বিলি করা হচ্ছে পেঁপের চারা। নিজস্ব চিত্র ।
কাজটা সামান্যই। পেঁপে গাছের চারা বিলি। কিন্তু সেই কাজকে সামনে রেখে শুক্রবার কিছুটা ভিন্ন দৃশ্যের সাক্ষী থাকল ভাঙড় ২ পঞ্চায়েত সমিতি। তৃণমূল এবং আইএসএফ নেতাদের দেখা গেল সরকারি কাজে একই সঙ্গে সামিল হতে। এক সঙ্গে বসে গল্পগুজব করলেন তাঁরা। পাশাপাশি বসে চা খেলেন দু’পক্ষের নেতারা।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকে শাসক তৃণমূল ও বিরোধী আইএসএফের সঙ্গে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বার বার উত্তপ্ত হয়েছে ভাঙড়। বোমা-গুলির লড়াইয়ে উভয়পক্ষের সাত জনের মৃত্যু ঘটে। দিন কয়েক আগে পর্যন্ত আইএসএফ বার বার অভিযোগ করছিল, গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে বিরোধীদের অন্ধকারে রেখে একতরফা ভাবে শাসক দল সব কিছু করছে। শুধু তাই নয়, পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী সমিতির বৈঠকেও বিরোধীদের বক্তব্য শোনা হচ্ছিল না বলে অভিযোগ ওঠে। সরকারি প্রকল্পের কোথায় কী কাজ হবে, সরকারি সুযোগ-সুবিধা কী ভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে— সে সব নিয়েও বিরোধীদের মতামত নেওয়া হচ্ছিল না বলে অভিযোগ ছিল।
এই পঞ্চায়েত সমিতির ৩০ সদস্যের মধ্যে তৃণমূলের ২২ জন, আইএসএফের ৫ জন ও জমি কমিটির তিন সদস্য রয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ভাঙড় ২ পঞ্চায়েত সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভায় বিরোধী দলের বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকীকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তাঁর মতামত নেওয়া হয়নি বলে দাবি করে আইএসএফ। পরে এ নিয়ে বিধায়কের নেতৃত্বে বিডিওর চেম্বারের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভে বসে আইএসএফ ও জমি কমিটি।
এ দিন ব্লক অফিসে গিয়ে দেখা গেল, সম্পূর্ণ অন্য ছবি। পঞ্চায়েত সমিতির সদর দফতরে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য খয়রুল ইসলাম ও আইএসএফের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য ওহিদুল ইসলাম এক সঙ্গে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন। পরে সরকারি ভাবে পেঁপের চারা উপভোক্তাদের হাতে তুলে দেন উভয় দলের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যেরা। পুরো বিষয়টির তদারকি করতে দেখা গেল আইএসএফের জেলা পরিষদ সদস্য রাইনুর হককে।
হঠাৎ কী করে বদলে গেল যুযুধান দু’পক্ষের মনোভাব? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল নেতার ব্যাখ্যা, ‘‘পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আরাবুল ইসলাম গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে এমনিতে সকলে চাপে আছে। নতুন করে আর কোনও ঝামেলা যাতে না হয়, সে জন্য সকলেই সতর্ক।’’
ভাঙড় ২ পঞ্চায়েত সমিতির সহকারী সভাপতি সোনালি বাছাড় বলেন, ‘‘কৃষি দফতরের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষের জন্য পেঁপের চারা গাছ দেওয়া হয়। যাতে কোনও ভাবেই বিতর্ক বা ঝামেলা না হয়, সে কারণে চারা গাছ উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে বণ্টন করা হয়েছে। সব কিছু সুষ্ঠু ভাবে হয়েছে।’’ রাইনুর বলেন, ‘‘আমরা যাঁরা জনপ্রতিনিধি, তাঁদের দায়িত্ব সরকারি পরিষেবা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। আমরা তা না পারলে মানুষ আমাদের ক্ষমা করবেন না। প্রথম দিকে শাসক দল আমাদের অন্ধকারে রেখে সব কিছু করছিল। এই নিয়ে আমরা আন্দোলন করি। এখন উভয়পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে সরকারি সুযোগ-সুবিধা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। আমরা চাই, এ ভাবেই সমস্ত রাজনৈতিক দল মিলেমিশে এলাকার মানুষের জন্য কাজ করুক।’’
এ দিন ব্লক এলাকার তিন জেলা পরিষদ সদস্য পিছু এক হাজার, পঞ্চায়েত সমিতির ৩০ জন সদস্য পিছু ২৫০ এবং ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েত পিছু ৮০০ করে চারা গাছ দেওয়া হয়েছে। ভাঙড় ২ বিডিও পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এলাকার উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনও রাজনৈতিক রং দেখা উচিত নয়। সমস্ত জনপ্রতিনিধিরা যাতে সরকারি সুযোগ-সুবিধা সমান ভাবে বণ্টন করতে পারেন, সেই চেষ্টা
করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy