Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Firecrackers Market

চম্পাহাটির ঘটনায় মৃত আরও এক, শত চেষ্টাতেও থামছে না বাজি তৈরি

স্থানীয় সূত্রের খবর, অমর নানা দুষ্কর্মে জড়িত ছিলেন। পুলিশের খাতাতেও তাঁর নাম রয়েছে। তবে সুদীপ এলাকায় ভাল মানুষ হিসাবেই পরিচিত ছিলেন। তিনি রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করতেন।

An image of firecrackers

চম্পাহাটি থেকে উদ্ধার হওয়া শব্দবাজি। শনিবার। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বারুইপুর শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:৫২
Share: Save:

চম্পাহাটির বাজি মহল্লায় বিস্ফোরণে জখম আরও এক জনের মৃত্যু হল। গত বৃহস্পতিবার চম্পাহাটির হাড়ালে একটি নির্মীয়মাণ বাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটে। সেখানে নিষিদ্ধ বাজি তৈরি করা হচ্ছিল বলেই প্রাথমিক তদন্তের পরে জানায় পুলিশ। সেই ঘটনায় দু’জন জখম হয়েছিলেন। তাঁদের এক জন সুদীপ নাইয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আগেই মারা যান। শনিবার কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় অমর বিশ্বাস (৩২) নামে জখম অন্য জনের।

স্থানীয় সূত্রের খবর, অমর নানা দুষ্কর্মে জড়িত ছিলেন। পুলিশের খাতাতেও তাঁর নাম রয়েছে। তবে সুদীপ এলাকায় ভাল মানুষ হিসাবেই পরিচিত ছিলেন। তিনি রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করতেন। সে দিন অমরই তাঁকে ডেকে আনেন বাজি তৈরির কাজে সাহায্য করার জন্য। তখনই দুর্ঘটনা ঘটে। সুদীপের স্ত্রী ও বছর তিনেকের ছেলে রয়েছে।

এ দিকে, বিস্ফোরণের পর থেকে দফায় দফায় এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে প্রচুর নিষিদ্ধ বাজি ও বাজির মশলা উদ্ধার করেছে পুলিশ। সে দিনের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে কয়েক জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। এ দিনও বাজি মহল্লায় তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিনের তল্লাশিতে প্রায় ৩০০ কেজি নিষিদ্ধ বাজি উদ্ধার হয়েছে।

সপ্তাহ কয়েক আগে হাড়ালে বাজির মশলা থেকে একটি বন্ধ বাড়িতে আগুন লেগে গিয়েছিল। ওই বাড়িতে সেই সময়ে কেউ না থাকায় বড় দুর্ঘটনা ঘটেনি। এর পরে বৃহস্পতিবার নির্মীয়মাণ ওই বাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটে। চম্পাহাটিতে যে নিষিদ্ধ বাজি তৈরির কাজ সমানে চলছে, পর পর ঘটে চলা অঘটন এবং পুলিশের প্রচুর পরিমাণ শব্দবাজি উদ্ধারের ঘটনাতেই তা পরিষ্কার। বার বার পুলিশি অভিযান ও সতর্কবার্তার পরেও কেন নিষিদ্ধ বাজি তৈরি বন্ধ করা যাচ্ছে না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। শব্দবাজি নিয়ে সরকারি তরফে কড়াকড়ি চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। তবে চম্পাহাটিতে লুকিয়ে-চুরিয়ে বাজি তৈরি চলতই। গত বছরের মাঝামাঝি রাজ্যের একাধিক জায়গায় বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের জেরে চম্পাহাটির বাজি মহল্লায় বাজি তৈরির উপরে কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রশাসন। সেই সময়ে পুলিশি ধরপাকড়ে প্রচুর নিষিদ্ধ বাজিও উদ্ধার হয়। সেই সময়ে কিছু দিন বাজি তৈরির কাজ বন্ধ ছিল এলাকায়। তবে দীপাবলির বাজারের কথা মাথায় রেখে অচিরেই কাজ শুরু হয়ে যায়। কালীপুজোর আগে ফের পুলিশি হানায় প্রচুর বাজি উদ্ধার হয় এলাকা থেকে। এমনকি, একাধিক বেআইনি গোপন কারখানারও সন্ধান পায় পুলিশ। সেখানে গিয়ে পুলিশ দেখে, হাজারে হাজারে শব্দবাজি তৈরি করে রোদে শুকোনো হচ্ছে। সে সব বাজেয়াপ্ত করা হয়। তবে এত কিছুর পরেও কালীপুজোর সময়ে বিভিন্ন দোকানে প্রকাশ্যেই নিষিদ্ধ শব্দবাজি বিক্রি হতে দেখা গিয়েছিল।

স্থানীয় সূত্রের খবর, সম্প্রতি বিয়ের মরসুমে বাজির চাহিদা বেড়েছে। তার উপরে সামনে নির্বাচন রয়েছে। সেই সময়েও বাজির চাহিদা বাড়বে। সে কথা মাথায় রেখে অনেকেই
লুকিয়ে বাজি তৈরি করছেন। পুলিশি ধরপাকড় চললে কাজ বন্ধ থাকে কিছু দিন। তার পরে ফের শুরু হয়ে যায় কাজ। বাজি ব্যবসায়ী সমিতি অবশ্য এলাকায় নিষিদ্ধ বাজি তৈরির কথা অস্বীকার করেছে। সংগঠনের সহ-সম্পাদক সুধাংশু দাস বললেন, “নিয়ম মেনেই বাজি তৈরি হচ্ছে। কেউ নিয়ম ভাঙলে সংগঠনের তরফে কড়া পদক্ষেপ করা হয়। প্রশাসনও ব্যবস্থা নেয়। সে দিন সরস্বতী পুজোর বিসর্জনের জন্য কয়েক জন তুবড়ি তৈরি করছিলে‌ন। তখনই কোনও ভাবে দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে।”

বারুইপুরের এসডিপিও অতীশ বিশ্বাস বলেন, “লাগাতার অভিযান চালানো হচ্ছে। এলাকায় মাইকে প্রচারও চলছে। নিষিদ্ধ বাজি তৈরির খবর পেলেই কড়া পদক্ষেপ করা হবে।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE