চাকদা বনগাঁ সড়কের পাশে এভাবেই ইমারতি দ্রব্য রাখা থাকতে দেখা যায়। —নিজস্ব চিত্র।
এক সময়ে রাস্তা ছিল সঙ্কীর্ণ। পরে সংস্কার হয়ে চওড়া, মসৃণ হয়েছে। রাস্তা সংস্কারে সুবিধা হয়েছে অনেক। কিন্তু অভিযোগ, সেই সঙ্গে দুর্ঘটনাও কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। প্রায় ৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ বনগাঁ-চাকদহ রাজ্য সড়কের শুধু উত্তর ২৪ পরগনার অংশেই চলতি বছরে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটেছে বেপরোয়া বাইক চালানোর জন্য। কখনও বাইকের সঙ্গে বাইকের, কখনও বাইকের সঙ্গে সাইকেল, টোটো, অটোর ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনা ঘটছে। আবার কখনও সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পিছনে ধাক্কা মেরেছেন বাইক চালক। ক’দিন আগেই দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িতে দু’টি বাইকের ধাক্কায় চার বাইক আরোহী গুরুতর জখম হন। কয়েক বছর আগে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল এক পুলিশকর্মীর। কর্তব্যরত পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের জখম হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে একাধিক বার।
বনগাঁ থেকে নদিয়ার চাকদহ চৌমাথা পর্যন্ত গিয়েছে রাস্তাটি। ২০১০ সালে সঙ্কীর্ণ রাস্তা সংস্কার করে চওড়া সড়ক তৈরি হয়। বনগাঁ থেকে চাকদহ পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় ৩৪ কিলোমিটার। বনগাঁ থেকে গোপালনগরের কদমতলা পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার অংশ উত্তর ২৪ পরগনার জেলার মধ্যে পড়ে। বাকিটা নদিয়া জেলার অন্তর্গত। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরে জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এই সড়কে উত্তর ২৪ পরগনার অংশে পথ দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন ১৫ জন। জখম হয়েছেন ২৫ জন।
বনগাঁ, গোপালনগর, বাগদা থানা এলাকার বহু মানুষ যশোর রোডের যানজট এড়াতে ওই সড়ক ধরে বারাসত বা কলকাতায় যাতায়াত করেন। দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে পণ্যভর্তি ট্রাক পেট্রাপোল বন্দরে যায় এই পথ ধরে। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষ, যান চালক সকলের কাছেই সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, কিছু যুবক এই রাস্তায় প্রবল গতিতে বাইক চালান। পথ নিরাপত্তা নিয়ে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ কর্মসূচির মাধ্যমে পুলিশ-প্রশাসনের তরফে প্রচার করা হচ্ছে। তবুও মানুষ সচেতন হচ্ছেন না।
শুক্রবার দেখা গেল, রাস্তায় এক জায়গায় পর পর তিনটি বাইকে তিন জন করে যুবক হেলমেট ছাড়া বেপরোয়া গতিতে উল্লাস করতে করতে ছুটে যাচ্ছেন। আরোহীরা কখনও দু’দিকে হাত ছড়িয়ে দিচ্ছেন। কখনও সামনের বাইকে থাকা আরোহীদের হাত ধরার চেষ্টা করছেন। শরীরী ভাষায় উল্লাস স্পষ্ট। একটু এগিয়ে দেখা গেল, তীব্র গতিতে বাইক চালাতে চালাতে এক হাতে ধূমপান করছেন যুবক। আরও দেখা গেল, এক তরুণীকে বাইকের মাঝখানে বসিয়ে দুই যুবক বেপরোয়া গতিতে ছুটে যাচ্ছেন। কারও হেলমেট নেই। বাসিন্দারা জানালেন, বাইকের দাপটে সড়ক দিয়ে হাঁটতেই ভয়লাগে।
রাস্তার উপরে বিভিন্ন জায়গায় চোখে পড়ল ইমারতি মালপত্র। গোপালনগর বাজারে রাস্তার উপরে সাইকেল বাইক বা ছোট গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখতেও দেখা গেল। ওই বাজারে অতীতে আনাজ বোঝাই গাড়ির ধাক্কায় দুই ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। তারপরেও অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সড়কে ইট-খোয়া-পাথর-বালি পড়ে থাকলেও প্রশাসনের তরফে পদক্ষেপ করা হয় না।
পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে মাঝে মধ্যেই পদক্ষেপ করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ বাজার এবং স্কুলের সামনে গার্ডরেল দেওয়া থাকে। সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন থাকে। দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে মানুষকে সচেতন করতে বোর্ডও লাগানো হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ, সে দিকে যান চালকদের হুঁশ থাকে না। পুলিশের এক কর্তার কথায়, “অবৈজ্ঞানিক ভাবে সড়কের বিভিন্ন জায়গায় রোড ডিভাইডার বসানো হয়েছে। সে সব ডিভাইডারগুলি কাটা। এর ফলেও দুর্ঘটনা ঘটছে।” বেআইনি ভাবে সড়কে ফেলে রাখা ইমারতি মালপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয় বলেও দাবি পুলিশের। ওই কাজের সঙ্গে যুক্ত লোকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে অতীতে। কিন্তু পুলিশি নজরদারি কমলেই ফের সড়ক পুরনো অবস্থায় ফিরে যায় বলে স্থানীয় মানুষের অভিজ্ঞতা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy