Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Bhangar

সিলিকোসিসে আক্রান্তের মৃত্যু

এ বিষয়ে সন্দেশখালি ১ বিডিও সুপ্রতিম আচার্য বলেন, ‘‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী আমরা ওই সব এলাকায় সিলিকোসিস আক্রান্ত রোগীদের জন্য বিভিন্ন রকম ত্রাণ সামগ্রী পাঠিয়েছি। সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

শোকার্ত: সুবর্ণের পরিবার। নিজস্ব চিত্র

শোকার্ত: সুবর্ণের পরিবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ভাঙড়  শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:২৬
Share: Save:

বাড়ছে সিলিকোসিসে আক্রান্তের মৃত্যু-মিছিল। কিন্তু এ নিয়ে সরকারের কোনও হেলদোল নেই বলেই অভিযোগ স্থানীয় মানুষের।

সোমবার সন্ধ্যায় সন্দেশখালি ১ ব্লকের রাজবাড়ির সুন্দরীখালি গ্রামে আরও এক জন সিলিকোসিসে আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে। মৃতের নাম সুবর্ণ গায়েন (৬০)। এই নিয়ে এখনও পর্যন্ত শুধু ওই গ্রামেই মারা গেলেন ৮ জন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই এলাকায় সিলিকোসিসে আক্রান্তদের কোনও সরকারি সাহায্য মেলে না।

এ বিষয়ে সন্দেশখালি ১ বিডিও সুপ্রতিম আচার্য বলেন, ‘‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী আমরা ওই সব এলাকায় সিলিকোসিস আক্রান্ত রোগীদের জন্য বিভিন্ন রকম ত্রাণ সামগ্রী পাঠিয়েছি। সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

২০০৯ সালে আয়লার পরে সুন্দরবন-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ সর্বস্বান্ত হন। পরবর্তী সময়ে এলাকায় কোনও কাজ না থাকায় পেটের তাগিদে সন্দেশখালি ১, ২ ব্লকের রাজবাড়ি, সুন্দরীখালি, মাঝের সরবেড়িয়া, ভাঁটিদহ, আগারাটি, জেলেখালি, ধুপখালি, মিনাখাঁ ব্লকের গোয়ালদহ, দেবীতলা, ধুতুরদহ, জয়গ্রাম, ক্যানিং ২ ব্লকের পারগাঁতি এবং দেগঙ্গা ব্লক এলাকা থেকে বহু মানুষ আসানসোল, জামুড়িয়া, কুলটি, রানিগঞ্জ এলাকায় পাথর খাদানে কাজ করতে যান।

২০১১-২০১২ সালে মিনাখাঁ ব্লকের ১৮৯ জন সন্দেশখালি ১ ব্লকের প্রায় ২৫ জন শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, জ্বর, ফুসফুসের সংক্রমণ-সহ নানা উপসর্গ নিয়ে গ্রামে ফিরে আসেন। চিকিৎসা করতে গিয়ে ধরা পড়ে, সিলিকোসিস শরীরে বাসা বেঁধেছে। এখনও পর্যন্ত ওই সব এলাকায় সিলিকোসিসে আক্রান্তে প্রায় ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সন্দেশখালি ১ ব্লকের রাজবাড়ির সুন্দরীখালি গ্রামে সুবর্ণ গায়েনের আগে মৃত্যু হয় নিতাই মুন্ডা, নিতাই সর্দার, নিমাই মণ্ডল ও জীবন মণ্ডলের। জীবন ও নিমাই দুই ভাই।

মঙ্গলবার সকালে কান্নায় ভেঙে পড়েন মৃত সুবর্ণর স্ত্রী মধুমিতা। আয়লার সময়ে ঘরবাড়ি ভেঙে গিয়েছিল। সংসারের হাল ধরতেই ২০০৯ সালে গ্রামের কয়েক জনের সঙ্গে পশ্চিম বর্ধমানের একটি পাথর খাদানে কাজে গিয়েছিলেন সুবর্ণ। ২০১১ সালে অসুস্থ অবস্থায় ফিরে আসেন। রোগ আর সারেনি।

২০০৮ সালে সুবর্ণর বড় ছেলে চন্দন নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন অসুস্থ হয়ে মারা যায়। ছোট ছেলে চঞ্চল মাধ্যমিক পরীক্ষা না দিয়ে পড়া ছেড়ে দেয়। সংসারের হাল ধরতে এবং বাবার চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ নেয় সে। এখনও ওই গ্রামে বিজন পাইক, শক্তি দুয়ারি, শঙ্কর সর্দারদের মতো অনেকেই সিলিকোসিসে আক্রান্ত।

নিতাই, নিমাইয়ের পরিবারের অভিযোগ, তাঁদের সংসারেও একমাত্র রোজগেরে ছিলেন স্বামী। অথচ স্বামী মারা যাওয়ার পরে এই সমস্ত পরিবারগুলি কোনও সরকারি সাহায্য পায়নি। মেলেনি ক্ষতিপূরণের টাকাও। ওই সমস্ত পরিবারগুলির এখন করুণ অবস্থা। ওই পরিবারগুলি থেকে জানানো হয়, এখনও পর্যন্ত ওই এলাকায় কয়েকটি সরকারি মেডিক্যাল ক্যম্প হয়েছে মাত্র। তা ছাড়া অন্য কোনও সুবিধা তাঁরা পায়নি। এ দিক সিলিকোসিস আক্রান্ত রোগীদের পাশে দাঁড়াতে গঠন করা হয়েছে ‘সিলিকোসিস আক্রান্ত সংগ্রামী শ্রমিক কমিটি।’ ওই কমিটির সভাপতি সাইদুল পাইকেরও অভিযোগ, ‘‘ওই গ্রামের অসহায় গরিব সিলিকোসিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য সরকার কিছু করেনি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Silicosis Bhangar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy