Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Durga Idol Immersion

ইছামতীর দূষণ রুখতে পদক্ষেপ

শহরের সচেতন মানুষ ও পরিবেশ কর্মীরা দীর্ঘ দিন ধরে প্রতিমা বিসর্জনের জেরে ইছামতীর দূষণ বন্ধ করার দাবি তুলেছিলেন। শহরবাসীর একাংশ প্রতিমা বিসর্জনের বিকল্প ব্যবস্থার দাবি জানান।

বনগাঁ থানার ঘাটে যন্ত্রের সাহায্যে প্রতিমা নিরঞ্জন।

বনগাঁ থানার ঘাটে যন্ত্রের সাহায্যে প্রতিমা নিরঞ্জন। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বনগাঁ শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:০১
Share: Save:

বনগাঁ শহরে ইছামতী নদীতে দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের ফলে জল দূষণের অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। তবে নদীকে দূষণমুক্ত রাখতে কয়েক বছর ধরে অবশ্য চেষ্টা চালাচ্ছে পুরসভা। এ বার আরও সংগঠিত ভাবে পুরসভার পক্ষ থেকে নদীর জল দূষণ ঠেকাতে উদ্যোগ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার, দমশীর দিন থেকে বনগাঁ শহরে ইছামতী নদীতে প্রতিমা নিরঞ্জন শুরু হয়েছে। প্রতিমা নদীতে ডোবানোর পরেই সেই কাঠামো পুরসভার কর্মীরা যন্ত্রের সাহায্যে তুলে উপরে আনছেন। এর ফলে জল দূষিত হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশেই কমানো সম্ভব হয়েছে বলে পুর কর্তৃপক্ষের দাবি। এই ব্যবস্থায় খুশি শহরের পরিবেশ সচেতন মানুষও।

শহরের সচেতন মানুষ ও পরিবেশ কর্মীরা দীর্ঘ দিন ধরে প্রতিমা বিসর্জনের জেরে ইছামতীর দূষণ বন্ধ করার দাবি তুলেছিলেন। শহরবাসীর একাংশ প্রতিমা বিসর্জনের বিকল্প ব্যবস্থার দাবি জানান। কিন্তু শহর বা সংলগ্ন এলাকায় ইছামতী নদীর বিকল্প বড় জলাশয়, পুকুর, খাল, বিল না থাকায় তা সম্ভব হয়নি। এ বার পুরসভার তরফে ইছামতীর জল দূষণ ঠেকাতে টাকা খরচ করে ভাড়া করে আনা হয়েছে একটি হাইড্রা মেশিন। যা এক ধরনের বড় ক্রেন। কয়েক মাস আগেই পুরসভা বনগাঁ শহরে নদী থেকে কচুরিপানা তোলার কাজ করেছে। ফলে নদীতে এখন জল দেখা যাচ্ছে। দশমীর দিন থেকে শহর এলাকার প্রতিমাগুলি বনগাঁ থানার ঘাটে বিসর্জন দেওয়া শুরু হয়েছে। চলবে শুক্রবার পর্যন্ত। বাড়ির ও বারোয়ারি মিলিয়ে এ বারও অসংখ্য প্রতিমা ইছমতী নদীতে বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে। নদীর ঘাটে গিয়ে দেখা গেল, দুর্গা প্রতিমা বনগাঁ থানার ঘাটে যন্ত্রের মাধ্যমে নদীতে এক বার ডুবিয়ে তা পাড়ে তুলে ফেলছেন পুরসভার কর্মীরা। থানার ঘাট বাঁশ ও নেট দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। ফলে কাঠামো কোনও ভাবেই নদীতে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকছে না। পুরপ্রধান গোপাল শেঠ বলেন, ‘‘ইছামতীতে এমনিতেই নাব্যতা নেই। প্রতি বছর বিসর্জনের ফলে জল দূষিত হত। এ বার তাই দুর্গা প্রতিমা জলে ডুবিয়ে সঙ্গে সঙ্গে পুরকর্মীরা তা নদী থেকে তুলে ফেলছেন। নদীকে আমাদের বাঁচাতেই হবে। প্রতিমার সঙ্গে থাকা ফুল ও বেলপাতা জলে ফেলা হয়নি। তা পুরসভার পক্ষ থেকে নদীর পাড়ে ফেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’ পুরপ্রধান বলেন, ‘‘এ বার বনগাঁ থানার ঘাটে এবং আপনজন মাঠ এলাকায় শহরের প্রতিমা বিসর্জনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর বাইরে কেউ নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দিলে পুরকর্মীরা সঙ্গে সঙ্গে কাঠামো তুলে ফেলছেন। পুরকর্মীরা নদীর পারে ঘুরে ঘুরে নজর রাখছেন।’’ বনগাঁ মহকুমা এলাকায় ইছামতীর নদী প্রায় ৮৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। শেষ কবে নদীতে জোয়ার-ভাটা দেখা গিয়েছে, মনে করতে পারেন না স্থানীয় মানুষ। কচুরিপানা পচে ও আবর্জনা পড়ে এমনিতেই নদীর জল দূষিত। তার উপরে প্রতি বছর দুর্গা পুজোর পরে নদীতে কয়েকশো প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। ফলে দূষণ আরও বাড়ত। শহরবাসী জানালেন, আগে প্রতিমা জলে ডোবানোর সঙ্গে সঙ্গে পুরসভার কর্মীরা থানার ঘাট থেকে তা টেনে নিয়ে গিয়ে মাঝ নদীতে ছেড়ে দিতেন। কয়েক দিন পর কাঠামো নদী থেকে তোলা হত। ততক্ষণে প্রতিমার রং জলে মিশে গিয়ে দূষিত হত। প্রবীণেরা জানালেন, অতীতে নদীতে স্রোত থাকায় বিসর্জন দেওয়া হলেও দূষণের বিষয়টি সে ভাবে নজরে পড়ত না। এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘প্রতিমার রং জলে মিশে ইকো সিস্টেমটাই নষ্ট করে দেয়।’’ এ বার অবশ্য পুরসভার ভূমিকায় সকলে খুশি।

পরিবেশ কর্মীরা বলেন, ‘‘ইছামতীর জল দূষণ ঠেকাতে বহু দিন ধরে দাবি করেছিলাম। পুরসভার পদক্ষেপের ফলে জল দূষণ বন্ধ হওয়ায় আমরা খুশি।" শহর এলাকায় নদী থেকে প্রতিমা তোলার ব্যবস্থা হলেও পঞ্চায়েতের গ্রামীণ এলাকায় অবশ্য সেই ব্যবস্থা তৈরি হয়নি। যদিও গ্রামীণ এলাকায় তুলনায় কম প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় ইছামতীতে।

অন্য বিষয়গুলি:

Ichamati River
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy