লড়াকু: পরীক্ষা শেষে শিক্ষিকাদের সঙ্গে ভাগ্যশ্রী। ছবি: সুজিত দুয়ারি
দুর্ঘটনায় মৃত বাবার মুখাগ্নি সেরে উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষায় বসল মেয়ে। গোবরডাঙা থানার মছলন্দপুরের বেলেডাঙা এলাকার বাসিন্দা ছাত্রীর নাম ভাগ্যশ্রী মণ্ডল। বাদুড়িয়ার চাতরা নেতাজি বালিকা শিক্ষা নিকেতনের ছাত্রীর পরীক্ষার সিট পড়েছিল মছলন্দপুর ভূদেব স্মৃতি বালিকা বিদ্যালয়ে। সোমবার স্কুলের পোশাক পরেই বাবার শেষকৃত্য সেরে নির্ধারিত সময়ের কিছুক্ষণ পরে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছয় সে। এ দিন ইতিহাস পরীক্ষা ছিল। তিন ঘণ্টা পরীক্ষা দিয়ে ফের বাবার পারলৌকিক কাজ শেষ করার জন্য শ্মশানে যায় সে।
স্কুল ও পরিবার সূত্রে খবর, ভাগ্যশ্রীর বাবা অনিমেষ মণ্ডল (৪৫) রাজস্থানে গ্রামীণ চিকিৎসক ছিলেন। বুধবার রোগী দেখে পরিচিত এক জনের বাইকে ফেরার সময়ে দুর্ঘটনায় জখম হন। হাসপাতালে দু’দিন চিকিৎসাধীন থাকার পরে শুক্রবার সন্ধ্যায় সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
ময়নাতদন্তের পরে সোমবার সকালে দেহ মছলন্দপুরের বাড়িতে আসে। ভাগ্যশ্রীর বাড়িতে রয়েছেন তার মা রিনা ও বোন ভাবনা। বাবা অনিমেষই ছিলেন বাড়ির একমাত্র রোজগেরে সদস্য। কয়েক মাস অন্তর বাড়ি ফিরতেন। কথা ছিল, পরীক্ষা হয়ে গেলে মা ও দুই বোন মিলে বাবার কাছে বেড়াতে যাবে।
দুই মেয়েকে নিয়ে এখন কী ভাবে সংসার চলবে, বুঝতে পারছেন না সদ্য স্বামীহারা রিনা। খবর পেয়ে বাড়িতে গিয়েছিলেন মছলন্দপুর ১ পঞ্চায়েতের প্রধান তাপস ঘোষ। পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দেন তিনি।
চাতরা নেতাজি বালিকা শিক্ষা নিকেতনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সোমা ঘোষ চক্রবর্তী এবং পরিচালন কমিটির সভাপতি সুমিত ঘোষ জানান, বাবার মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার পর থেকেই কান্নায় ভেঙে পড়ে ভাগ্যশ্রী। পরীক্ষায় বসতে চাইছিল না। সকলে মিলে বোঝানোর পরে পরীক্ষা দিতে যায়। সোমা বলেন, ‘‘ভাগ্যশ্রী বরাবরই পড়াশোনায় ভাল। ওর মনের জোর আমাদের অবাক করেছে।’’
এ দিন পরীক্ষা দিয়ে বেরোনোর পরে ভাগ্যশ্রীর সঙ্গে দেখা করে তাকে সান্ত্বনা দেন ভূদেব স্মৃতি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মহুয়া দাস, সঙ্গে ছিলেন আরও দুই শিক্ষিকা। মহুয়া বলেন, ‘‘শান্ত ভাবেই পরীক্ষা দিয়েছে ও। মনের জোর দেখার মতো। আশা করি, ভাল রেজাল্ট করবে।’’
পরীক্ষা শেষে ভাগ্যশ্রী বলে, ‘‘বাবার ইচ্ছে ছিল, আমরা পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াই। কিন্তু বাবার মৃত্যুসংবাদ শুনে ভেবেছিলাম পরীক্ষা দেব না। শিক্ষিকাদের পরামর্শে ঠিক করি, বাবার ইচ্ছাপূরণ করতে পরীক্ষায় বসব। বাবার স্বপ্নপূরণ করাই এখন আমার লক্ষ্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy