—প্রতীকী চিত্র।
গত কয়েক বছর ধরে তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি হয়ে উঠেছে হাবড়া ২ ব্লক। গত পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল ব্লকের ৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতে জয়ী হয়। পঞ্চায়েত সমিতির এবং জেলা পরিষদের সব ক’টি আসনে জয়ী হয়েছিল শাসক দল।
২০১১ সাল থেকে এখানে তৃণমূলের জয়জয়কার শুরু হয়। এলাকাটি অশোকনগর বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। ২০১১ সাল থেকে লোকসভা বা বিধানসভা সব ভোটে তৃণমূল জয়ী হয়েছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, তৃণমূলের সাফল্য পিছনে আছে সংখ্যালঘু মানুষদের সমর্থন এবং শক্তিশালী বুথভিত্তিক সংগঠন। তবে রাজনৈতিক মহল মনে করছেন, গোষ্ঠীকোন্দল এ বার তৃণমূলকে ভোগাতে পারে। পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলাপরিষদের সব আসনে তৃণমূল এখানে প্রার্থী দিয়েছে। তৃণমূলের অশোকনগরের বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী বলেন, "আমাদের এখানে দলের গোঁজ প্রার্থী দাঁড়ানোর সমস্যা নেই। মনোনয়ন জমা পর্বে কোনও গোলমাল হয়নি। আমি নিজে বিডিও অফিসে গিয়ে বিরোধী প্রার্থীদের হাতে গোলাপ তুলে দিয়েছি। এখানে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ভোট হবে।"
পঞ্চায়েত ভোটে হাবড়া ২ ব্লক এলাকায় গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে অর্ধেকের বেশি আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি বিজেপি। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, হাবড়া ২ ব্লকে ৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতে মোট আসন ১৭৩টি। বিজেপি প্রার্থী দিয়েছে ৭৩টি আসনে। পঞ্চায়েত সমিতির ২৩টি আসনের মধ্যে বিজেপি প্রার্থী দিতে পেরেছে ১৫টিতে। জেলা পরিষদের ৩টি আসনেই অবশ্য বিজেপি প্রার্থী দিয়েছে (গত বার আসন ছিল ২টি)। গ্রাম পঞ্চায়েতের ৬টি আসনে ইতিমধ্যেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে তৃণমূল।
গ্রাম পঞ্চায়েতে অর্ধেকেরও কম আসনে প্রার্থী দেওয়ার কারণ কী?
স্থানীয় রাজনৈতিক মহল মনে করছে, সাংগঠনিক ভাবে হাবড়া ২ ব্লকে বিজেপি শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারেনি। বিশেষ করে ওই ব্লকের সংখ্যালঘু এলাকায় বিজেপির সংগঠন খুবই দুর্বল। পাশাপাশি, গোষ্ঠীকোন্দল এখানে বিজেপিকে ভোগাচ্ছে।
অশোকনগরে অনেক বছর ধরেই বিজেপির কিছু জনভিত্তি ছিল। ১৯৯৯ সালে বিধানসভার উপনির্বাচনে অশোকনগর থেকে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী বাদল ভট্টাচার্য। তখন অবশ্য তিনি তৃণমূলের জোটের প্রার্থী ছিলেন। বাদলই রাজ্যের বিজেপির প্রথম বিধায়ক ছিলেন। গত লোকসভা ভোটে বিজেপি ভাল ফল করেছিল এখানে। বামেদের সরিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে তারা।
তবে লোকসভা ভোটে এই বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়েছিল তৃণমূল। তৃণমূল পেয়েছিল ৯২,৭৪৯টি ভোট। বিজেপি পেয়েছিল ৭৯,৪১৮টি ভোট। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটেও বিজেপি এখানে দ্বিতীয় হয়েছিল। বিজেপি প্রার্থী তনুজা চক্রবর্তী পেয়েছিলেন, ৭০০৫৫টি ভোট। জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী নারায়ণ গোস্বামী। তিনি পেয়েছিলেন ৯৩,৫৮৭টি ভোট।লোকসভা ভোটের পর থেকে বিজেপির এখানে সাংগঠনিক ভাবে শক্তি বৃদ্ধি হয়েছিল। তারপরেও কেন পঞ্চায়েতে সব আসনে প্রার্থী দেওয়া গেল না?
বিজেপির অশোকনগর গ্রামীণ মণ্ডলের সভাপতি দিলীপ বৈদ্য বলেন, "এই ব্লকে বেশ কিছু সংখ্যালঘু এলাকা আছে। সেই সব এলাকায় সাংগঠনিক ভাবে আমরা কিছুটা দুর্বল। তা ছাড়া, গত বিধানসভা ভোটের পর আমাদের কর্মীদের উপরে অত্যাচার নেমে আসে। মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়। ফলে অনেক কর্মী এখনও সামনে এসে রাজনীতি করার সাহস পাচ্ছেন না। শাসক দলের সন্ত্রাসের কারণ অনেক জায়গায় আমরা প্রার্থী দিতে পারিনি।"
২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে অশোকনগর কেন্দ্র থেকে বামেদের সমর্থন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল আইএসএফ। ৪৫,৭৯৫টি ভোট পেয়ে আইএসএফ প্রার্থী তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় তৃতীয় হয়েছিলেন। সংখ্যালঘু এলাকায় আইএসএফের প্রভাব রয়েছে। এ বার হাবড়া ২ ব্লকে গ্রাম পঞ্চায়েতে তারা ৪৮টি আসনে এবং পঞ্চায়েত সমিতির একটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। জেলা পরিষদের আসনে কোনও প্রার্থী দেয়নি।
এত কম আসনে প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে আইএসএফের রাজ্যের সহ সভাপতি তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "গ্রাম পঞ্চায়েতের ৪৮টি আসনে আমরা প্রার্থী দিয়েছি এবং আরও ৭ জন নির্দলকে আমরা সমর্থন করেছি। সিপিএমের সঙ্গে আমাদের আসন সমঝোতা হয়েছে। না হলে আমরা একশোর বেশি আসনে প্রার্থী দিতে পারতাম।"
বাম আমলে অশোকনগর সিপিএম তথা বামেদের শক্ত ঘাঁটি ছিল। বিধানসভা পুরসভা পঞ্চায়েত সমিতি, পঞ্চায়েত সব কিছু সিপিএমের দখলে ছিল। এরই মধ্যে অবশ্য ২০০৯ সালের ভোটে পঞ্চায়েত সমিতি দখল করেছিল তৃণমূল। তবে ২০১১ সালে রাজ্যে রাজনৈতিক পালা বদলের পর থেকে এখানে বামেদের রক্তক্ষরণ শুরু হয়। সাংগঠনিক ভাবে সিপিএম দুর্বল হতে থাকে। গত পঞ্চায়েত ভোটে একটিও পঞ্চায়েত দখল করতে পারেনি সিপিএম। তবে আমপান ও করোনা পরিস্থিতিতে বামেরা জনসংযোগ বাড়িয়ে নিয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে গরিব মানুষদের রান্না করা খাবার তুলে দেওয়া হয়েছে। বিনামূল্যে আউটডোর চিকিৎসা পরিষেবা চালু করা হয়েছে। জলমগ্ন এলাকায় ওষুধ, খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন বাম কর্মী-সমর্থকেরা। এ সবের সুফল মিলছে বলে দাবি দলের নেতাদের। ইদানীং সিপিএমের মিটিং-মিছিলে ভিড়ও চোখে পড়ছে। তরুণ প্রজন্মকেও আসতে দেখা যাচ্ছে। যা আশা জাগাচ্ছে সিপিএম নেতৃত্বকে।
যদিও এ বার সব আসনে সিপিএম বা বামেরা প্রার্থী দিতে পারেনি। আইএসএফের সঙ্গে জোটের কথা প্রকাশ্যে সিপিএম নেতৃত্ব এড়িয়ে যাচ্ছেন। এ বার সিপিএম গ্রাম পঞ্চায়েতে ৯৪টি, পঞ্চায়েত সমিতিতে ২১টি এবং জেলা পরিষদের ৩টি আসনে প্রার্থীদিয়েছে।
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সত্যসেবী কর বলেন, "আমাদের প্রার্থীদের অপহরণ করে, বন্দুক দিয়ে ভয় দেখিয়ে মনোনয়ন তুলতে কিছু জায়গায় বাধ্য করা হয়েছে। বাকিটা আমরা প্রতিরোধ করে ঠেকাতে পেরেছি।"
কংগ্রেস গ্রাম পঞ্চায়েত ১৪টি, পঞ্চায়েত সমিতিতে ৫টি এবং জেলা পরিষদ একটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। যুব কংগ্রেস নেতা সুখেন সরকার বলেন, "সাংগঠনিক ভাবে এখানে আমরা দুর্বল, এ কথা ঠিক। তবে শাসক দলের সন্ত্রাস না হলে আমরা কিছু আসনে প্রার্থী দিতে পারতাম।"
সন্ত্রাসের অভিযোগ প্রসঙ্গে বিধায়ক নারায়ণ বলেন, "বিরোধীদের সাংগঠনিক দৈন্যদশা ঢাকতে তৃণমূলের উপরে মিথ্যা অভিযোগ করছে। মানুষ বুঝেছেন, বিরোধীরা টিভির পর্দায় মুখ দেখানোর পার্টি। আর তৃণমূল হল মানুষের দল।"
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy