অসুস্থ বাবাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ থেকে এ পারে এসেছিলেন এক ব্যবসায়ী। দীর্ঘ দিনের বন্ধুর আশ্রয়ে ছিলেন হাবরার নতুনগ্রাম এলাকায় ওই বন্ধুর বাড়িতেই। সেই বন্ধুই ছক কষে অপহরণ করিয়েছিল মহম্মদ মহসিন কবীর নামে বাংলাদেশের ওই ব্যবসায়ীকে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। দেড় দিনের লাগাতার চেষ্টায় উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের একটি দল বৃহস্পতিবার ভোর রাতে হাবরা থানার বেতপুল এলাকা থেকে ঘটনায় জড়িত ওই বন্ধু-সহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। উদ্ধার করা হয়েছে অপহৃত ব্যবসায়ীকে। যে গাড়িতে অপহরণ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ, বাজেয়াপ্ত হয়েছে সেই গাড়িটিও।
পুলিশ জানিয়েছে ধৃতদের নাম, শিবব্রত চক্রবর্তী, মহম্মদ আনোয়ার হোসেন, আনিসুর রহমান গাজি, মহম্মদ ইমরান মণ্ডল, সাহিনুর মণ্ডল এবং সারিফুল গাজি। এদের মধ্যে শিবব্রত অপহরণের ছক কষেছিল বলে তদন্তকারীদের দাবি। জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ঘটনাটি আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। জেলা পুলিশের একটি দল গঠন করা হয়। তারা দু’দিনের চেষ্টায় ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করেছে। দুষ্কৃতীদেরও ধরা গিয়েছে।’’
কী ভাবে ঘটেছিল অপহরণ?
পুলিশ জানিয়েছে, ১৩ ডিসেম্বর কলকাতায় ডাক্তার দেখাতে যাবেন বলে বাবা-ছেলে ভোর পৌনে ৬টা নাগাদ শিবব্রতের বাড়ি থেকে হেঁটে স্টেশনের দিকে যাচ্ছিলেন। উত্তর হাবরা এলাকায় আগে থেকে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিল দুষ্কৃতীরা। সেখানে পৌঁছতেই মহসিনকে তারা জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে পালায়। তাঁকে রাখা হয় স্বরূপনগর থানার তেঁতুলিয়া সেতুর কাছে একটি ভাড়া বাড়িতে।
এ দিকে, মহসিনের বাবা আলহাজ জাকির হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে হাবরা থানায় অভিযোগ জানাতে যায় শিবব্রত। আলাদা একটি সিম থেকে বাকি অপহরণকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে থাকে সে। পুলিশের গতিবিধির খবর পৌঁছে দিতে থাকে। শিবব্রত মোবাইলেই দুষ্কৃতীরা ১৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চেয়ে ফোন করে। প্রাথমিক ভাবে শিবব্রতকে সন্দেহ করার কোনও কারণ ছিল না পুলিশের। কিন্তু মোবাইল ট্যাপ করে তদন্তকারীরা বুঝতে পারেন, শিবব্রত সঙ্গে যোগসাজস আছে অপহরণকারী দলের।
এরপরেই তদন্তকারীরা জাল বিছোতে শুরু করেন। শিবব্রতকে বলা হয়, দুষ্কৃতীদের বলতে, বেতপুল এলাকায় ৬ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। ভোর ৩টের সময়ে মহসিনকে নিয়ে সেখানে পৌঁছে যায় দুষ্কৃতীরা। সেখানেই গ্রেফতার করা হয় সকলকে।
তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ১৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণের অর্ধেকটাই নেওয়ার কথা ছিল শিবব্রতর। নোটের আকালের এই বাজারে অপহরণকারীরা পুরনো নোট নিতেও প্রস্তুত ছিল। কিন্তু সেই নোট তারা কী ভাবে কাজে লাগাত, তা এখন ভাবাচ্ছে পুলিশকে।
হাবরার আইসি মৈনাক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘খুব সর্তকতার সঙ্গে এগোতে হয়েছে আমাদের। কারণ, ওরা ঘণাক্ষরেও কিছু আঁচ পেলে মহসিনের ক্ষতি করে দিতে পারত।’’ছেলেকে ফিরে পেয়ে পুলিশকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন জাকির। আর মহসিনের কথায়, ‘‘বন্ধুই যে এত বড় গদ্দারি করবে, তা
ভাবতেই পারিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy