ডুবে যাওয়া ঘরের সামনে মায়ের সঙ্গে তনুশ্রী। কুলতলির পশ্চিম দেবীপুরে। নিজস্ব চিত্র।
আমপানে ঘরের চাল উড়েছিল। কিন্তু জল আসেনি। এবার যে জলে ভাসতে হবে, ভাবতে পারেননি মাতলার বাঁধ থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে কুলতলির পশ্চিম দেবীপুরের বাসিন্দা সত্যরঞ্জন জানা। তাই খড়ের চালটা শক্ত করে বেঁধে ঘরেই ছিলেন। কিন্তু বুধবার রাতে মাতলা উত্তাল হয়ে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে সত্যরঞ্জনের ভিটে-মাটি। বৃহস্পতিবারও জল বেড়েছে ক্রমাগত। রাতেই স্ত্রী-ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বাড়ি থেকে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। কিন্তু ছেলেমেয়ের বই খাতা, দরকারি কাগজপত্র কিছুই বের করতে পারেননি।
সত্যরঞ্জনের মেয়ে তনুশ্রী এবার উচ্চ মাধ্যমিক দেবে। দিনকয়েক আগেই স্কুল থেকে পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড দিয়েছে। সেই কার্ড-সহ বইপত্র সবই রয়েছে ডুবে যাওয়া ঘরের ভিতর। তনুশ্রীর ভাই তন্ময় দশম শ্রেণিতে পড়ে। তারও বই-খাতা ঘরেই রয়ে গিয়েছে। সত্যরঞ্জন বলেন, “সকাল থেকে মেয়েটা কাঁদছে। শুধু বলছে, পরীক্ষাটা দিতে পারবে না। ঘরে ঢুকে যে কাগজপত্রগুলো বের করে আনব, সেই উপায়ও নেই। একে তো জলে ডুবে রয়েছে, তার উপর মাটির দেওয়াল ভেঙে পড়ছে। এই অবস্থায় ঘরে ঢুকতে গেলে বিপদ হয়ে যাবে।”
ভুবনেশ্বরীর জয়কৃষ্ণ উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ে তনুশ্রী। তনুশ্রীর মা সরস্বতী জানান, পড়াশোনার প্রতি মেয়ের খুব আগ্রহ। গ্রাম থেকে একাই সাইকেল নিয়ে রোজ স্কুলে যেত। মাধ্যমিকের সময় অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। সেই অবস্থাতেও পরীক্ষা দিয়ে পাস করে। উচ্চ মাধ্যমিক নিয়ে অনেক দিন ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। এখন অ্যাডমিট কার্ড হারিয়ে যদি পরীক্ষাটাই না দিতে পারে, সেটা ভেবেই কেঁদে ভাসাচ্ছে।
তনুশ্রীর কথায়, “বই-খাতা যায় যাক। সে না হয় বন্ধুদের থেকে জোগাড় করে পড়ব। কিন্তু অ্যাডমিট কার্ডটা না হলে তো আমাকে পরীক্ষায় বসতে দেবে না। এত দিনের পড়াশোনা বৃথা যাবে। বাড়ির যা অবস্থা, বের করাও সম্ভব নয়। জানি না কী হবে। এরকম পরিস্থিতি হবে বুঝতেই পারিনি। নাহলে আগে থেকে সরিয়ে রাখতাম।”
সকালে থেকেই জলে ডোবা বাড়ির সামনে মুখ ভার করে বসেছিল তনুশ্রী। বেলায় ফের জল বাড়তে দুই ভাই বোনকেই মামার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন সরস্বতী। তাঁর কথায়, “যেভাবে জল বাড়ছে, তাতে এরপর কী হবে জানি না। তার উপর কাল রাত থেকে খাওয়া দাওয়া নেই। তাই ছেলেমেয়েদুটোকে পাঠিয়ে দিলাম। আগে তো প্রাণটা বাঁচুক। তার পর পরীক্ষার কথা ভাবা যাবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy