অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়
ভাটপাড়ার পুরপ্রধান মনোনীত হলেন অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়। পদের দৌড়ে তাঁর নাম বিশেষ শোনা যায়নি গত কয়েক দিনে। তবে বরাবর প্রচারের আড়ালে থাকতে পছন্দ করা ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অরুণের উপরেই ভরসা রাখল দল। বিতর্ক এবং কোন্দল এড়াতেই ‘স্বচ্ছ ভাবমূর্তির অরুণকে বেছে নেওয়া হয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।
এ দিন পুরপ্রধান মনোনয়নের মধ্যে দিয়ে বিজেপির হাত থেকে এই পুরসভা ছিনিয়ে নেওয়া কার্যত সম্পূর্ণ হল বলে মনে করছে ঘাসফুল শিবির। তবে বিজেপি সহজে হাল ছেড়ে দেবে না বলে জানিয়েছেন ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহ। তিনি মামলা ঠোকার হুমকি আগেই দিয়েছিলেন। এ দিন বলেন, “জোর করে, কাউন্সিলরদের ভয় দেখিয়ে বোর্ড গড়া হল।”
তবে তৃণমূল অর্জুনের বক্তব্যকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক বলেন, “কে কী করবে, আর কিসে কী হবে, তা তো সময়ই বলবে। ভাটপাড়ার মানুষ বোর্ড তৃণমূলের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। ফের সেই দলের হাতেই বোর্ড ফিরল।” আর নতুন পুরপ্রধান জানান, পুরসভার দৈনন্দিন পরিষেবা চালু করাই তাঁর প্রথম কাজ। পরের কাজ হবে, দীর্ঘ দিন ধরে যে সব কর্মীরা বেতন পাচ্ছেন না, তাঁদের বেতনের ব্যবস্থা করা।
পুরসভার দখলদারি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে টালবাহানা চলছে এই পুরসভায়। মামলা-মোকদ্দমাও কম হয়নি। শেষমেশ হাইকোর্টের নির্দেশে পুরপ্রধান সৌরভ সিংহের বিরুদ্ধে তৃণমূলের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের উপরে ভোটাভুটি হয়। পুরপ্রধান-সহ বিজেপি কাউন্সিলরদের অনুপস্থিতিতে ১৯-০ ভোটে মসৃণ জয় আসে তৃণমূলের ঝুলিতে।
পুরপ্রধান কে হবেন, তা নিয়ে বিস্তর জল্পনা চলেছে গত কয়েক দিন ধরে। অরুণের নাম সে দৌড়ে বিশেষ শোনা যায়নি। বিন্দুমাত্র আভাস ছিল না কাউন্সিলরদের কাছেও। কয়েক জনের নামের তালিকা রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পাঠিয়েছিল পাঁচ সদস্যের কমিটি। সেই কমিটিতে ছিলেন দলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, জেলা পর্যবেক্ষক নির্মল ঘোষ, ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী, নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক এবং জগদ্দলের বিধায়ক পরশ দত্ত। কার নাম কেন সুপারিশ করা হয়েছে, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যাও ছিল। সোমবার রাতে মুখবন্ধ খামে রাজ্য নেতৃত্বের তরফে মুখবন্ধ খামে অরুণের নাম পাঠানো হয় জেলা নেতৃত্বের কাছে। সেই সঙ্গে কার্যত হুইপ জারি করে জেলা নেতৃত্ব জানিয়ে দিয়েছিলেন, যাঁর নামই ঘোষণা হোক, তাঁকে সমর্থন করতেই হবে সকলকে। তবে পুরপ্রধান নির্বাচনের বৈঠক শুরুর কিছুক্ষণ আগে নাম জানাজানি হয়ে যায়।
এ দিন পুরসভায় নিরাপত্তা ছিল জোরদার। তবে আগের দু’টি তলবি সভার আগে যে ভাবে পুর ভবনের আশেপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছিল ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট, এ দিন তা করা হয়নি।। আগের দু’দিনের মতো এ দিনের সভাতেও বিজেপি কাউন্সিলরেরা অনুপস্থিতি ছিলেন। বেলা ১১টা নাগাদ সভা শুরু হয়। অরুণের নাম ঘোষণা হওয়ার পরে প্রত্যাশিত ভাবে সকলে তাঁকে সমর্থনও জানান। তবে সভা শেষে এক কাউন্সিলরকে ক্ষোভ জানাতে জানাতে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়।
অরুণ পরে বলেন, “দল আমাকে এত বড় দায়িত্ব দেওয়ায় আমি কৃতজ্ঞ। আমি দলের সঙ্গে কথা বলেই উন্নয়নের কাজ করব।”
অরুণ শ্যামনগরের কাউন্সিলর। আগে কারখানার কর্মী ছিলেন। সেখানে কংগ্রেসের শ্রমিক ইউনিয়ন করতেন। তবে দীর্ঘ দিন ধরেই তৃণমূল শিবিরে। যে কারখানায় কাজ করতেন, সেটি বছর কয়েক আচমকাই বন্ধ হয়ে যায়।
নিজের এলাকায় জনপ্রিয় অরুণ স্বচ্ছ ভাবমূর্তির জন্য দলের নেতাদের প্রিয়পাত্র। ব্যারাকপুর লোকসভা বিজেপি দখল করার পরে অনেক কাউন্সিলরই বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। যে জনা ছ’য়েক কাউন্সিলর সে সময়ে জার্সি বদল করেননি, অরুণ তাঁদেরই এক জন।
নাম ঘোষণার পরে এ দিন কাউন্সিলরদের সঙ্গে বোর্ড মিটিংও করেছেন নবনির্বাচিত পুরপ্রধান। সেখানেই ঠিক হয়, গত কয়েক মাসের অচলাবস্থা কাটিয়ে যত দ্রুত সম্ভব পুর পরিষেবা স্বাভাবিক করতে হবে। পুর দফতরের সঙ্গে কথা বলে অস্থায়ী কর্মীদের বকেয়া বেতনের ব্যবস্থা যত দ্রুত সম্ভব করা হবে। পরে পুরকর্মীদের সঙ্গেও বৈঠক করেন পুরপ্রধান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy