রাস্তার মাঝেই তৈরি হয়েছে সাঁকো। নিজস্ব চিত্র
ঝড়-জলের তোড়ে মাঝখানের খানিকটা অংশে রাস্তা ভেঙে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। আমপানের অবদান। তারপরে কেটে গিয়েছে তিনটে মাস। এখনও রাস্তার ৭০ ফুট অংশ সারাই হয়নি। ঝুঁকি নিয়েই চলছিল যাতায়াত। সম্প্রতি গ্রামের মানুষ নিজেরাই মাথা খাটিয়ে উপায় বের করেছেন। রাস্তার ভাঙা অংশে বাঁশের সাঁকো বানিয়ে নিয়েছেন। তবে খান কতট বাঁশের উপর দিয়ে যাতায়াতও যে খুব সহজ তা নয়। কিন্তু গ্রামের লোকের বক্তব্য, ‘‘কেউ যখন কিছু করবেই না, আমাদের যতটুকু সামর্থ্য, তেমনই করে কাজ চালাচ্ছি।’’
হাসনাবাদ ব্লকের পাটলি খানপুর পঞ্চায়েতের বেলিয়াডাঙাল লে পাড়ার রাস্তাটির এমনই অবস্থা। ২০১৫ সালে বেলিয়াডাঙা লে পাড়া থেকে পশ্চিম ঘুনি পর্যন্ত ঢালাই রাস্তা তৈরি করে স্থানীয় পঞ্চায়েত। এই রাস্তা দিয়ে লে পাড়ার কয়েক'শো বাসিন্দা যাতায়াত করেন। আমপানের পর দিন স্থানীয় টিয়ামারি গ্রামে ডাঁসা নদীর বাঁধ ভেঙে যায়। সেই জল ঢুকে গোটা বেলিয়াডাঙা ভাসিয়ে দেয়। জলের তোড়ে লে পাড়ার ঢালাই রাস্তায় প্রায় ৭০ ফুট অংশ ভেঙে বেরিয়ে যায় রাস্তার পাশের পুকুরে। রাস্তার এক পাশে পুকুর। অন্য দিকে, নিচু ধানের জমি। আমপানের পর থেকে রাস্তার এই ভেঙে যাওয়া অংশে জল জমেছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, সে সময়ে রাস্তার এই অংশটুকু কেউ সাঁতার কেটে, কেউ বাচ্চাকে কাঁধে নিয়ে পার হতেন।
আমপানের এক মাস পরে জল সরে যায়। তবে ভেঙে যাওয়া রাস্তার ওই অংশ তখন এক হাঁটু কাদার তলায়। সে ভাবেই যাতায়াত করতে হত। স্থানীয় বাসিন্দা রামকৃষ্ণ লে গ্রামবাসীদের প্রস্তাব দেন, নিজেদের বাগান থেকে কয়েকজন যদি কয়েকখানা বাঁশ দিতে পারেন, তবে এখানে সাঁকো করা যেতে পারে। সেই মতো বাপ্পা লে, কর্ণ লে, শুভময় লে নামে গ্রামের যুবকেরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাঁশ সংগ্রহ করে আনেন। সকলে মিলে সাঁকো তৈরি করেন।
রামকৃষ্ণ লে, বিষ্ণু লে, বাপ্পা লে বলেন, ‘‘এখন রাস্তার এই অংশ পেরোতে কাদা মাখতে বা জলে ভিজতে হচ্ছে না। তবে দুর্বল বাঁশের সাঁকো দিয়ে সাইকেল নিয়ে বা ভারী মালপত্র নিয়ে যাওয়া খুবই সমস্যার। মাঝে মধ্যে কেউ কেউ সাঁকোর উপর থেকে কাদায় পড়েও যাচ্ছেন।” স্থানীয় বাসিন্দারা আরও জানান, প্রশাসনের রাস্তার সারানোর ব্যাপারে নজর নেই। এ দিকে ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে বাঁশের নড়বড়ে সাঁকো। কত দিন যে এ ভাবেও যাতায়াত করা যাবে, তা নিয়ে গ্রামবাসীরা চিন্তায় রয়েছেন।
যেহেতু লে পাড়ার এটাই একমাত্র রাস্তা, তাই এই রাস্তা দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা দূর থেকে সাইকেলে করে জল আনতেও সমস্যায় পড়ছেন। একবার সাইকেল কাঁধে করে পার করছেন। তারপর এক এক করে জলের ব্যারেল পার করছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মালপত্র নিয়ে চকপাটলি বাজার বা হাসনাবাদ যেতে সমস্যায় পড়ছেন। এই পাড়ার সবটুকু ঢালাই রাস্তা নয়। বেশ কিছুটা ইটের রাস্তা আছে। সেখানে বেশ কিছু জায়গায় অনেকটা অংশ জুড়ে ইটই নেই। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আমপানের পর থেকে এমন হাল। এ ছাড়া, রাস্তা এত সরু যে পাশাপাশি দু'টো বাইকও যেতে পারে না। কেউ অসুস্থ হলেও এই পথে গাড়ি ঢুকতে চায় না বলে দাবি স্থানীয়দের। স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রধান পারুল গাজি বলেন, “লে পাড়ায় মাটি পেতে সমস্যা হচ্ছে। রাস্তা খারাপ থাকায় মাটির গাড়িও ঢুকছে না। আমরা তবুও চেষ্টা করছি, খুব দ্রুত মাটির বন্দোবস্ত করে ঢালাই রাস্তার ভেঙে যাওয়া অংশ ঠিক করতে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy