Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

বন্ধ বাড়িতে প্রসব, কমছে শিশুমৃত্যু 

স্বাস্থ্য দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ব্লকের ১৫টি পঞ্চায়েতের মধ্যে নদী ও জঙ্গলে ঘেরা পঞ্চায়েত রয়েছে ১০টি। ওই দশটি পঞ্চায়েত হল গোপালনগর দূর্বাচটি, ব্রজবল্লভপুর, হেরম্ব গোপালপুর, লক্ষ্মীজনার্দনপুর, অচিন্ত্যনগর, বনশ্যামনগর ও পাথরপ্রতিমা পঞ্চায়েতের একাংশ।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

দিলীপ নস্কর
পাথরপ্রতিমা শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:৪৬
Share: Save:

নদী ও জঙ্গলে ঘেরা পাথরপ্রতিমা ব্লকের বিভিন্ন পঞ্চায়েত রয়েছে। এক সময় প্রসূতিকে হাসপাতালে নিয়ে হলে একাধিক নদী পেরিয়ে তবেই পৌঁছতে হত। অনেক সময় নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পথের মাঝেই দুর্ঘটনা ঘটে যেত। এই সমস্যা সমাধানের উদ্যোগী হয়েছে পাথরপ্রতিমা ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্র। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মধ্যেই তৈরি হয়েছে মহিলা হাব। এখন আর প্রসব বেদনা উঠলে দিনের দিন নয়, ১০ দিন আগেই থেকেই হাবে এসে আশ্রয় নিচ্ছেন প্রসূতিরা।

স্বাস্থ্য দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ব্লকের ১৫টি পঞ্চায়েতের মধ্যে নদী ও জঙ্গলে ঘেরা পঞ্চায়েত রয়েছে ১০টি। ওই দশটি পঞ্চায়েত হল গোপালনগর দূর্বাচটি, ব্রজবল্লভপুর, হেরম্ব গোপালপুর, লক্ষ্মীজনার্দনপুর, অচিন্ত্যনগর, বনশ্যামনগর ও পাথরপ্রতিমা পঞ্চায়েতের একাংশ। ওই পঞ্চায়েতগুলিতে কোথাও কোথাও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকলেও যথেষ্ট পরিষেবার ব্যবস্থা নেই বলে এমনটাই দাবি বাসিন্দাদের। ফলে রাতবিরেতে কারও প্রসব বেদনা উঠলে তড়িঘড়ি পাথরপ্রতিমা গ্রামীণ হাসপাতাল নিয়ে যেতে কয়েক ঘন্টা সময় লাগবে। এমন কয়েকটি পঞ্চায়েত রয়েছে যেখানের বাসিন্দাদের একাধিক নদী পার হয়ে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে গ্রামীণ হাসপাতালে পৌঁছাতে হয়। ফলে এত সময় রাস্তায় কেটে যাওয়ায় অনেক সময় পথেই দুর্ঘটনা ঘটে যায়। ফলে এই সব এলাকায় প্রসূতি ও শিশুমৃত্যুর সংখ্যাও বেশি। সেই সমস্যা সমাধানের জন্য ২০১৬ সালের ২৫ জুন থেকে স্বাস্থ্য দফতর উদ্যোগী হয়ে মহিলা হাব তৈরি করে। একটি ভবনে চলে ওই হাব। সেখানে রয়েছে ১০টি শয্যা। প্রত্যন্ত এলাকার মহিলাদের সম্ভাব্য সন্তান জন্মের দিন দশেক আগে এলাকার আশাকর্মীরা তাঁদের নিয়ে আসেন গ্রামীণ হাসপাতাল চত্বরে গড়ে ওঠা মহিলা হাবে। সেখানে রয়েছেন একজন প্রশিক্ষিত নার্স। তিনি ২৪ ঘন্টা প্রসূতিদের দেখাশোনা করেন। তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও সঙ্গে থাকেন। সকাল থেকে রাত অবধি প্রসূতিদের ৫ বার চেক-আপ চলে। সকাল দুপুর রাতে তিনবার পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয়। হাসপাতালের পাশে হওয়ায় প্রসূতিদের কোনও সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসক চলে আসেন। দরকার হলে ভর্তি করে নেন হাসপাতলে।

বর্তমানে ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রয়েছে পাঁচজন প্রসূতি। এদের মধ্যে রয়েছেন বনশ্যামনগর পঞ্চায়েতের এল প্লটের প্রতিমা গিরি মণ্ডল। তার বাড়ি থেকে দুটো নদী পার হয়ে হাসপাতাল আসতে প্রায় ৬০ কিলোমিটার পথ পেরোতে হয়। তাই এলাকার আশাকর্মীরা আগেভাগেই তাকে কেন্দ্রে এনে রেখেছেন। ওই কেন্দ্রে রয়েছেন ব্রজবল্লভপুর পঞ্চায়েতের দেবশ্রী দলুই। তাঁর বাড়ি থেকে হাসপাতাল নদীপথ মিলিয়ে প্রায় ৩০ কিলোমিটার রাস্তা। বনশ্যাম নগর পঞ্চায়েতের মল্লিকা বেতাল কামিলা। বাড়ি থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরত্ব পাথরপ্রতিমা ব্লক হাসপাতাল। এছাড়াও আছেন ক্ষেত্রমোহনপুর এলাকার মনশ্রী মিদ্যা হাজরাও।

ওই কেন্দ্রটি দেখভাল করেন শিবানী মিদ্দা। তিনি বলেন, ‘‘নদী-নালা ঘেরা বিভিন্ন দ্বীপ এলাকার মায়েরা যাতে সন্তান প্রসব করতে গিয়ে বিপদে না পড়ে সে কারণেই আমাদের এই উদ্যোগ। সকলকে ২৪ ঘণ্টায় নজরদারিতে রাখা হয়। অনেক গরিব দুস্থ পরিবারের মায়েরা পুষ্টিকর খাবার পেতেন না। তিনি হাসপাতালে এসে নির্দিষ্ট সময়ে সঠিক পুষ্টিকর খাবার পাচ্ছেন। ফলে সন্তান প্রসবের পরে মা ও শিশু দুজনেই সুস্থ থাকে।’’পাথরপ্রতিমা পঞ্চায়েত সমিতি সভাপতি শেখ রাজ্জাক বলেন, ‘‘মায়েদের ওই হাবে আনার পর পরিবারের লোকজন এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দুজনেই নিরাপদে থাকেন।’’

পাথরপ্রতিমা বিএমওএইচ কৃষ্ণেন্দু রায় বলেন, ‘‘মাদার হাবটি চালু হওয়ার পর থেকে পাথর প্রতিমার মত প্রত্যন্ত দ্বীপ অঞ্চল এলাকায় আর বাড়িতে প্রসব হয় না। আগেভাগেই প্রসূতিরা হাবে পৌঁছে যাচ্ছেন। হাব হওয়ার পর প্রসূতি ও শিশুর মৃত্যুর হার কমানো গিয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Pathar Pratima Child
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy