Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
নাগরিকত্ব আইন নিয়ে চিঠির তোড়জোড়
শান্তনু ঠাকুর

মতুয়া ভক্তদের কী উত্তর দেব, বলছেন শান্তনু

শান্তনু নিজে অবশ্য বলছেন, ‘‘ন’মাস হয়ে গিয়েছে লোকসভা-রাজ্যসভায় পাশ হয়ে নাগরিকত্ব আইন তৈরি হয়েছে।

বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর

বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর

সীমান্ত মৈত্র 
গাইঘাটা শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২০ ০৩:৪৭
Share: Save:

নাগরিকত্ব আইন প্রণয়ন হওয়ার পরে মতুয়ারা বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরকে নিয়ে এলাকায় ‘বিজয় মিছিল’ করেছিলেন। সংসদে নাগরিকত্ব আইন পাশ হওয়ার পিছনে তাঁর ভূমিকা আছে বলে মানেন মতুয়া ভক্তদের অনেকেই। কিন্তু আইন পাশ হলেও কবে তা এ রাজ্যে কার্যকর হবে, তা নিয়ে স্পষ্ট ঘোষণা নেই কেন্দ্রের তরফে।
এই পরিস্থিতিতে অস্বস্তিতে পড়েছেন বলে জানাচ্ছেন শান্তনু। নাগরিকত্ব আইন দ্রুত প্রণয়নের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লেখার তোড়জোড় করছেন।
তবে দলের একটি সূত্রের খবর, এই উদ্যোগ যত না মতুয়াদের স্বার্থে, তার থেকেও বেশি, দলে নিজের গুরুত্ব বাড়ানোর চেষ্টা। শান্তনু নিজে অবশ্য বলছেন, ‘‘ন’মাস হয়ে গিয়েছে লোকসভা-রাজ্যসভায় পাশ হয়ে নাগরিকত্ব আইন তৈরি হয়েছে। কিন্তু আইন এখনও কার্যকর হয়নি। যা নিয়ে মতুয়ারা আমায় প্রশ্ন করছেন। উত্তর দিতে না পেরে আমাকে নির্বাক থাকতে হচ্ছে। আমি দোটানায় পড়ে গিয়েছি।’’ মঙ্গলবারই বিজেপি নেতা তথাগত রায় ঘুরে গিয়েছেন ঠাকুনরগরের ঠাকুরবাড়ি থেকে। আলোচনা করেছেন শান্তনুর সঙ্গে। দীর্ঘ দিন ধরেই মতুয়াদের সঙ্গে সুসম্পর্ক আছে তথাগতর। শান্তনুর ‘মন বুঝতে’ দলের তরফে তাঁকে পাঠানো হয়েছিল বলে মনে করছে বিজেপি জেলা নেতৃত্বের একটি অংশ। ইদানীং বিজেপির রাজ্য ও জেলা নেতৃত্বের একাংশের সঙ্গে শান্তনু ঠাকুরের সম্পর্কে কিছুটা শৈত্য দেখতে পান দলের নেতা-কর্মীদের অনেকে। রাজ্য নেতৃত্বের একাংশ শান্তনুকে কোণঠাসা করতে চাইছেন বলে মনে করেন শান্তনুর অনুগামীরাও। মতুয়া ভোটব্যাঙ্কের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের ভোটে লোকসভায় জয়ী হয়ে আসা শান্তনু বিধানসভা ভোটে আসন নিয়ে দর কষাকষির জায়গায় যাতে না থাকতে পারেন, সে জন্যই তাঁকে কোণঠাসা করার চক্রান্ত চলছে বলে মনে করেন শান্তনু-ঘনিষ্ঠ মতুয়াদের একটি অংশ। সম্প্রতি দলের অন্দরে কানাঘুষো শুরু হয়েছিল, শান্তনুকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করা হতে পারে। কিন্তু কেন্দ্র তরফে তেমন কোনও ইঙ্গিত পরবর্তী সময়ে পাওয়া যায়নি।
এই পরিস্থিতিতে নাগরিকত্ব আইন প্রণয়নের দাবিকে উসকে দিয়ে শান্তনু দলে নিজের গুরুত্ব বাড়াতে চাইছেন বলে মনে করছেন দলের অনেকে। এর ফলে মতুয়াদের কাছে নিজের ভাবমূর্তি ধরে রাখতেও সুবিধা হবে তাঁর।
শান্তনু নিজে অবশ্য বলছেন, ‘‘দলের সঙ্গে আমার দূরত্ব বাড়েনি।’’ পাশাপাশি তাঁর সংযোজন, ‘‘নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করা নিয়ে রাজ্য নেতৃত্ব মুখই খুলছেন না। সে ক্ষেত্রে মতুয়ারাই আগামী দিনে নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরা নেবেন।’’
তবে বিজেপির একাংশের বক্তব্য, নাগরিকত্ব আইন প্রণয়নের জন্য মতুয়া সমাজের একাংশের চাপ আছে শান্তনুর উপরে। সাংসদ শান্তনু অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি। ও পার বাংলা থেকে আসা উদ্বাস্তু মানুষের নাগরিকত্বের দাবি নিয়ে মতুয়ারা দীর্ঘ দিন ধরেই আন্দোলন করে আসছেন। তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েই শান্তনু লোকসভা ভোটে দাঁড়িয়ে মতুয়াদের একটা বড় অংশের সমর্থন পেয়েছেন। কিন্তু সরকারি ভাবে তাঁদের নাগরিকত্ব ঘোষণা না হওয়ায় মতুয়া সমাজের একাংশ হতাশ। তাঁরা শান্তনু-সহ মতুয়া মহাসঙ্ঘের কর্মকর্তাদের কাছে প্রশ্ন করছেন, কবে আইন কার্যকর করা হবে। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এই পরিস্থিতিতে নাগরিকত্ব আইন নিয়ে মুখ খুলতেই হত শান্তনুকে। রাজ্যের প্রায় ৭৪টি বিধানসভা এলাকায় মতুয়া ভোট নির্ণায়ক ভূমিকা নিয়ে থাকে বলে মনে করেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা। সেই মতুয়াদের সঙ্ঘাধিপতি শান্তনুর কথায়, ‘‘রাজনীতির আগে আমার কাছে মতুয়া সমাজ। উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমাকে ভোটে দাঁড় করানো হয়েছিল। বিধানসভা ভোটে বিজেপির হয়ে ভোট চাইতে গেলে নাগরিকত্ব নিয়ে কী বলব আমি?’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy