লোহাচড়া ডুবেছে আগেই, বিপদ ঘনাচ্ছিল ঘোড়ামারা দ্বীপেরও। দ্বীপ ছেড়ে অনেকে চলে যেতে শুরু করেছিলেন। সরকারি পরিকাঠামোও ধীরে ধীরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল মূল ভূখণ্ডে। কিন্তু এরই মধ্যে আশার ‘নতুন বালুচর’ দেখতে পেয়েছেন দ্বীপবাসী। ঘোড়ামারা দ্বীপ লাগোয়া খাসিমারা গ্রামের পাশে জেগে উঠেছে নতুন চর। এলাকার বাসিন্দারা নিজেদের উদ্যোগে কাঠ, বাঁশ দিয়ে নতুন চর আটকানোর চেষ্টা করছেন। সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা বলেন, ‘‘বাম আমলে ঘোড়ামারা দ্বীপকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। আমরা ক্ষমতায় এসে সেই তকমা মুছে দিয়ে এলাকায় সার্বিক উন্নয়ন করে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। নতুন চর তৈরি হয়েছে শুনলাম, একদিন দেখতে যাব। কী ভাবে ওই চর আটকানো যায়, সেই ব্যবস্থা দ্রুত করা হবে। কংক্রিটের রাস্তা, বাড়ি বাড়ি পানীয় জল, সোলার আলো— সবই রয়েছে এলাকায়।’’ আজ, শুক্রবার সাগরদ্বীপের ভাঙন ও অন্যান্য পরিস্থিতি নিয়ে বিভাগীয় ইঞ্জিনিয়ারদের বৈঠক ডেকেছেন সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইঞা। বৃহস্পতিবার মন্ত্রী বলেন, ‘‘কপিলমুনির আশ্রম-সহ গোটা দ্বীপের বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা করা হবে। সেখানেই ঘোড়ামারার এই চর সম্পর্কে সেচ দফতর কী করতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করব। সরকার প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ করবে।’’ অতীতে ঘোড়ামারা সাগর দ্বীপের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। পরে এটি বিচ্ছিন্ন হয়ে একটি আলাদা দ্বীপের চেহারা নেয়। ধীরে ধীরে সঙ্কুচিত হতে শুরু করে। আগে ধান হত। বড় বড় পান ফলত। এ জন্য বিখ্যাত ছিল ঘোড়ামারা, খাসিমারা এবং লোহাচর। এখন সে সব অতীত। পড়ে আছে শুধু ঘোড়ামারা। প্রতি দিন জমি জলে যাওয়ায় ধান উৎপাদন প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে। ২০১০ সাল থেকে ভাঙনের গ্রাসে তলিয়ে গিয়েছে লক্ষ্মীনারায়ণপুর, বাগপাড়া, বৈষ্ণবপাড়া এবং খাসিমারার একাংশ। খাসিমারা গ্রামে নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আঙুল তুলে নতুন চরের সীমারেখা টানার চেষ্টা করছিলেন বছর পঞ্চাশের ভগবতী রুইদাস। এই নদীতেই ডুবেছে তাঁর বাড়ি, মাটির ঘর, গাছপালা, পুকুর, চাষের জমি। নদীর তাড়া খেয়ে পিছনে ছুটেছেন বার বার। সেই নদীতে নতুন চর দেখে আশায় বুক বাঁধছেন। আবার মনে পড়ছে পুরনো দিনের গল্প। বাসিন্দা মানস কারক বলেন, ‘‘প্রায় ১১০০ মিটার নতুন চর সৃষ্টি হয়েছে। বোল্ডার দিয়ে আটকানো না গেলে ভাঙন অব্যাহত থাকবে।’’ ভূগোলের শিক্ষক সুবেশ মণ্ডল বলেন, ‘‘নদীর প্রবাহের গতি কমে গেলে এবং সে সময়ে নদীর গর্ভে পলি, বালি, নুড়ি ইত্যাদি সঞ্চিত হওয়ার কারণে চর সৃষ্টি হয়। আটকানোর ব্যবস্থা না করলে বড় ঢেউ এসে ভেঙে দিয়ে যাবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)