ছড়িয়ে-ছিটিয়ে: বকখালির সৈকতে। নিজস্ব চিত্র
ভরা পিকনিকের মরসুমে বহু পর্যটক ভিড় জমাচ্ছেন বকখালি পিকনিক স্পটে। কিন্তু ঝাউয়ের জঙ্গলে পিকনিক স্পট পড়ে রয়েছে আবর্জনার স্তূপ। দুর্গন্ধে নাজেহাল হচ্ছেন পর্যটকেরা। সুর কাটছে আনন্দের আবহে।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতা ও সংলগ্ন জেলাগুলি থেকে শীতের মরসুম ছাড়াও প্রায় সারা বছর পর্যটকেরা পিকনিক করতে আসেন বকখালিতে। সমুদ্রের ধারে ঝাউয়ের জঙ্গলের টানে ভিড় জমান তাঁরা। কয়েক মাস আগে পর্যন্ত পর্যটকের দল কলকাতা বা অন্য কোনও এলাকা থেকে গাড়ি নিয়ে এলে গাড়ি নারায়ণপুর পর্যন্ত আসত। সেখান থেকে হাতানিয়া-দোয়ানিয়া নদী ভেসেলে পারাপার করে নামখানা ঘাটে উঠে বকখালি যেতে হত। ভেসেলে গাড়ি তুলতে গেলে লম্বা লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হত অনেক সময়ে।
মাস কয়েক আগে ওই নদীর উপরে প্রায় তিন কিলোমিটার লম্বা সেতু নির্মাণ হয়েছে। ফলে এখন সরাসরি গাড়ি নিয়ে সেতু পার হয়ে বকখালি পৌঁছনো যাচ্ছে। আগের তুলনায় পর্যটকদের ভিড়ও বেড়েছে। বিশেষত ছুটির দিনে হাজার হাজার পর্যটক বকখালি পিকনিক স্পটে আসছেন। বকখালিতে পর্যটকের পিকনিক করার জন্য ঝাউয়ের জঙ্গল-লাগোয়া একটি ফাঁকা মাঠ রয়েছে। ওই মাঠে রান্নাবাড়ি খাওয়া-দাওয়া চলে। কিন্তু হাজার হাজার পর্যটকদের ফেলে যাওয়া খাবার, প্লাস্টিকের থালা, গ্লাস, চায়ের কাপ, মদের বাক্স-সহ নানা সামগ্রী পড়ে থাকছে পিকনিক স্পট জুড়ে। জঞ্জালের স্তূপ সরিয়েই পিকনিকের আসর বসাতে হচ্ছে। ক’দিনের বৃষ্টিতে জল জমেছে। নোংরা, দুর্গন্ধে বিরক্ত পর্যটকেরা।
শুধু তাই নয়। বকখালি পিকনিক স্পটে হাজার হাজার মানুষ পিকনিক করতে এলেও নলকূপ মাত্র একটি। ফলে জল কিনে খেতে হয়। একটিমাত্র শৌচাগার। শৌচাগার ব্যবহার করতে গেলে লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হয়। বকখালি পিকনিক স্পট ঘিরে গড়ে উঠেছে আবাসিক হোটেল। অনেকে সেখানে রাতে থেকে যান পিকনিক সারতে এসে। কিন্তু সৈকত-লাগোয়া সমস্ত আলো খারাপ। সন্ধ্যা নামলেই ঘন অন্ধকারে ডুবে যায় এলাকা। তবে সৈকত-লাগোয়া এলাকায় রয়েছে ছোটখাট দোকানপাট। ওই দোকানের আলোয় সন্ধের দিকে কিছুটা আলোকিত থাকে সৈকত।
বকখালি সৈকত ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সদস্য পূর্ণচন্দ্র কুঁতির অভিযোগ, সময় মতো পিকনিক স্পটের জঞ্জাল সাফাই না হওয়ায় পর্যটন কেন্দ্রের বদনাম হয়ে যাচ্ছে। সারা বকখালি পিকনিক স্পট জুড়ে আবর্জনার স্তূপ। বাদ নেই সমুদ্রসৈকতও। তিনি বলেন, ‘‘আমরা যতটা পারি সাফ করি। পঞ্চায়েত থেকে অবিলম্বে বকখালি পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য উদ্যোগ করা উচিত।’’ ডায়মন্ড হারবারের বাসিন্দা কার্তিক মান্না, বাপ্পা মান্নারা ক’দিন আগে পিকনিক করতে এসেছিলেন। জানালেন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পিকনিকের মজাটাই অর্ধেক মাটি!
পিকনিক স্পটের জঞ্জাল সাফাইয়ের জন্য ফ্রেজারগঞ্জ পঞ্চায়েতের অধীনে রয়েছে ১৮ জনের একটি মহিলা-দল। তারা ডিসেম্বর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত তিন মাস সাফাই অভিযানের কাজ করে। ওই দলে থাকা শেফালি মান্না, সন্ধ্যা দাসরা জানালেন, সাফাইয়ের জন্য এ বছর পঞ্চায়েত থেকে ১৫ হাজার টাকা দেবে বলেছে। প্রায় ১০-১৫ বছর ধরে তাঁরা এই কাজ করে আসছেন। এমনিতেই বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে পিকনিক স্পট। তার উপরে নামখানা হাতানিয়া-দোয়ানিয়া নদীর উপরে সেতু হয়ে যাওয়ায় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ পিকনিক করতে আসছে। তাদের ফেলা জঞ্জাল যতটা সম্ভব সাফ করা হয়।
ক’দিন আগে ছুটির দিনে ডায়মন্ড হারবার থেকে একদল যাত্রী পিকনিক করতে গিয়েছিলেন বকখালি পিকনিক স্পটে। ওই দলের সদস্য অমর মান্না, দীপক মান্নারা বলেন, ‘‘আগেও বকখালি এসেছি। তখন পিকনিক স্পটে এত আবর্জনা থাকত না। এ বার রীতিমতো আবর্জনা সরিয়ে আমাদের বসতে হয়েছে।’’ বকখালি সৈতকের মূল আকর্ষণ ঝাউয়ের জঙ্গল বুলবুল ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়ায় অনেকে আকর্ষণ হারাচ্ছেন।’’
ফ্রেজারগজ্ঞ পঞ্চায়েতের প্রধান গৌতম প্রামাণিক বলেন, ‘‘নামখানায় সেতু হয়ে যাওয়ায় পর্যটক বেড়েছে। ফলে আমরা আগে থেকে প্রস্তুত ছিলাম না। সাধ্যমতো মহিলা কর্মীদের দিয়ে সাফসুতরো রাখার চেষ্টা করছি। তবে একটা ভ্যাটের খুব দরকার। সমস্ত বিষয়ে পঞ্চায়েত সমিতিকে জানানো হয়েছে।’’ পানীয় জলের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘সাব মার্সল বসিয়ে জল সরবরাহের উদ্যোগ করা হবে।’’
নামখানা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি ধীরেন্দ্রনাথ পাত্র বলেন, ‘‘ওই পিকনিক স্পটের বর্তমানে কী অবস্থা, তা দেখে যা করণীয়, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy