ভাঙড়ের বাজারে বিকোচ্ছে লাচ্ছা, সেমুই। ছবি: সামসুল হুদা
গত কয়েক দিন তীব্র গরমে ইদের বেচাকেনা তেমন জমেনি। তবে শুক্রবার ভোরের দিকে দুই জেলার কয়েকটি এলাকায় মেঘলা আকাশ দেখা গিয়েছে। ক্যানিং, সাগর, বনগাঁয় ছিঁটেফোঁটা বৃষ্টিও হয়েছে। দুই জেলাতেই এ দিন রোদের তেজ ছিল তুলনায় কম। আবহাওয়ায় খানিক স্বস্তি মিলতেই ক্রেতার ভিড় দেখা গেল বাজার এলাকাগুলিতে।
এ দিন সকাল থেকেই ক্যানিং, বাসন্তী বাজারে ইদের কেনাকাটার জন্য মানুষ ভিড় করেন। জামাকাপড় ও লাচ্ছা-সেমুইয়ের দোকানে ক্রেতার সংখ্যা ছিল সব থেকে বেশি। ক্যানিং বাজারের লাচ্ছা ব্যবসায়ী বিপ্লব দাস বলেন, ‘‘এক সপ্তাহ ধরে দোকান দিয়েছি। কিন্তু এত গরমে সে ভাবে খরিদ্দার হচ্ছিল না। ইদের ঠিক আগে মেঘলা দিন পেয়ে প্রচুর ক্রেতা এসেছিলেন। ভাল বিক্রি হয়েছে।’’
শুক্রবার সকাল থেকে ডায়মন্ড হারবার শহরের শপিংমল ও দোকানগুলিতে ক্রেতার ভিড় দেখা গেল। ডায়মন্ড হারবার স্টেশন বাজারের এক পোশাক বিক্রেতা জানান, গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বার ভাল বেচাকেনা হয়েছে। তবে একাধিক শপিংমল হয়ে যাওয়ায় কিছু সংখ্যক ক্রেতা কমেছে।
ঘোড়ামারা, মৌসুনি, পাথরপ্রতিমা, সাগরের বাসিন্দারা যে কোনও উৎসবে কেনাকাটার জন্য নির্ভর করেন কাকদ্বীপ বাজারের উপরে। ইদের আগেও সেই একই ছবি ধরা পড়ল। এ দিন ঘোড়ামারা থেকে কাকদ্বীপে কেনাকাটা করতে এসেছিলেন আমিনা বিবি। তিনি বলেন, ‘‘দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাই। ইদের আগে ছেলেমেয়েদের নতুন জামা কিনে দেব বলে কষ্ট করে টাকা জমিয়েছিলাম। কেনাকাটা করে বাড়ি ফিরব।’’ কাকদ্বীপের এক পোশাক ব্যবসায়ী সত্যরঞ্জন দাস বলেন, ‘‘ইদের আগে বিক্রি ভালই হয়েছে। গরমের জন্য বিকেলের দিকে ক্রেতারা বেশি ভিড় করেছেন।’’
তীব্র গরমে ঘটকপুকুর, ভাঙড়, পোলেরহাট, শোনপুর-সহ আশপাশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি তেমন জমেনি বলে জানালেন ব্যবসায়ীদের একাংশ। প্রতি বছর ইদের আগে ভাঙড় বিজয়গঞ্জ বাজারে সেমুই, লাচ্ছার পসরা সাজিয়ে বসেন আলাউদ্দিন মোল্লা, খোকন মোল্লা। তাঁরা জানান, অন্যান্য বছর সারা দিনই বেচাকেনা চলে। এ বছর গরমের জন্য বিকেলের দিকে কিছুটা বিক্রি হয়েছে। সকালের দিকে ক্রেতা ছিল হাতেগোনা। তবে ভিড় হয়েছে শুক্রবার সকাল থেকে। গোটা মাস জুড়ে বেচাকেনা না জমায় লাভ তেমন হয়নি। ওই বাজারে আপেল, আঙুর, লেবু-সহ বিভিন্ন ধরনের ফলের দোকান সাজিয়ে বসেন হাসেম মোল্লা। তিনি জানান, অন্যান্য বারের মতো বেচাকেনা হয়নি।
কেন এই অবস্থা?
ব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি, ভাঙড়ের বিভিন্ন এলাকার মানুষের প্রধান পেশা চাষবাস। প্রচণ্ড গরমের কারণে মাটি ফেটে, আনাজ নষ্ট হওয়ায় অনেকই ক্ষতির মুখে পড়েছেন। আবার বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকেরা অনেকে গরমে কাজে যেতে পারেননি। মানুষের হাতে পর্যাপ্ত টাকা না থাকার ফলে ইদের আগে বাজার তেমন জমেনি। ভাঙড় বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সাবিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘অন্যান্য বার ইদের আগে জামাকাপড়, জুতো-সহ বিভিন্ন জিনিসপত্র কিনতে ক্রেতার ভিড় উপচে পড়ে। এ বার গরমে কাজে যেতে না পারায় অনেকের হাতে টাকা নেই। অনেকে আবার এই গরমে প্রয়োজন ছাড়া বেরোচ্ছেন না। করোনার আগে ভাঙড়ের কাপড়ের দোকানগুলিতে কয়েক কোটি টাকার ব্যবসা হত। সেই অনুপাতে এ বছর বাজার একেবারেই মন্দা।’’
উত্তরের হাড়োয়া, মিনাখাঁ, সন্দেশখালি, বসিরহাট-সহ বিভিন্ন এলাকার পোশাক ব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি, বেচাকেনা কিছু হলেও আগের চেয়ে লাভ কমে গিয়েছে। প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতেও শপিংমল গড়ে উঠেছে। বহু মানুষ সেখান থেকেই কেনাকাটা সারছেন। বসিরহাটের এক পোশাক ব্যবসায়ী নাড়ুগোপাল ঘোষ বলেন, ‘‘ইদে প্রচুর টাকা কেনাবেচা হবে ভেবে প্রায় কুড়ি লক্ষ টাকার পোশাক তুলেছিলাম। কিন্তু পাঁচ লক্ষ টাকার মালও বিক্রি হয়নি। এ নিয়ে চিন্তায় রয়েছি।’’ ওই এলাকায় ছোট একটি কাপড়ের দোকান চালান তপন সরকার। তিনি বলেন, ‘‘ ক্রেতার বড় অংশই এখন বড় বড় দোকান, মলে ঢুকছেন। আমাদেরও বিক্রি হয়েছে, তবে আরও খরিদ্দার আশা করেছিলাম।’’
বারাসত বাজারের পোশাক ব্যবসায়ী গৌতম সাহা অবশ্য বলেন, "ইদ ও চৈত্র সেল এক সঙ্গে পড়ায় গত পাঁচ বছরে এ বার সব থেকে বেশি বিক্রি হয়েছে। করোনার সময়ে বিরাট ক্ষতি হয়েছিল। সে কারণে এ বার ব্যবসায় খুশি আমরা। গরম পড়লেও ঝড়-বৃষ্টি না হওয়ায় প্রতিদিন ভিড় ছিল বাজারে।" দেগঙ্গা থেকে আসা সেলিনা খাতুন বলেন, "বহু দিন পরে হাত খুলে কেনাকাটা করলাম।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy