বাসস্ট্যান্ডের জায়গায় এখন আবর্জনার স্তূপ। ডান দিকে, যানজটে নাজেহাল মানুষ। বসিরহাটে তোলা নিজস্ব চিত্র।
বসিরহাট পুরসভার মোট আয়তন ২২.৫ বর্গ কিলোমিটার। ২০১১ সালের আদমসুমারি অনুযায়ী মোট জনসংখ্যা ১ লক্ষ ২৫ হাজার ৮৯। পুরসভা তৈরি হয় ১৮৬৯ সালে। মোট ওয়ার্ড ২৩টি।
শহরের সৌন্দর্য়ায়ন চলছে পুরোদমে অথচ যানজট থেকে মুক্তি মিলছে না। প্রায় দুর্ঘটনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে শহরবাসীদের। এর থেকে রেহাই মিলবে কী ভাবে?
বিশ্বজিৎ রায়, বসিরহাট ফৌজদারি বার।
পুরপ্রধান: ১ কোটি ৩৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকায় মার্টিনবার্ন রোড সম্প্রসারণ এবং ১৭ লক্ষ টাকায় এসএন মজুমদার এবং শরৎ বিশ্বাস রোড সংস্কার করা হয়েছে। দালালপাড়া থেকে ত্রিমোহনী হয়ে টাউনহল পর্যন্ত এবং ইটিন্ডা রাস্তা ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে কংক্রিটের করা হয়েছে। থানার সামনে থেকে চৌমাথা এবং ট্যাঁটরা হয়ে ভেবিয়া পর্যন্ত রাস্তা উচুঁ ও চওড়া করতে খরচ হয়েছে ২৫ কোটি টাকা। তা সত্ত্বেও যানজট হয়। কারণ শহরের মধ্যে অতিরিক্ত মাত্রায় গাড়ি চলাচল বেড়ে গিয়েছে। অটো-টোটোর সংখ্যাও বেশি। বাস রুট আলাদা করে যানজট কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
শহর ঘিরে যত্রতত্র ছড়িয়ে আছে নোংরা আবর্জনার স্তূপ। নোংরা ফেলার ভ্যাটের দেখা নেই। ফলে রাস্তার পাশে ফেলা হচ্ছে আবর্জনা। বাজারে দুর্গন্ধে ঢোকা যায় না। এই কারণে মশা-মাছিও বাড়ছে। নানা রকম রোগ হচ্ছে। কী এর প্রতিকার কবে হবে?
হিরন্ময় দাস, স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদক
পুরপ্রধান: শহরের নোংরা পরিষ্কারের জন্য পুরসভার হাতে চারটি ট্রাক্টর টলি আছে। সরকারি ভাবে ৫২ লক্ষ টাকা মূল্যের ২টি আধুনিক বড় গাড়ি পাওয়া গিয়েছে। ওই সব গাড়ি শহর পরিষ্কার রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে রাস্তার অপরিসরের কারণে ওয়ার্ডের সব রাস্তায় এই গাড়ি ঢুকতে পারছে না। এ বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। আশা করা যায় খুব শীঘ্রই এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা যাবে।
এক সময়ে ময়লাখোলায় মাতৃসদনের চিকিৎসা পরিষেবার জন্য এলাকার বহু মানুষ উপকৃত হতেন। বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বা মহিলারা চিকিৎসার সুযোগ পেতেন। দীর্ঘ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মাতৃসদনের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। মাতৃসদনের কি এ ভাবেই শেষ হয়ে যাবে? তা ছাড়া ওয়ার্ডের মানুষের জন্যেও স্বাস্থ্যকেন্দ্র জরুরি।
সুপর্ণা সাহা, গৃহবধূ
পুরপ্রধান: আমার পুরপ্রধান হওয়ার আগে থেকেই মাতৃসদনটির বেহাল দশা হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলে মাতৃসদনটি আগের মতো করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আধুনিক করা হচ্ছে। ১ কোটি টাকা ব্যয়ে অপারেশন থিয়েটারের ব্যবস্থা করা হবে। এই কাজে ইতিমধ্যে ২৪ লক্ষ টাকা পাওয়া গিয়েছে। এ ছাড়াও পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের নলকোড়ায় হেলথ সেন্টারের কাজ শুরু হয়েছে। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের হরিশপুর এবং ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ভ্যাবলা এলাকাতে ২ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে হেলথ সেন্টারের কাজ শুরু হওয়ার মুখে।
কয়েক লক্ষ টাকা খরচে ঘটা করে অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে বদরতলা এবং ময়লাখোলায় দু’টি বাসস্ট্যান্ড করা হয়েছিল। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দু’টিই নষ্ট হতে চলেছে। বসিরহাটের জট কাটাতে কী আদৌও বাসস্ট্যান্ড হবে?
জয়ন্ত কুণ্ডু, ব্যবসায়ী
পুরপ্রধান: শহর তথা এলাকা যানজট মুক্ত করতে ময়লাখোলাতে সর্বসম্মত ভাবে কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর জন্য ৯ কোটি টাকা খরচ করবে পরিবহণ দফতর। কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডের কাজ শেষ হলে শহরের যত্রতত্র বাস, লরি রাখা যাবে না। বদরতলাতে আরও একটি বাসস্ট্যান্ড করা হচ্ছে। দু’টি বাসস্ট্যান্ড হলে পুর এলাকার জট অনেকটা কাটবে। পাশাপাশি দুর্ঘটনাও কমবে বলে আশা করা যায়।
বসিরহাটের প্রাণকেন্দ্র টাউনহল এলাকা। এক কথায় ইছামতীর ধারে টাউনহল সংস্কৃতির পীঠস্থান। বহু শিল্পী ওখানে অনুষ্ঠান করেছেন। এ ছাড়াও আছে রবীন্দ্রভবন। যেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সঙ্গে নাটক-যাত্রাও হয়েছে। এখন টাউনহলটি পরিকাঠামোর জন্য বন্ধ হয়ে রয়েছে। রবীন্দ্রভবনের অবস্থাও বেশ খারাপ। হলের মধ্যে বসার অধিকাংশ আসন ভেঙে গিয়েছে নয় তো চুরি হয়ে গিয়েছে। এ ভাবে কত দিন চলবে?
অরূপ মজুমদার, সঙ্গীত শিল্পী
পুরপ্রধান: টাউনহলের মধ্যে সবুজ সাথীর সাইকেল রয়েছে। হলের ছাদের একাংশ ভেঙে পড়েছে। এই দুই কারণে আপাতত হলটি বন্ধ রাখা হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে সাইকেল সরিয়ে ভাঙা অংশ মেরামতের পর হলটিতে ফের অনুষ্ঠানের যোগ্য করে তোলা হবে। তবে বর্ডার ডেভলপমেন্টের প্রথম পর্যায়ে পাওয়া দেড় কোটি টাকায় রবীন্দ্রভবন নতুন করে সাজানোর কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। আগামী এক মাসের মধ্যে কাজ শুরু হবে।
খেলাধুলায় এখানকার ছেলেমেয়েরা খুব ভাল নাম করেছে। বিশেষ করে ফুটবলে ছেলেরা বসিরহাটের নাম দেশের কাছে তুলে ধরেছে। অথচ এখানে ফুটবল খেলার মাঠের বেশ অভাব। মাঠ বাড়লে খেলাধুলার মানও বাড়বে। এ বিষয়ে কী ভাবছেন পুরপ্রধান?
সমীর বসু, ফুটবল প্রশিক্ষণ
পুরপ্রধান: বসিরহাটের ছেলেদের খেলাধুলার উন্নতির কথা ভেবে ইতিমধ্যে ৬টি ক্লাবের মাঠে মাটি ফেলে নতুন ভাবে গড়তে পুরসভা উদ্যোগী হয়েছে। ওই সব মাঠকে সুন্দর করতে ক্লাব উদ্যোক্তাদের আর্থিক সাহায্যও করা হয়েছে। একই সঙ্গে ওয়ার্ড-লাগোয়া গ্রাম্য এলাকার মাঠগুলিরও উন্নতি ঘটানোর কাজ শুরু হয়েছে। রাজ্য স্পোর্টস কাউন্সিলরের সচিব তথা বসিরহাট উত্তরের বিধায়ক দীপেন্দু বিশ্বাসের বিধায়ক কোটার ৩০ লক্ষ টাকায় একটি ইন্ডোর স্টেডিয়াম করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেখানে ভলি, কবাডি, ব্যাটমিন্টন-সহ একাধিক খেলা হবে।
বসিরহাট জুড়ে আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জলের তীব্র আকাল। বিশেষ করে পুরওয়ার্ডে অধিকাংশ জায়গায় পানীয় জল মেলা ভার। রাস্তার পাশে কলগুলি অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। বাড়ির লাইনে জল মিলছে না। সে কারণে এখানকার বাসিন্দাদের বড় অংশের মানুষকে জল কিনে খেতে হয়। এ বিষয়ে কী বলবেন পুরপ্রধান?
মলয় দাস, সমাজকর্মী
পুরপ্রধান: বসিরহাট পুরসভা এলাকার জলে আর্সেনিক। সে কারণে ওই জল খাওয়া যায় না। সে কথা মাথায় রেখে ‘আমরুত প্রকল্পে’ কোটি টাকা ব্যয় করে গঙ্গা থেকে জল আনা হবে। বসিরহাটে পরিস্রুত করা হবে। তারপর পুরবাসীদের বাড়ি বাড়ি দেওয়া হবে। ওই প্রকল্পের কাজ শুরুর জন্য ইতিমধ্যে কিছু টাকা মিলেছে। মাটির তলায় নতুন পাইপ পোঁতা এবং ৬টি ওভারহেট ট্যাঙ্ক করার জন্য টেন্ডার হয়ে গিয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই সেই কাজ শুরু হবে।
শহর সাজাতে এলইডি আলো লাগানো হচ্ছে। কিন্তু ইছামতীর পাড় সাজাতে কী কোনও ব্যবস্থা করছে পুরসভা? শহরের মধ্যে অতিরিক্ত জোরে গাড়ি চালানো বন্ধের জন্য কী কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শহরবাসীদের পরিষেবা নিয়ে কী ভাবা হচ্ছে?
অঙ্কুর সেন, চিত্রগ্রাহক
পুরপ্রধান: বিধায়ক উন্নয়ন তহবিলের অর্থে বসিরহাট শহর ঘিরে ১৩টি বাসস্ট্যান্ড করা হচ্ছে। প্রশাসনিক স্তরে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ না মেনে জোরে গাড়ি চালানোর পুরকর্তৃপক্ষের তরফে কঠোর ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নৈহাটিতে ইছামতীর ধারে নির্মল সরকার স্মৃতি শিশু উদ্যান করা হচ্ছে। সূর্যকান্ত পার্ক, রবীন্দ্র সৈকত সাজানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ওই কাজের টেন্ডারও হয়ে গিয়েছে। পিকনিক স্পটে কংক্রিটের লম্বা সেতু এবং খেলার সরঞ্জাম দিয়ে সাজানো হচ্ছে। শহর আলোকিত করতে পুর ও নগর উন্নয়ন দফতরের দেওয়া কয়েক লক্ষ টাকায় ৪৩ কিলোমিটার রাস্তার দু’ধারে এলইডি লাগানোর কাজ অনেক দিন আগেই শুরু হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy