ভিড় রাস্তায় অটোর বেপরোয়া গতি আর নির্লিপ্ত ভাবে রাস্তা জুড়ে চলা টোটো নিয়ে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের বাসিন্দাদের অভিযোগ ভূরি ভূরি। কিন্তু প্রশাসন যে বিষয়টি নিয়ে কড়া হতে পারেনি, মঙ্গলবার কার্যত তা স্পষ্ট হয়ে গেল। এ দিন অটো ও টোটোর রেষারেষির জেরে মৃত্যু হল আইসিএসই-র দশম শ্রেণির এক পরীক্ষার্থীর মায়ের। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম শিউলি সেনগুপ্ত (৩৯)। তাঁর মেয়ে সৃজা সোদপুরের একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ছাত্রী। সৃজার আইসিএসই পরীক্ষার সিট পড়েছে শ্যামনগর আতপুরের একটি স্কুলে।
ঘোলার বাসিন্দা শিউলি এ দিন সকালে মেয়েকে নিয়ে সোদপুর স্টেশন থেকে ট্রেনে করে শ্যামনগরে আসেন। স্টেশনের সামনে থেকে আতপুরের স্কুলে যাওয়ার জন্য একটি অটোয় ওঠেন তাঁরা। সঙ্গে ছিলেন আরও দুই অভিভাবক ও পরীক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে আসা আরও কয়েক জন পরীক্ষার্থী ছিল পিছনের একটি অটোয়। অভিযোগ, শ্যামনগর পাওয়ার হাউস মোড়ের কাছে যানজটের মধ্যেই পাশাপাশি যাওয়া একটি টোটোর বাঁ দিক দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে যেতে গিয়ে আচমকা ব্রেক কষে শিউলিদের অটোটি। ব্রেক কষার অভিঘাতে সেটি উল্টে যায়। লোহার রডের আঘাত লাগে চালকের পাশে বসা শিউলির মাথায় ও ঘাড়ে। জখম হয় পিছনের আসনে বসা সৃজা-সহ বাকিরাও।
ভিড় রাস্তায় এ ভাবে অটো উল্টে যাওয়ায় পিছনে থাকা অন্য যানবাহন থেকে নেমে পড়েন যাত্রীরা। জখম ছ’জনকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে পরীক্ষার্থীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অচেতন শিউলিকে নিয়ে অন্য অভিভাবকেরা ভাটপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তবে, পরীক্ষা চলাকালীন মায়ের মৃত্যুর খবর সৃজাকে জানানো হয়নি।
অটোয় পাঁচ জনের বেশি যাত্রী তোলার নিয়ম নেই। চালকের ডান দিকে কোনও যাত্রীকে বসানোও বেআইনি। কিন্তু জনবহুল পথে এই নিয়ম মানার বালাই অটো-টোটোর চালকদের থাকে না বলেই অভিযোগ স্থানীয়দের। নিয়ম ভাঙার অভিযোগে অটোচালক আফজল আলিকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ব্যারাকপুরের সাংসদ পার্থ ভৌমিক বলেন, ‘‘খুবই দুঃখজনক ঘটনা। নিয়ম ভেঙে অটো-টোটো চালালে প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ করবে। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে যান চলাচল বরদাস্ত করা যাবে না।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)