ধৃতদের থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ইলা বিশ্বাস।(ইনসেটে) ছবি: সুজিত দুয়ারি
এক মহিলাকে কুপিয়ে, গলার নলি কেটে খুন করে দেহ পরিত্যক্ত সেপটিক ট্যাঙ্কে রেখে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেছিল তাঁর ননদ-নন্দাই ও প্রতিবেশী এক মহিলা বলে অভিযোগ। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। শনিবার রাতে ওই মহিলার বস্তাবন্দি দেহ উদ্ধার করল পুলিশ। অশোকনগর থানার সেনডাঙার আনন্দপাড়ার ঘটনা।
পুলিশ জানিয়েছে, নিহত মহিলার নাম ইলা বিশ্বাস (৪৩)। নিহতের স্বামী ইন্দ্রজিৎ বিশ্বাসের অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার রাতেই পুলিশ তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। ধৃতদের নাম রিনা মণ্ডল, বিপদ মণ্ডল এবং শিপ্রা বিশ্বাস। ধৃতদের রবিবার বারাসত জেলা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন। পুলিশ দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য বারাসত জেলা হাসপাতালে পাঠিয়েছে। খুন এবং প্রমাণ লোপাটের মামলা রুজু করে পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশ অস্ত্রটিও উদ্ধার করেছে।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কিছু দিন ধরেই সম্পত্তি নিয়ে এই পরিবারে বিবাদ চলছিল। আনন্দপাড়ার বাসিন্দা ইন্দ্রজিতের বাড়িতে গরু আছে। তিনি দুধের ব্যবসা করেন। ওই দিন সকালে তিনি দুধ নিয়ে বাড়ির বাইরে গিয়েছিলেন। বাড়িতে ছিলেন তাঁর স্ত্রী ইলা। একই বাড়িতে ছিলেন বোন রিনা ও তার স্বামী বিপদ এবং ইন্দ্রজিতের প্রতিবন্ধী দিদি কল্পনা। অভিযোগ, ঘরে ইলাকে একা পেয়ে পিছন থেকে ধারাল দা দিয়ে ইলার ঘাড়ে কোপ মারে বিপদ। রক্তাক্ত অবস্থায় ইলা লুটিয়ে পড়েন। এরপর ইলাকে এলোপাথাড়ি কোপায় বিপদ ও রিনা। মৃত্যু নিশ্চিত করতে গলার নলি কেটে দেওয়া হয়। ঘাড়-গলা কার্যত আলাদা করে দেওয়া হয়। ইলা মারা গিয়েছে নিশ্চিত হওয়ার পর তারা দেহ লোপাটের পরিকল্পনা করে।
পুলিশ জানিয়েছে, রিনা প্রতিবেশী মহিলা শিপ্রাকে ফোন করে ডেকে আনে। তিনজন মিলে দেহটি একটি বস্তায় ঢুকিয়ে টেনে নিয়ে যায় বাড়ির পিছনে একটি পরিত্যক্ত সেপটিক ট্যাঙ্কের কাছে। বস্তাবন্দি মৃতদেহ সেখানে ঢুকিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় সেপটিক ট্যাঙ্কের মুখ। ঘরে বাইরে পড়ে থাকা রক্ত তারা জল দিয়ে ধুয়ে দেয়।
কী ভাবে দেহটি উদ্ধার হল? পুলিশ জানিয়েছে, দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ ইন্দ্রজিৎ বাড়ি এসে স্ত্রীকে না দেখে খোঁজাখু্ঁজি শুরু করেন। রিনা-বিপদের কাছে জানতে চাইলে তারা জানে না বলে। ইন্দ্রজিৎ আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে খোঁজ নেওয়া শুরু করেন। ইন্দ্রজিতের নজরে পড়ে বাড়িতে রক্ত পড়ে আছে। কয়েকটি জায়গা জল দিয়ে সাফ করা হয়েছে। রক্তের দাগ দেখে সন্ধ্যায় তিনি বাড়ির পিছনে সেপটিক ট্যাঙ্ক পর্যন্ত গিয়ে দেখেন তার মধ্যে বস্তাবন্দি দেহ। প্রতিবেশী ও পুলিশকে খবর দেন তিনি। পুলিশ এসে দেহটি উদ্ধার করে।
জেরার সময় ধৃতেরা পুলিশকে জানায়, ইলাকে কয়েক মাস আগে ইন্দ্রজিৎ বিয়ে করেন। এটা ইন্দ্রজিতের দ্বিতীয় বিয়ে। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক নেই। কয়েক মাস আগে ইন্দ্রজিতের বোন রিনা রাজস্থানে আত্মীয়ের বাড়ি গিয়ে বিয়ে করে। লকডাউনের মধ্যে স্বামী বিপদকে নিয়ে আনন্দপাড়ার বাড়িতে আসে তারা। ইন্দ্রজিতদের বাস্তুভিটেটি কল্পনার নামে ছিল। রিনা যখন রাজস্থানে ছিল তখন কল্পনা বাস্তুভিটে ভাই ইন্দ্রজিতের নামে লিখে দেন। রিনা এবং তার স্বামী বিপদ বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি। তারা সম্পত্তির ভাগ দাবি করে। তাদের বক্তব্য, প্রতিবন্ধী দিদির কাছ থেকে ইন্দ্রজিৎ জোর করে বাড়িটি লিখিয়ে নিয়েছে। ইন্দ্রজিতের কাছে বাড়ির ভাগ চায় তারা। কিন্তু ইন্দ্রজিৎ ও তাঁর স্ত্রী ইলা সম্পত্তির ভাগ দিতে অস্বীকার করে। রিনাকে তারা শ্বশুরবাড়ি চলে যেতে বলেছিলেন। এরপরই রিনা ও বিপদ মিলে ইলাকে খুন করার পরিকল্পনা করে। ইলার দাদা সুধীর বলেন, "বোনের খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।" পুলিশ জানিয়েছে, মুরগি খামারে বেআইনি হুকিংয়ের অভিযোগে রিনা আগেও জেল খেটেছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy