ফাঁকা ট্রেন থেকে নামলেন এক তরুণী। টাকি স্টেশনে তোলা নিজস্ব চিত্র ।
রাত সওয়া ১২টায় টাকি স্টেশনে এসে থামল হাসনাবাদগামী শেষ ট্রেন। নামলেন গুটিকয়েক লোক। এক তরুণীকেও দেখা গেল। রীতি দাস নামে ওই তরুণী জানালেন, তাঁর বাড়ি টাকি দত্তপাড়ায়। কলকাতার এক আর্ট কলেজে পড়েন। প্রায়ই ফিরতে দেরি হয়। বাড়ি থেকে কেউ না কেউ স্টেশনে এসে নিয়ে যান। এ দিনও দেখা গেল, রীতির দিদি সাইকেলে করে তাঁকে নিতে এসেছেন।
রীতি বলেন, “প্রায়ই শেষ ট্রেনে ফিরি। বেশিরভাগ দিনই কামরায় কোনও পুলিশকর্মী দেখি না। এ দিকে, বারাসতের পরে ক্রমশ খালি হয় মহিলা কামরা। চাঁপাপুকুর বা বসিরহাটের পরে সাধারণত আর কোনও মহিলা যাত্রী থাকেন না। তাই সাধারণ কামরায় চলে আসতে হয় ভয়ে। তবে সেখানেও নানা উৎপাত চলে। অনেকেই কামরার মধ্যে নেশার আসর বসায়। খুব ভয় লাগে। দু’এক জনের বেশি থাকি না। ফলে প্রতিবাদ করার সাহস হয় না। ১০টা বেজে গেলে স্টেশনে নেমে সে ভাবে টোটোও মেলে না। একা ফিরতে গিয়ে কয়েক বার কিছু বাজে ছেলের খপ্পরে পড়েছিলাম। তারপর থেকে আর একা ফেরার সাহস হয় না। বাবা বা দিদি আসেন।”
রাতের ট্রেনে এমনই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন বহু মহিলা। অভিযোগ, কামরায় সে ভাবে নিরাপত্তারক্ষীর দেখা মেলে না। স্টেশন চত্বরেও নিরাপত্তারক্ষী থাকে না বললেই চলে। ফলে নানা ‘উৎপাত’ সহ্য করতে হয়।
রাত ১১টা নাগাদ দেখা গেল, টাকি স্টেশন চত্বর শুনশান। রাস্তায় লোক নেই। সাইকেল গ্যারাজগুলিও বন্ধ। বন্ধ টিকিট কাউন্টার। সামনে বসেছিলেন এক ভবঘুরে। যাত্রী-ছাউনির নীচে আলো থাকলেও প্ল্যাটফর্মের এক দিকে সম্পূর্ণ অন্ধকার। আর এক দিকে টিমটিম করছে আলো। প্ল্যাটফর্মের শেষ প্রান্তে একটি খাবারের দোকানে মৃদু আলো দেখা গেল। দোকানদার মঙ্গল মণ্ডল বললেন, “এই দিকে রেলের যে আলো ছিল, সেগুলো অকেজো হয়ে গিয়েছে। প্ল্যাটফর্মের পাশে যে দোকান আছে, সেই দোকানের আলো জ্বললে এলাকাটা আলোকিত হয়। কিন্তু রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দোকান বন্ধ হয়ে গেলে প্ল্যাটফর্ম অন্ধকার হয়ে যায়।”
ওই ট্রেনেই টাকিতে নামেন বীথিকা হালদার। সঙ্গে ছিলেন স্বামী মানস। বীথিকা বলেন, “ছেলে আজ শিয়ালদহ থেকে রাতের ট্রেনে ভিন্ রাজ্যে যাচ্ছে। তাই ট্রেনে তুলে দিতে গিয়েছিলাম। ফিরতে রাত হয়ে গেল। গোটা ট্রেনে কোনও পুলিশ কর্মী দেখলাম না। চার দিকে যা পরিস্থিতি, তাতে রাতে একা বেরোনোর সাহস পাইনি, সঙ্গে স্বামীও এলেন।”
আর এক তরুণীকে দেখা গেল, ট্রেন থেকে নেমে হনহনিয়ে বাইরের দিকে এগিয়ে যেতে। কথা বলার চেষ্টা করেও সুবিধা হল না। বোঝা গেল, পরিস্থিতি এমনই, অচেনা কারও সঙ্গে কথা বলতে প্রস্তুত নন।
বসিরহাট জিআরপির সূত্রের খবর, রাতের ট্রেনে নিরাপত্তারক্ষী থাকে। তবে গোটা ট্রেনের বিভিন্ন কামরার দায়িত্বে থাকেন জনা দু’য়েক নিরাপত্তারক্ষী। ফলে সব যাত্রী হয় তো সব সময়ে দেখতে পান না। যে কামরায় নিরাপত্তারক্ষী নেই, সেখানে কোনও সমস্যা হলে যাত্রীদের কী হবে, সেই প্রশ্নের অবশ্য সদুত্তর মেলেনি।
অভিযোগ, মধ্যমপুর স্টেশনে বিকেলের পরের ট্রেনে গেটের কাছে কিছু অল্পবয়সি ছেলেদের উৎপাত চলে। নিত্যযাত্রীরা জানান, টিকিট পরীক্ষকেরা তেমন আসেন না এই লাইনে। তাই বিনা টিকিটে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত এক শ্রেণির যুবকের দল ট্রেনে চেপে ঘুরে বেড়ায়। তারাই উৎপাত করে। জিআরপির দাবি, নজরদারি চালানো হয়, ধরপাকড়ও হয়।
শুধু স্টেশন চত্বরেই নয়, রাত ১২টার পরে টাকি থুবা মোড়, কলেজ মোড় চত্বরেও পুলিশকর্মীর দেখা মিলল না। হিঙ্গলগঞ্জ রোড, বায়লানি রোডেও কোথাও পথে পুলিশ কর্মীদের দেখা মেলেনি। তবে টাকি চৌমাথায় দুই সিভিক ভলান্টিয়ারের দেখা পাওয়া গেল। হাসনাবাদ বনবিবি সেতুর কাছে পুলিশের একটি গাড়ি দেখা গেল অনেক রাতে। হাসনাবাদ থানার আইসি গোপাল বিশ্বাস বলেন, “আমরা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রাতে-দিনে নজরদারি বাড়িয়েছি। সাদা পোশাকের পুলিশও থাকছে। রাতে সব মিলিয়ে অন্তত তিনটি গাড়ি টহল দেয় এলাকায়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy