Advertisement
০৫ ডিসেম্বর ২০২৪
Migrant labour

শিল্প-প্রতিশ্রুতিতে পেট ভরছে কই, ভিন্ রাজ্যেই ভরসা ওঁদের

শিল্প সম্মেলন থেকে রাজ্যে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ঘোষণা হয় বছরের পর বছর। এ দিকে, প্রতি বছর বাংলার হাজার হাজার যুবক কাজের খোঁজে পাড়ি দেন দেশ-বিদেশে। কর্মসংস্থানের পরিস্থিতি কেমন, খোঁজ নিল আনন্দবাজার

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

নবেন্দু ঘোষ 
বসিরহাট শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:৫৫
Share: Save:

দু’দিনের বিশ্ব বঙ্গ শিল্প সম্মেলন শেষে রাজ্যে ৩,৭৬,২৮৮ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে বলে দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর আরও দাবি, এ বার মৌ স্বাক্ষর হয়েছে ১৮৮টি। যা গত বছরের তুলনায় বেশি। তবে এই বিপুল পরিমাণ শিল্প বিনিয়োগের আশ্বাস প্রতি বছর পাওয়া গেলেও তাতে নিশ্চিন্ত নন বসিরহাট মহকুমার বিভিন্ন গ্রাম থেকে রাজ্যের বাইরে কাজে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকেরা।

বসিরহাট মহকুমার হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি, মিনাখাঁ-সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বহু পরিযায়ী শ্রমিক ভিন্ রাজ্যে কাজে যান বহু বছর ধরে। গ্রামে এখন একশো দিনের কাজ নেই। দিনমজুরির কাজও প্রতি দিন হয় না। বিশেষ কোনও কর্মসংস্থানও নেই গ্রামে। ফলে এাকা ছাড়তে হয়েছে মৃন্ময়, বাপি, আব্দুল সামাদদের। রাজ্যে কাজের সুযোগ হবে বলেও আশা করেন না তাঁরা। যাঁরা গ্রামে রয়েছেন, তাঁদের অনেকেও কাজ না পেয়ে রাজ্য ছাড়ার পরিকল্পনা করছেন।

হাসনাবাদ ব্লকের ভবানীপুর ১ পঞ্চায়েতের বাসিন্দা মৃন্ময় মণ্ডলের আর্থিক অবস্থা করুণ। মাধ্যমিক পাশ করার পরে আর পড়াশোনা করেননি তিনি। প্রায় পাঁচ বছর ধরে তামিলনাড়ুতে সুতো তৈরির কারখানায় কাজ করে মাসে ২৫ হাজার টাকা উপার্জন করছেন। থাকা-খাওয়া বাদে প্রায় ২০ হাজার টাকা সঞ্চয় করেন মাসে। তাঁর দাবি, নিজের এলাকা বা কলকাতায় কোনও ভাবেই এই টাকা উপার্জন করা সম্ভব নয়। ফোনে মৃন্ময় বলেন, ‘‘বাড়িতে থেকে কাজ করতে পারলে ভাল হত। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও ঠিকঠাক কাজ পাইনি। তাই পাড়ার পরিচিতদের সঙ্গে এখানে চলে এসেছি। রাজ্যে শিল্প নিয়ে অনেক কথা শুনছি। কিন্তু শুধু প্রতিশ্রুতিতে ভরসা রাখতে পারছি না। রাজ্যে কর্মসংস্থান নিয়েও আশাবাদী নই।’’

হাসনাবাদ থানার বাসিন্দা বাপি গাজিও প্রায় একই কথা জানালেন। বাবা মারা যান ১৩ বছর বয়সে। তারপরে আর পড়াশোনা হয়নি। বাড়িতে বিড়ি শ্রমিকের কাজ করতেন। পরে পড়শি এক দাদার সঙ্গে চলে যান মুম্বইয়ে। সেখানে আঠারো বছর ধরে সেলাইয়ের কাজ করছেন। মাসে হাজার পনেরো টাকা রোজগার। সব খরচ বাদ দিয়েও ১০ হাজার টাকা হাতে থাকে। তাতেই খুশি তিনি। বাপি বলেন, ‘‘এ রাজ্যে শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনও স্বপ্ন দেখি না। ছোট থেকেই মুম্বইয়ে আছি। এখানে এই কাজ করেই জীবন কেটে যাবে। রাজ্যে ফেরার ইচ্ছে নেই।’’

যাঁরা বাড়িতে থেকে গ্রামে বা কলকাতায় কাজ করছেন, তাঁদের অনেকেও হতাশ হয়ে রাজ্যের বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। বসিরহাট মহকুমার মাখালগাছা পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা আব্দুল সামাদ গাজির দুই সন্তান। দিনমজুরি করেন। কিন্তু গ্রামে প্রতি দিন কাজ থাকে না। মাসে তিন-চার হাজার টাকার বেশি উপার্জন হয় না। আব্দুল বলেন, ‘‘এ ভাবে সংসার চলছে না। রাজ্যের বাইরে যাওয়ার জন্য যোগাযোগ করছি। যোগাযোগ হলেই চলে যাব। রাজ্যে শিল্পের জন্য বিনিয়োগের ঘোষণা অনেক শুনেছি। তবে কাজের সুযোগ হচ্ছে কই?’’

হাসনাবাদ থানার ভবানীপুরের একটি গ্রামের বাসিন্দা জয়প্রকাশ মণ্ডল দিল্লিতে একটি গাড়ির শোরুমে কাজ করতেন। মাসে ১৫-১৭ হাজার বেতন পেতেন। করোনার সময়ে কাজ ছেড়ে বাড়ি ফেরেন। ভেবেছিলেন, কলকাতায় বা বাড়ির আশপাশে কোনও কাজ পাবেন। গত তিন বছর ধরে তেমন কোনও কাজ জোটেনি। তিনি বলেন, ‘‘আবার দিল্লি চলে যাব ভাবছি। তা না হলে সংসার চালাতে পারব না।’’ হাসনাবাদ থানার খড়মপুরের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম গাজিও সাত বছর ধরে মুম্বইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করে মাসে প্রায় ২৫ হাজার টাকা উপার্জন করছেন। সিরাজুলের কথায়, ‘‘এ রাজ্যের তুলনায় মুম্বইয়ে উপার্জন অনেক বেশি। এখানে শিল্প কারখানার কথা শুধু বক্তব্যে শোনা যায়, তৈরি হতে দেখা যায় না।’’

এ বিষয়ে সিপিএমের সারা ভারত খেত মজুর ইউনিয়নের রাজ্য সম্পাদক নিরাপদ সর্দার বলেন, ‘‘শিল্প সম্মেলনের নামে প্রচুর টাকা খরচ করে শিল্প হবে— এই দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তা হচ্ছে না। রাজ্যে শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত কারও কাজের সুযোগ নেই।’’

তৃণমূলের বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার সভাপতি নুরুল ইসলাম বলে, ‘‘বাম জমানায় কি পরিযায়ী শ্রমিক কম ছিল? না কি শিল্পে ছেয়ে গিয়েছিল রাজ্যে? আমাদের রাজ্য সরকার চেষ্টা করছে শিল্প ও কর্মসংস্থান তৈরি করতে। মুখ্যমন্ত্রী যা আশ্বাস দেন, তা করে দেখান।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Basirhat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy