হাঁসফাঁস: এমন দৃশ্য দেখা যায় দিনের বহু সময়ে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
দশ মিনিটের পথ পেরোতে লেগে যাচ্ছে বিশ মিনিট। মিস হচ্ছে ট্রেন। ছুটতে ছুটতে ক্লাসে ঢুকে হাঁফাচ্ছে ছাত্রছাত্রীরা। অফিস কাছারিতে নিত্যদিনের অজুহাত দিতে হচ্ছে বসকে, ‘‘স্যার, আজ আবার জ্যামে ফেঁসে গিয়েছিলাম। একটু দেরি হয়ে গেল!’’
বনগাঁ শহরে যানজট এখন একটা বড় মাথা ব্যথার কারণ হয়েছে বাসিন্দাদের। শহরের রং-ঢং এখন অনেক বদলেছে। কিন্তু দিন দিন গাড়ির বহর বেড়ে চলায় যানজটের সমস্যা আর পিছু ছাড়ছে না শহরকে। ফের আসছে পুরভোট। ক্ষমতাই যে-ই আসুক, এই সমস্যার কি সমাধান করতে পারবে— প্রশ্ন ঘুরছে লোকের মুখে মুখে।
সরু রাস্তা, ফুটপাত না থাকা, বিকল্প রাস্তা না থাকা— আলোচনায় উঠে আসছে রোগের নানা কারণের কথা। তা ছাড়া, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শহরের মধ্যে দিয়ে সীমান্ত-বাণিজ্যের ট্রাক যাতায়াত করে। শহরের মধ্যে ট্রাক চলাচলের নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকলে বাস্তবে সেই নিয়ম মানা হয় না বলে অভিযোগ। অনেকেই জানালেন, ট্রাক বা বড় যানবাহন শহরের রাস্তায় ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকে। এর ফলে রাস্তা আরও সরু হয়ে যায়। রাস্তার পাশে পেট্রল পাম্প রয়েছে। ট্রাক বা বড় যানবাহনগুলি পাম্পে ঢোকা-বেরনোর মুখেও যানজট বাড়ায়। শহরবাসীর অভিজ্ঞতা, সাম্প্রতিক সময়ে শহরে বেড়েছে লাগাম ছাড়া ভ্যান, অটো ও টোটোর দৌরাত্ম্য। ছোট শহরে এর ফলে রাস্তা দিয়ে আর যাতায়াত করা যাচ্ছে না। পুরসভার তরফে ভ্যান, অটো, টোটো নিয়ন্ত্রণে কোনও পদক্ষেপ করা হয় না বলে অভিযোগ।
শহরে বিভিন্ন রাস্তায় চোখ রাখলেই দেখা যাবে রাস্তার পাশে ইমারতি মালপত্র পড়ে। অভিযোগ, পুরসভা বা প্রশাসনের তরফে ওই বিষয়ে লক্ষ্য রাখা হয় না। সকালের দিকে যশোর রোডের যানজট থেকে মুক্তি পেতে যানচালক পথচারীরা শহরের ছোট রাস্তা ব্যবহার করেন। এর ফলে শহরের ছোট খাটো রাস্তা দিয়েও স্বাভাবিক ভাবে যাতায়াত করা যাচ্ছে না। একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সুপর্ণা ঘোষ রায় বলেন, ‘‘সকালে স্কুল টাইমে যশোর রোডে ভয়াবহ যানজটের মধ্যে পড়তে হয়। শহরের বড় বড় রাস্তায় ট্রাক, যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকায় যানজট বাড়ছে। নির্দিষ্ট নিয়ম থাকলেও সকালের দিকে শহরের রাস্তায় ট্রাক চলাচল করছে।
বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল থেকে রোগী নিয়ে যশোর রোড ধরে কলকাতার দিকে যাওয়ার সময়ে অ্যাম্বুল্যান্সও কোনও কোনও সময়ে আটকে পড়ে। আবার মহকুমার বিভিন্ন এলাকা থেকে গাড়ি করে রোগী নিয়ে মহকুমা হাসপাতালে আসা যাওয়ার পথে গাড়ি আটকে পড়ে।
পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় রাখালদাস সেতু থেকে ১ নম্বর রেলগেট পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ পেরোতে দিনের ব্যস্ত সময়ে ৩০ মিনিটও লেগে যায়। এই পথেই আছে স্কুল ব্যাঙ্ক, শপিং মল, হোটেল, বাসস্ট্যান্ড, পেট্রল পাম্প ও নানা সরকারি অফিস। শহরে যশোর রোডে প্রস্তাবিত রেলসেতুর কাজ নানা জটিলতায় আটকে রয়েছে।
অতীতে বনগাঁ পুরসভার তরফে শহরের বাইরে থেকে আসা ভ্যান চলাচলের উপরে নিয়ন্ত্রণ রেখেছিল। বলা হয়েছিল, বাইরে থেকে আসা ভ্যান চালকেরা যাত্রী নিয়ে শহরে আসতে পারবেন, কিন্তু যাত্রী নামিয়ে ফিরে যেতে হবে। ধরপাকড় চলেছিল। শহরবাসীর বক্তব্য, সে সময়ে ভ্যানের দাপট কমেছিল। এখন ওই নজরদারি নেই পুরসভার। ভ্যান চালকেরাও বাইরে থেকে যাত্রী নিয়ে সারা দিন শহরে এসে ভাড়া খাটছেন।
যানজট সমস্যা মেটাতে পুরসভার তরফে বেশ কিছু পদক্ষেপ ইতিমধ্যে করা হয়েছে। যশোর রোডে বেআইনি যানবাহন রাখা বন্ধ করতে তৈরি করা হয়েছে নির্দিষ্ট পার্কিং। স্থানীয় হীরালাল মূর্তি এলাকায় পাকিং তৈরি করা হয়েছে। আগে শহরের রাস্তার উপরে বাস দাঁড়িয়ে থাকত। মতিগঞ্জ এলাকায় বাস টার্মিনাল তৈরি করা হয়েছে। বাস এখন আর রাস্তায় দাঁড়ায় না। গাঁধীপল্লি এলাকায় সেন্ট্রাল বাস টার্মিনাস তৈরির কাজ চলছে। ১ নম্বর রেলগেট থেকে ২ নম্বর রেলগেট এলাকা পর্যন্ত চওড়া বাইপাস রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। আরও কিছু রাস্তা চওড়া করা হয়েছে।
বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক, সিপিএমের পঙ্কজ ঘোষ বলেন, ‘‘যানজট সমস্যা সার্বিক ভাবে মেটাতে পরিকাঠামো তৈরি করতে পারেনি পুরসভা। রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করে যানজট সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। যশোর রোডের বিকল্প রাস্তা তৈরি করা যায়নি। কেন্দ্রের কাছে আমরা দাবি করেছিলাম, পেট্রাপোল বন্দর থেকে আয়ের থেকে ১০ শতাংশ বনগাঁর উন্নয়নে দেওয়া হোক। পরবর্তী সময়ে সেই সুপারিশ আর করা হয়নি।’’ বিজেপির বনগাঁ উত্তর পৌর মণ্ডলের সভাপতি শোভন বৈদ্য বলেন, ‘‘যানজট সমস্যা ভয়ঙ্কর আকার নিয়েছে। পুরসভা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। সুষ্ঠু পরিকল্পনা করতে পারেনি। লাগাম ছাড়া টোটো চলছে।’’ পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য সমস্যার কথা মেনে নিয়ে বলেন, ‘‘সমস্যাটা দীর্ঘ দিনের। আমরা বিকল্প রাস্তা করেছি। অনেক রাস্তা চওড়া করেছি। আলাদা পার্কিং করা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময় মেনে ট্রাক চলছে। সমস্যার অনেক উন্নতি হয়েছে। বেআইনি ভ্যান, টোটো চলাচল বন্ধ করতে পুলিশ-প্রশাসনকে বলা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy