চারা-বিলি: ভাঙড়ে। নিজস্ব চিত্র
১ কেজি প্লাস্টিক দাও, একটি গাছ নাও— প্লাস্টিক বর্জিত সমাজ ও সবুজ গ্রাম গড়তে এমনই অভিনব উদ্যোগ ভাঙড় ১ ব্লকের প্রশাসনের।
গত কয়েক দিন ধরে নারায়ণপুর, চন্দনেশ্বর ২ পঞ্চায়েত এলাকা-সহ বিভিন্ন এলাকায় প্লাস্টিক, থার্মোকল বর্জিত সমাজ গড়তে এবং এলাকায় সবুজায়নের লক্ষ্যে নানা পদক্ষেপ করেছে ব্লক প্রশাসন ও পঞ্চায়েত। বিভিন্ন এলাকায় বৃক্ষরোপণের পাশাপাশি সবুজশ্রী প্রকল্পে নবজাতকদের হাতে একটি করে গাছ ও খেলনা তুলে দেওয়া হয়। প্লাস্টিক, থার্মোকলের প্লেট, গ্লাস, বাটির ব্যবহার বন্ধ করতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভাঙড় ১ ব্লকের ৯টি পঞ্চায়েত এলাকায় ১১ হাজার গাছ ইতিমধ্যে বসানো হয়েছে। আরও গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
থার্মোকলের পরিবর্তে শালপাতার থালা, গ্লাস, বাটি ব্যবহারে উৎসাহিত করতে বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর হাতে শালপাতার উপকরণ তৈরি করতে মেশিন তুলে দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপচয় বন্ধ করতে স্কুলে সোলার প্যানেল দেওয়া হচ্ছে। স্কুলে বাচ্চাদের মিড ডে মিল খাওয়ার আগে হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে হাত ধোয়ারও ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও প্রশাসন সূত্রের খবর।
হ্যান্ড ওয়াশ তৈরির জন্য স্বনির্ভর গোষ্ঠীর হাতে মেশিন তুলে দেওয়া হয়। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি হ্যান্ড ওয়াশ তৈরি করে তা বিভিন্ন স্কুলে সরবরাহ করবে। সেই সঙ্গে স্কুলের বাচ্চাদের পুষ্টির লক্ষ্যে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। মিড ডে মিলের পাশাপাশি ফলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্কুলের শিক্ষিকা ও ছাত্রীদের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিনের মেশিন দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে।
ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রত্যেক মানুষ যেমন তার মাকে ভালবাসে, তেমনি নিজের গ্রামকেও ভালবাসুক। এই বার্তা দিতে ‘আমার গ্রাম, আমার মা’ নাম দিয়ে দূষণমুক্ত, সবুজ গ্রাম গড়তে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। এলাকায় বিদ্যুতের অপচয় বন্ধ করা, পানীয় জলের অপচয় রোধ, বৃক্ষরোপণ-সহ বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্লাস্টিক ও থার্মোকল বর্জন করতে গ্রামের সাধারণ মানুষকে নানা ভাবে সচেতন করা হচ্ছে। প্লাস্টিক, থার্মোকল কী ভাবে পরিবেশের ক্ষতি করছে তা বোঝাতে পঞ্চায়েতগুলিতে বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাস্তার ধারে, বাড়ির চারপাশে প্রচুর প্লাস্টিক পড়ে থাকে। ওই সব প্লাস্টিক হাওয়ায় উড়ে পুকুরে নদী, নালা, খালবিলে গিয়ে পড়ছে। অনেকের বাড়িতে বাজার থেকে বিভিন্ন জিনিসপত্র প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগে নিয়ে আসার পর তা জমা হয়ে থাকে। প্রশাসনিক ভাবে বিভিন্ন বাড়ি থেকে এই সব প্লাস্টিক সংগ্রহ করে বিনিময় একটি গাছ দেওয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে বলা হচ্ছে বাজারে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ দেওয়া হলে আপনারা তা নেবেন না। এতে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। আর গাছ দিয়ে বলা হচ্ছে যে ভাবে বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব বাড়ছে, তাতে গাছ লাগানো অত্যন্ত জরুরি।
ভাঙড় ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শাজাহান মোল্লা বলেন, ‘‘ব্লক এলাকায় আড়াই লক্ষেরও বেশি মানুষ বসবাস করেন। প্লাস্টিক বর্জিত সমাজ গড়ে তুলতে আমরা প্রথমে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাধারণ মানুষকে বোঝাচ্ছি। পরবর্তী সময়ে আমরা বাজারে বিভিন্ন দোকানদারকে প্লাস্টিক ব্যবহার করতে নিষেধ করব। পাশাপাশি আমরা মানুষকে গাছ লাগাতে উৎসাহিত করছি। ব্লক এলাকার প্রতিটি মানুষ যদি একটা করে গাছ লাগায় তা হলে আড়াই লক্ষ গাছ লাগানো সম্ভব হবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমাদের এই প্রয়াস।’’
ভাঙড় ১ বিডিও সৌগত পাত্র বলেন, ‘‘আমরা বিভিন্ন এলাকা যে প্লাস্টিক সংগ্রহ করছি তা এক জায়গায় মজুত করা হচ্ছে। পরে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আমরা সেই প্লাস্টিক রিসাইক্লিং করব। প্লাস্টিক বর্জিত সবুজ গ্রাম গড়তে আমাদের এই উদ্যোগ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy