হাই কোর্টের নির্দেশে একই নামে দু’টি ‘অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ’ কর্তৃপক্ষ বুধবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের গিয়ে তাঁদের নথিপত্র দেখালেন। জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সেখানকার অতিরিক্ত কার্যনির্বাহী আধিকারিক দু’পক্ষের নথিপত্র খতিয়ে দেখেছেন। সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী বলেন, ‘‘যত দূর জানতে পেরেছি, দু’পক্ষই এ দিন নথিপত্র নিয়ে শুনানিতে হাজির ছিলেন। মমতা ঠাকুরের মতুয়া ধর্ম মহামেলার আয়োজনের জন্য পুলিশ, দমকল, পূর্ত দফতরের অনুমতি-সহ বেশ কিছু নথিপত্র দেখিয়েছেন। অন্য পক্ষ মহামেলার আয়োজনের আবেদনপত্র ছাড়া বিশেষ কিছু দেখাতে পারেননি। জেলা পরিষদের অতিরিক্ত কার্যনির্বাহী আধিকারিক এ বার সিদ্ধান্ত নেবেন।’’
এ বার উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগরে মতুয়া ধর্ম মহামেলার আয়োজনের অনুমতি চেয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। সেই অনুমতি দেওয়া হবে কিনা, সে ব্যাপারে প্রশাসনকে ১৯ মার্চের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে দিন কয়েক আগে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অমৃতা সিংহ।
শান্তনুর আইনজীবী জানিয়েছিলেন, জেলা পরিষদে আবেদন করা হলেও কোনও উত্তর দেওয়া হয়নি। ১১ মার্চ এই মামলার শুনানিতে মেলা আয়োজনের লাইসেন্স দেওয়ার ব্যাপারে সরকারের বক্তব্য জানতে চেয়েছিল হাই কোর্ট। সরকার জানায়, ১০ মার্চ এই মেলা আয়োজনের অনুমতিপত্র জমা নেওয়া হয়েছে। তবে শান্তনু নিজের আবেদনের স্বপক্ষে কোনও প্রমাণ দাখিল করেননি। যে হেতু, এ ব্যাপারে অন্য একটি আবেদন প্রমাণ-সহ জমা পড়েছিল, তাই তাদের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। তারপরেই এ দিনের মামলায় শান্তনুর আবেদন এবং বক্তব্য শুনতে নির্দেশ দেন বিচারপতি।
এ দিন মমতা ঠাকুর বলেন, ‘‘গায়ের জোরে ঠাকুর পরিবারের উত্তরাধিকার দাবি করে ওরা মতুয়া ধর্ম মহামেলার আয়োজন করতে চাই। এ দিন ওরা কোনও নথিপত্র দেখাতে পারেনি।’’ শান্তনুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমি সংসদে ছিলাম। জেলা পরিষদে কী হয়েছে, খোঁজ নিচ্ছি।’’
প্রসঙ্গত, মতুয়া ঠাকুরবাড়ির উত্তরাধিকার নিয়ে তৃণমূল সাংসদ মমতা ঠাকুরের সঙ্গে শান্তনুর দ্বন্দ্ব দীর্ঘ দিনের। অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি মমতাই দীর্ঘ দিন ধরে এই মেলার আয়োজন করে আসছেন। একই নামের অন্য সংগঠনটির সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু।
হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথি মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশীতে প্রতি বছর ঠাকুরনগরে মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে মতুয়া ধর্ম মহামেলার আয়োজন হয়। দেশ-বিদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ ভক্ত ঠাকুরবাড়িতে পুণ্যস্নান সারতে আসেন। প্রতি বছরই মেলার আয়োজন করা নিয়ে দু’টি সংগঠনের মধ্যে বিরোধ হয় বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে।
শান্তনু বলেন, ‘‘২০১৪ সাল পর্যন্ত আমরাই মেলার আয়োজন করে এসেছি। ২০১৫ সাল থেকে মমতা ঠাকুর রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জোর করে মেলার আয়োজন করছিলেন।’’ মমতা বলেন, ‘‘শান্তনু যা ইচ্ছে বলুন, এখন আমরা কোনও উত্তর দেব না।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)