সাফাই: বনগাঁয় নালা পরিষ্কার করার কাজ চলছে। নিজস্ব চিত্র।
ডেঙ্গি আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় গত কয়েক বছর ধরে বরাবরই শীর্ষে থাকে উত্তর ২৪ পরগনা। অতীতে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে গাফিলতির অভিযোগও উঠছে ভুরি ভুরি। এ বার আগে থেকেই এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনকে সতর্ক করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার প্রশাসনিক বৈঠকে জেলাশাসক সুমিত গুপ্তাকে ডেঙ্গি নিয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন তিনি। কয়েক বছর আগে ডেঙ্গি রুখতে দেগঙ্গায় ব্লিচিং পাউডারের বদলে আটার গুঁড়ো ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছিল। সে প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী জানান, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সতর্ক থেকে পদক্ষেপ করতে হবে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী সতর্ক করার আগে থেকেই ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ শুরু হয়েছে। মঙ্গলবারই সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে ডেঙ্গি সংক্রান্ত মনিটরিং বৈঠক করেছেন জেলাশাসক। সেখানে জেলার সব পুরসভা, ব্লক প্রশাসন, স্বাস্থ্য দফতর এবং সেচ দফতরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। গত বছর সময় থাকতে নানা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল জেলা প্রশাসন। তার জেরে ডেঙ্গির প্রকোপ তেমন দেখা যায়নি। এ বারও সেই লক্ষ্যে এগোনো হচ্ছে বলে জানান জেলাশাসক।
জেলাশাসক বলেন, “গত বছরের মতো এ বারও আমরা আগে থেকে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ শুরু করেছি। জেলায় কোথায় কোথায় ডেঙ্গি আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষজন, তা চিহ্নিত করা হচ্ছে। সেচ দফতরকে বলা হয়েছে, জেলায় খাল সাফ করতে হবে। যেখানে কচুরিপানা জমে আছে, তা তোলা হচ্ছে।”
জেলা প্রশাসনের দাবি, ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে ইতিমধ্যেই শহর এলাকায় বাড়ি বাড়ি সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় নালা, ডোবা সাফ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা জমা জল সরানো, মশার লাভা শনাক্তকরণ ও তা নষ্ট করার কাজ করছেন। নিকাশি নালা, খাল-বিল পরিষ্কারে জোর দেওয়া হয়েছে। ‘ভিলেজ রিসোর্স পার্সন’-দের নালা-নর্দমা পরিষ্কার করার কাজে লাগানো হচ্ছে। সচেতনতার প্রচারও চলছে। গত বছর থেকে ডেঙ্গি মশার লার্ভা মারতে জেলায় বায়ো লার্ভিসাইড নামে এক ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার হচ্ছে। এই রাসায়নিকে মশার লার্ভা মারা যায়। কিন্তু জলের ক্ষতি হয় না। এ বারও তা ব্যবহার করা হবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর। ডেঙ্গি পরীক্ষার উপরেও জোর দেওয়া হচ্ছে।
ডেঙ্গি রুখতে জেলায় গাপ্পি মাছের চাষ শুরু করেছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদ। হাবড়া ২, ব্যারাকপুর ১, আমডাঙা এবং হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকে এই চাষে যুক্ত করা হয়েছে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের। তাঁদের প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তিগত সাহায্য দেওয়া এবং মাছ সরবরাহ করছে মৎস্য দফতর।
তবে এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, মশা মারার কাজ সে ভাবে হচ্ছে না। জেলার ডেঙ্গি প্রভাবিত পুরসভাগুলির মধ্যে অন্যতম হাবড়া এবং অশোকনগর-কল্যাণগড়। দু’টি শহরের বাসিন্দারা জানান, ইতিমধ্যেই রাতে মশার উপদ্রব শুরু হয়েছে। তীব্র গরমের সঙ্গে মশার উপদ্রবে নাজেহাল হতে হচ্ছে। তবে তাঁরা আশা করছেন, ডেঙ্গি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সতর্কবার্তার পরে মশা মারার কাজে গতি আসবে।
হাবড়ার পুরপ্রধান নারায়ণ সাহা বলেন, “ইতিমধ্যে স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মশা মারার তেল স্প্রে করছেন। ঝোপ-জঙ্গল, নিকাশি নালা সাফাই করা হচ্ছে।” অশোকনগর-কল্যাণগড়ের পুরপ্রধান প্রবোধ সরকার বলেন, “মশা মারার তেল স্প্রে করার কাজ আমরা বন্ধ করিনি। পাড়ায় এবং বাড়িতে গিয়ে মশা মারা হচ্ছে। অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ করে হাইড্রেন সাফ করা হচ্ছে।”
বনগাঁর পুরপ্রধান গোপাল শেঠ বলেন, “নিকাশি নালা সাফাই করা হচ্ছে জোরকদমে। আদিবাসী মানুষদের নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁদের কর্মসংস্থান হয়েছে। মশা মারার তেল স্প্রে করা হচ্ছে। মানুষকে সচেতন করতে প্রচার কর্মসূচি চলছে।”
গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির তরফে গোবিন্দ দাস বলেন, “ডেঙ্গি রুখতে আমরা সতর্ক আছি। ইতিমধ্যেই ঝোপ-জঙ্গল সাফ করার কাজ শুরু হয়েছে। শীঘ্রই মশা মারার তেল স্প্রে করার কাজ শুরু করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy