Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
TMC

নকশা বদলে গিয়ে নেতার বাড়ির সামনে হাজির পথ

ভাঙড়ের জমি, জীবিকা, বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির অভিযোগ, বাংলার গ্রামীণ সড়ক যোজনা প্রকল্পে ভাঙড় ২ ব্লকের পোলেরহাট ২ পঞ্চায়েতের মাছিভাঙা থেকে খামারাইট পর্যন্ত রাস্তা তৈরি কথা ছিল।

এই সেই বিতর্কিত রাস্তা। নিজস্ব চিত্র।

এই সেই বিতর্কিত রাস্তা। নিজস্ব চিত্র।

সামসুল হুদা
ভাঙড়  শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:১৮
Share: Save:

তিনি শাসকদলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা। এলাকার হর্তাকর্তা। তার উপরে আবার পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি।

অভিযোগ, এ হেন নেতার ইচ্ছায় নাকি গোটা একটা রাস্তা নকশা বদলে বেঁকেচুরে হাজির তাঁর বাড়ির সামনে!

ভাঙড়ের জমি, জীবিকা, বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির অভিযোগ, বাংলার গ্রামীণ সড়ক যোজনা প্রকল্পে ভাঙড় ২ ব্লকের পোলেরহাট ২ পঞ্চায়েতের মাছিভাঙা থেকে খামারাইট পর্যন্ত রাস্তা তৈরি কথা ছিল। আড়াই কিলোমিটার রাস্তা তৈরির জন্য প্রায় দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। অভিযোগ, যেখান দিয়ে রাস্তা তৈরির কথা ছিল, সেখান দিয়ে রাস্তা না হয়ে নতুনহাট থেকে গাজিপুর পর্যন্ত তৈরি হয়েছে। এ দিকে, ‘খামারাইট থেকে মাছিভাঙা’ পর্যন্ত নাম লেখা রাস্তার বোর্ড লাগানো হয়েছে নতুন রাস্তায়, জমাদারপাড়ার মোড়ে। বিরোধীদের মতে, ওই বোর্ডই সোজাসাপ্টা বলে দিচ্ছে, যে রাস্তা হওয়ার কথা ছিল, তা না হয়ে ওই একই বরাদ্দে তৈরি হয়েছে অন্য রাস্তা। তাঁদের আরও দাবি, ভাঙড় ২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি তথা তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের বাড়ি ওই এলাকায়। তাঁর বাড়ির সামনে দিয়ে রাস্তা নিয়ে যাওয়ার জন্যই এই ষড়ষন্ত্র!

বারুইপুরের মহকুমাশাসক সুমন পোদ্দার বলেন, ‘‘জেলার নির্দেশে আমরা ওই রাস্তা তৈরির বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিয়েছি। প্রাথমিক ভাবে আমরা দেখেছি, যে রাস্তাটি হওয়ার কথা ছিল, তার পরিবর্তে একটু দূরে অন্য রাস্তা তৈরি হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পুরো বিষয়টি দেখছেন।

লাউহাটি-হাড়োয়া রোডের এক দিকে মাছিভাঙা ও খামারাইট গ্রাম। অন্য দিকে গাজিপুর গ্রাম। আরাবুলের বাড়ি ওই গাজিপুর গ্রামেই। অভিযোগ, আরাবুল ও তাঁর পুত্র হাকিমুল প্রভাব খাটিয়ে সরকারি অনুমোদিত রাস্তাটির নকশা পরিবর্তন করে বরাদ্দকৃত টাকায় নিজেদের এলাকার রাস্তা তৈরি করে নেন। আরাবুলের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘কোনও দুর্নীতি করা হয়নি। খামারাইট ও মাছিভাঙা গ্রামের মধ্যে রাস্তা তৈরির জন্য জমি পাওয়া যায়নি। সে কারণে সরকারি আধিকারিকেরা সব দিক খতিয়ে দেখে ওই রাস্তা তৈরির জন্য অনুমতি দেন। এর মধ্যে কোনও অন্যায় বা ভুল নেই।’’ জমির সমস্যার জন্য প্রকল্প আটকে ছিল বলে দাবি করেছেন আরাবুল-পুত্র তথা পোলেরহাট ২ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান হাকিমুল ইসলামও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কাজ না হলে টাকাটাই ফেরত চলে যেত।’’

প্রায় চার বছর আগে পাওয়ার গ্রিড বিরোধী জমি আন্দোলনের জন্য স্থানীয় লোকজন জমি, জীবিকা, বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশ রক্ষা কমিটি নামে সংগঠন তৈরি করেন। জমি আন্দোলনের ‘আঁতুড়ঘর’ হিসেবে পরিচিত মাছিভাঙা ও খামারাইট গ্রাম। সে সময়ে ওই দুই গ্রামের মধ্যে যোগাযোগের জন্য রাস্তার দাবি তুলেছিলেন আন্দোলনকারীরা। পরবর্তী সময়ে সেই দাবি মেনে ওই এলাকায় বাংলার গ্রামীণ সড়ক যোজনা প্রকল্পে রাস্তা তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয় সরকারি ভাবে।

জমি কমিটির অভিযোগ, অনুমোদিত রাস্তাটির পরিবর্তে আরাবুল ও তাঁর পুত্র হাকিমুল নকশা বদল করে অন্য জায়গায় তা তৈরি করিয়েছেন।‌ জমি কমিটির সঙ্গে আরাবুলদের সমস্যা দীর্ঘ দিনের। রাস্তা তৈরি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ জেলাশাসক থেকে শুরু করে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে জানিয়েছে কমিটি।

জমি কমিটির নেতা মির্জা হাসান বলেন, ‘‘সরকারি অনুমোদিত রাস্তার পরিবর্তে বরাদ্দ টাকায় নেতার বাড়ি যাওয়ার রাস্তা তৈরি হল। ওরা এতটাই নির্লজ্জ যে রাস্তার বোর্ডটা পর্যন্ত পাল্টায়নি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Bhangar Corruption
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy