা।
দুর্গারানি দাস নামে এক মহিলা সেখানে এসে জানতে চান, আবাস যোজনার তালিকা থেকে কেন তাঁর নাম বাদ গিয়েছে। অভিযোগ, বিডিও তাঁকে আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলতে দেননি। নিরাশ হয়ে মহিলা ফিরে যান। দুর্গারানি পরে বলেন, ‘‘অভিযোগ করতে এলাম। কিন্তু বিডিও পৌঁছতেই দিলেন না আধিকারিকদের কাছে।’’
বেলা দেড়টা নাগাদ জি-প্লট পঞ্চায়েত অফিসে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের তথ্য যাচাই করেন প্রতিনিধিরা। কিছু তথ্যে অসঙ্গতি দেখে ‘সঠিক তথ্য’ দেখাতে বলেন তাঁরা।
বিকেল ৪টে নাগাদ দলটি দক্ষিণ রায়পুর পঞ্চায়েত এলাকায় পৌঁছয়। সেখানেও কাগজপত্র খতিয়ে দেখেন তাঁরা। কয়েকটি বাড়িতে গিয়ে তথ্য যাচাই করেন।
বিরোধীদের অভিযোগ, জি-প্লট পঞ্চায়েত এলাকায় তৃণমূলের দলীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বিডিও ঘুরে বেরিয়েছেন। তৃণমূলের লোকজন যেখানে যেখানে বলেছেন, সেই জায়গায় কেন্দ্রীয় দলকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাইকে ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ স্টিকার লাগিয়ে কেন্দ্রীয় দলের সঙ্গে ঘুরেছেন তৃণমূল কর্মীরা। তৃণমূল কর্মীদের বাড়িতেই কেন্দ্রীয় দলকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ বিরোধীদের।
পাথরপ্রতিমার বিজেপি নেতা প্রভাংশু তামলি বলেন, ‘‘নামেই কেন্দ্রীয় তদন্ত হয়েছে। এক দু’জায়গায় গিয়ে ফিরে এসেছেন ওঁরা। পঞ্চায়েত অফিসে বসে গোপন সমঝোতা করে ফিরে গিয়েছেন। এলাকার মানুষের অভিযোগ শোনেননি। বিডিও বাধা দিয়েছেন। সমস্ত বিষয় ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বকে জানাব।’’
পাথরপ্রতিমা ব্লক তৃণমূল সভাপতি হিমাংশু রাউত অবশ্য বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় দল দু’টি পঞ্চায়েত এলাকায় তদন্ত করে দেখেছে। তেমন কোনও সমস্যা খুঁজে পায়নি। বিরোধীরা অভিযোগ জানাতে এসেছিল। তাঁদের অভিযোগ মিথ্যা হওয়ায় ফিরে যেতে হয়েছে।’’
কেন্দ্রীয় দলের সঙ্গে কি তৃণমূলের লোকজন ঘুরেছেন?
হিমাংশু বলেন, ‘‘মিথ্যা অভিযোগ। আমাদের কোনও নেতা ওখানে ছিলেন না।’’
জি-প্লট পঞ্চায়েতের প্রধান অরুমিতা জানা বলেন, ‘‘বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের কাজ ওঁরা খতিয়ে দেখেছেন। আমি নিজে একটি দলে ছিলাম। বার্ধক্য ও বিধবা ভাতার তথ্য যাচাই করেছেন ওঁরা। তবে কোনও অসঙ্গতি পাননি। আবাস যোজনার তথ্যেও কোনও অভিযোগ পাননি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy