নিশান হাতে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন মতুয়া ভক্তেরা। ছবি: সুজিত দুয়ারি
মতুয়াদের আরাধ্য দেবতা হরিচাঁদ ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের নাম মুখ্যমন্ত্রী ইচ্ছাকৃত ভাবে ভুল উচ্চারণ করেছেন বলে বুধবার অভিযোগ তুলেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুর। মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়ার দাবিও জানান তিনি। পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই বিষয়টিকে হাতিয়ার করে আসরে নেমে পড়ল বিজেপি নেতৃত্ব।
শুক্রবার একাধিক জায়গায় মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিবাদে মতুয়া ভক্তরা বিক্ষোভ দেখান। সবক’টি কর্মসূচিতেই দেখা গিয়েছে বিজেপি নেতা-কর্মীদের।রাজনৈতিক মহলের মতে, বিজেপি কৌশলে মতুয়াদের ক্ষোভকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে চাইছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানান, গত লোকসভা ও বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপি নেতৃত্ব মতুয়া উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সিএএ কার্যকর করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। ভোটে বিজেপি তার সুফল পেয়েছিল। কিন্তু আজও সিএএ এ রাজ্যে কার্যকর না হওয়াতে মতুয়াদের অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েছেন। তাঁরা বিজেপির উপর ভরসা হারাতে শুরু করেছেন। পাশাপাশি যারা ভোট দেন, তারাই নাগরিক বলে বারবার দাবি করে আসছে তৃণমূল। নতুন করে নাগরিকত্ব নেওয়ার প্রয়োজন নেই বলেও প্রচার করছেন তৃণমূল নেতারা। মতুয়াদের একাংশ তৃণমূলের এই অবস্থানের সঙ্গে এক মত। মতুয়াদের মধ্যে এই ফাটল মেরামত করতে বিজেপির হাতিয়ার এখন মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য।এ দিন গাইঘাটার চাঁদপাড়া বাজার, হাবড়ার ফুলতলা, বাগদার হেলেঞ্চা এবং গোপালনগরের ভান্ডারখোলা এলাকায় মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ চলে। বিক্ষোভকারীরা জানান, আরাধ্য দেবতাদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে তাঁরা ব্যথিত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হরিচাঁদ ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের নাম জানেন না, এটা তাঁরা মানতে পারছেন না।চাঁদপাড়া এলাকায় এ দিন মতুয়া ভক্তরা ডাঙ্কা-কাঁসি নিশান নিয়ে যশোর রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি রামপদ দাস এবং বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক স্বপন মজুমদার। যদিও কর্মসূচিতে বিজেপির দলীয় পতাকা ছিল না। স্বপন মতুয়াদের উদ্দেশে বলেন, “লাঠি, ডাঙ্কা, কাঁসি নিয়ে আপনারা তৈরি থাকবেন। তৃণমূলের কেউ ভোট চাইতে এলে মুখে তুলে মারবেন। যাতে তারা আর মুখ দিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করতে না পারেন।” তাঁর দাবি, “মুখ্যমন্ত্রী মতুয়াদের আরাধ্য দেবতা ও মতুয়া সমাজের মানুষকে অপমান করেছেন। তাঁকে আমরা ধিক্কার জানাচ্ছি। তাঁকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীর মতিভ্রম হয়েছে। চিকিৎসা প্রয়োজন। তিনি মতুয়াদের গরু ছাগল মনে করেন। মতুয়াদের কেবল ভোট বাক্সে ব্যবহার করছেন।” এ বিষয়ে বনগাঁর প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ মমতা ঠাকুর বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী ইচ্ছাকৃত ভাবে হরিচাঁদ ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের নাম ভুল উচ্চারণ করেননি। অনেক সময় ভাষণ দিতে গিয়ে ভুলবশত শব্দ বেরিয়ে যায়।”তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, মতুয়া ঠাকুরবাড়ির সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। তিনি রেলমন্ত্রী থাকার সময় থেকে কয়েকবার মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে এসেছেন। মতুয়াদের প্রয়াত বড়মা বীণাপানি ঠাকুরের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সুসম্পর্ক ছিল। বড়মাকে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বঙ্গবিভূষণে সম্মানিত করা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী ঠাকুরনগরে এসে সেই সম্মান তুলে দিয়েছিলেন বড়মার হাতে। তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “মতুয়াদের দিয়ে বিজেপির এই পরিকল্পিত সড়ক অবরোধ বিক্ষোভ ভোট বাক্সে প্রভাব ফেলবে না। কারণ মতুয়ারা জানেন স্বাধীনতার পর একমাত্র মুখ্যমন্ত্রীই মতুয়াদের এবং ঠাকুরবাড়ির উন্নয়ন করেছেন। মতুয়া উন্নয়ন পর্ষদ গঠন করেছেন। মতুয়াদের তিনি ভালবাসেন।” বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “শান্তনু ঠাকুর ও বিজেপির মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। বিজেপি ও শান্তনুর কাছ থেকে মতুয়া ভোট চলে গিয়েছে। তাই অবান্তর কথাবার্তা বলছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy